নয়াদিল্লি – তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এই সংখ্যা ২৫ হাজারও ছুঁতে পারে। এই পরিস্থিতিতে তুরস্ককে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। অথচ, তুরস্কের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক মোটেও বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল না। কেননা, তুরস্কের তাইয়েপ এরদোয়ানের সরকার বরাবরই কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানকে ধারের টাকায় সামরিক অস্ত্র পাঠিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছে। এমনকী, রাষ্ট্রসঙ্ঘে কী করে ভারতকে কাশ্মীর নিয়ে ঘিরে ধরা যায় তার ষড়যন্ত্র পর্যন্ত করেছে। পালটা তুরস্ককে ধাক্কা দিতে ভারত গ্রীসের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক মজবুত করেছে। কেননা, ভারত পাকিস্তানের মতোই তুরস্ক এবং গ্রিসের সম্পর্ক একেবারে আদায়-কাচকলায়। ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একদিকে পাকিস্তান-তুরস্ক এবং চিন এবং অন্যদিকে ভারত কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে এতদিন মুখোমুখি লড়ে যাচ্ছিল।
কিন্তু ঠিক তার মাঝে ঘটে গেল বিপর্যয়। ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল তুরস্ক। হাজার হাজার মানুষ মারা গেল। শয়ে শয়ে বাড়ি ধসে পড়ল। এই পরিস্থিতিতে ভারত দেরি না করে আগ বাড়িয়ে তুরস্কের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল। সেই সাহায্যকে তুরস্ক হাত পেতে তো নিলই, একথাও বলল, ‘‘তুর্কি ও হিন্দি ভাষায় দোস্ত শব্দের বিশেষ মাহাত্ব রয়েছে। ভারত প্রকৃত দোস্তের মতই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।’’ তুরস্কের এমন প্রতিক্রিয়ার পরই নয়াদিল্লি থেকে একের পর এক সেনার বিমানে ত্রান সামগ্রী থেকে শুরু করে উদ্ধারকারী দল, বিশেষ সেনা হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, ওষুধপত্র পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করল। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকার তুরস্কে জোর কদমে শুরু করে দিল ‘‘অপারেশন দোস্ত’’।
এদিকে, পাকিস্তান প্রথম ২৪ ঘণ্টা ভেবে ঠিকই করতে পারল না কী করা উচিত। তারই মাঝে কান্ডজ্ঞাণহীন ভাবে ভারতের উদ্ধারকারী দলের বিশেষ বিমানকে নিজেদের বায়ুসীমা ব্যবহার করতে না দিয়ে পাকিস্তান এমন একটা ভুল করে বসল, যা নিয়ে সারাবিশ্বে এক্কেবারে ছিছিক্কার পড়ে গেল। পাকিস্তানের চোখ যখন খুলল, দেখল বেশ দেরি হয়ে গেছে। ভারত এরইমধ্যে যা করার করে দিয়েছে। ‘শত্রু’ হিসেবে তুরস্কের জন্য এই কঠিন সময়ে যা করছে ভবিষ্যতে তা পাকিস্তানের জন্য গলার কাঁটা হয়ে উঠবে। তাই সাতপাঁচ না ভেবেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ঠিক করলেন, দেরি যখন হয়েইছে – তিনি নিজে তুরস্কে যাবেন। এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তাইয়েপ এরদোয়ানকে সঙ্গে নিয়ে বিশেষ নমাজ আদা করে দেখিয়ে দেবেন বন্ধুত্ব কাকে বলে। কিন্তু তুরস্ক থেকে সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হল, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর এই সময়ে আঙ্কারা (তুরস্কের রাজধানী) আসার কোনও প্রয়োজন নেই। ‘বন্ধুর’ কাছ থেকে এমন চরম অপমান সইতে হবে – স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি পাকিস্তান। কিন্তু কী আর করা যাবে। হাজার হোক পাকিস্তান তুরস্কের পাশে না থাকলেও চলবে, কিন্তু পাকিস্তান তুরস্ক ছাড়া চলবে কী করে?
তাই অপমান সহ্য করেই পাকিস্তান শেষমেষ একটি ছোট্ট বিমানে জনা কয়েক সেনা জওয়ান আর কিছু শাল-কম্বল পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করল। তাছাড়া আর পাকিস্তানের পক্ষে দেওয়ার মতো ক্ষমতাই বা কী আছে। এই মুহূর্তে পাকিস্তান নিজে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। পৃথিবীর এমন কোনও দেশ নেই, যার কাছে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কিংবা সেনাপ্রধান পয়সা চায় নি। প্রথম দিকে তাও কিছু পয়সা বিভিন্ন দেশ দিচ্ছিল। কিন্তু ইদানিং সেই সব দেশও পাকিস্তানকে মুখের ওপর জানিয়ে দিয়েছে, পরের টাকায় কাশ্মীর কাশ্মীর আর জিহাদ জিহাদ করে লাভ নেই। যদি ক্ষমতা থাকে নিজের টাকার ব্যবস্থা নিজেই কর। আর এতেই মহা ফ্যাসাদে পড়েছে পাকিস্তান। বিদেশী মুদ্রাভান্ডার একেবারে তলানিতে পৌঁছে গেছে। যে পাকিস্তান চালাতে প্রত্যেক মাসে ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার লাগে, তার পকেটে এখন রয়েছে মোটে ৩ বিলিয়ন ডলার। পরিস্থিতি এমন ১০ দিন পর দেশের তেল, চাল, ডাল, আটা কোথা থেকে আসবে কেউ জানে না। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক অর্থ প্রদানকারী সংস্থা আইএমএফের পা একেবারে ছিনে জোঁকের মতো ধরে রয়েছে। টাকা দিতেই হবে। সুতরাং তুরস্ককে পাকিস্তান আর কী সাহায্য করবে! উলটে এই ভূমিকম্পের আগে পর্যন্ত তুরস্কের কাছেই গিয়ে টাকা ধার চেয়েছিল পাকিস্তান। কেননা, তুরস্কের কাছে এখনও প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলারের মতো বিদেশী মুদ্রাভান্ডার রয়েছে।
এই অবস্থায় ভারত তার কূটনৈতিক খেলা শুরু করে দিয়েছে। ভারত বেশ বুঝেছে – এই তুরস্ককে যদি পাকিস্তানের কাছ থেকে এতটুকু দূরে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় তাহলে পাকিস্তানের পাশে চিন ছাড়া আর কেউ থাকবে না। কিন্তু চিন এমন দেশ – যে নিজের ভালো ছাড়া কিছু বোঝে না। এরইমধ্যে পাকিস্তানকে সিপেকের নামে এত চড়াহারে সুদের টাকা দিয়েছে যে পাকিস্তানের অর্থনীতি প্রায় ধসে যেতে বসেছে। তাছাড়া, পাকিস্তানের হাজার অনুরোধের পরেও এখন আর টাকা দিচ্ছে না। সুতরাং পাকিস্তানকে তার নিজের কর্মফলের উচিত শিক্ষা দিতে এটাই যে সুবর্ণসুযোগ সেটা বেশ বুঝে গিয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার।