HomeরাজনীতিShubhendu vs Abhishek : মমতা-অভিষেকের প্যাচে কি শুভেন্দু অধিকারী ফেঁসে গেলেন?

Shubhendu vs Abhishek : মমতা-অভিষেকের প্যাচে কি শুভেন্দু অধিকারী ফেঁসে গেলেন?

- Advertisement -

অরণ্য রায়

দিন কয়েক আগেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে যেটা সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, এই দুর্নীতির বাজারে পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল লড়বে কী করে? এই সময়ে পঞ্চায়েত ভোট করালে তৃণমূলকে খেসারত দিতে হবে না তো? তৃণমূলের পতনের সময় শুরু হয়ে যাবে না তো? কিন্তু এখন যেন মনে হচ্ছে, বরং বিজেপিই পালটা চাপে পড়ে গিয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেই ভাবতে হচ্ছে, এবারের পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি তার মনের মতো রেজাল্ট করতে পারবে তো? তৃণমূলের বিরুদ্ধে এত যে দুর্নীতির অভিযোগ, সে সব কাজে লাগবে তো? না কি ঘুরে-ফিরে সেই ২০২১‘এর বিধানসভা ভোটের দশা হবে? বিজেপি তার লক্ষ্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হবে?

 

একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার থেকেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর একের পর এক রণকৌশল নিয়েছেন। প্রথম রণকৌশল হল – পুরো ব্যাপারগুলোকেই সময়ের ওপর ছেড়ে দেওয়া। তবে মাঝে মাঝে হালকা টান দিয়ে দেখে নেওয়া দুর্নীতিগুলো পাবলিকের কাছে জল-ভাত হয়ে গিয়েছে কি না। দুই, তৃণমূলের নীচু স্তরের নেতাদের মাঠে নামিয়ে দিয়ে দুর্নীতির পিছনে বিজেপির ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব খাড়া করা। তিন, দুয়ারে দিদিরদূত কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ক্ষোভকে কিছুটা উগরে দিয়ে হালকা করে দেওয়া। চার, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে তৃণমূলের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের পিছনে ঠেলে দেওয়া। এবং পাঁচ, বিজেপিকে পালটা আঘাতের জন্য তলে তলে দল ভাঙানোর প্রক্রিয়া জারি রাখা।

এই পাঁচটি নম্বর কাজটিই সম্প্রতি সম্পূর্ণ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সদ্য বিজেপি থেকে আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলালকে তৃণমূলে নিয়ে আসা। টোপ আরও কয়েকজন বিজেপি বিধায়ক খেয়েছিলেন, কিন্তু সময়ে শুভেন্দু অধিকারী সেসব বিধায়কের মুখ থেকে কোনও মতে বড়শি ছাড়িয়েছেন। কিন্তু সুমন কাঞ্জিলালের ক্ষেত্রে সময় পাননি। আর তৃণমূলও টার্গেট রেখেছিল, বিজেপির দক্ষিণবঙ্গের বিধায়কদের পরে জল থেকে তোলা যাবে, সবার আগে উত্তরবঙ্গের বিধায়ককে তুলে ফেলতে হবে। সেটা মিস করলে হবে না। দিন কয়েক সেই টার্গেট সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তারপরই শুভেন্দু অধিকারীকে ঘোষণা করতে হয়েছে, তিনি শিগগিরই উত্তরবঙ্গে গিয়ে জনসভা করবেন।

এখানে খেয়াল করার বিষয় হল, এতদিন কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীর টার্গেট ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড় ডায়মন্ড হারবার। পঞ্চায়েত ভোটে আর কোথাও না হোক, ডায়মন্ড হারবারে যদি তৃণমূলকে ধাক্কা দেওয়া যায় তাহলেই কেল্লাফতে। কিন্তু শুভেন্দুর এমন চালের পালটা তৃণমূল বা অভিষেক দিল উত্তরবঙ্গের বিধায়ক ভাঙিয়ে। কেননা, তৃণমূলের যেমন দক্ষিণবঙ্গ শক্তঘাঁটি বলে পরিচিত, তেমনই উত্তরবঙ্গ এখন পর্যন্ত বিজেপির ঘাঁটি বলে পরিচিত। সুতরাং শুভেন্দু যখন তৃণমূলের শক্তঘাঁটিতে আক্রমণের কৌশল খুঁজছেন, অভিষেক তখন পালটা বিজেপির শক্তঘাঁটিতে হামলা চালাচ্ছেন। ফলে শুভেন্দুর এখন সবার আগে গড় সামাল দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। সুতরাং তাঁকে তড়িঘড়ি উত্তরবঙ্গে ছুটতে হচ্ছে। পালটা অভিষেকও তারপর উত্তরবঙ্গে সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ব্যাপারটা অনেকটা ফুটবল খেলার মতো। বিজেপির গোলপোস্ট যদি উত্তরবঙ্গ হয় তাহলে তৃণমূলের গোলপোস্ট হল দক্ষিণবঙ্গ। তাই বিজেপি চাইছে খেলাটা হোক দক্ষিণবঙ্গের মাটিতে। কিন্তু তৃণমূল বল রাখতে চাইছে উত্তরবঙ্গে। কেননা, বিজেপির গোলপোস্টটা তো ওখানেই।

এদিকে, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমেই রাজ্যপালকে ভোঁতা করে দিলেন। ‘ছোটখোকা’ সাজিয়ে অ আ ক খ পড়িয়ে দিলেন। রেফারিকে নিজের দিকে টেনে নিলে ম্যাচে কী কী সুবিধা পাওয়া যেতে পারে আপনারা জানেন। ফুটবল খেলার কথাই যখন হচ্ছে, হাই কোর্টকে ফিফা হিসেবে ধরা যেতে পারে। ফিফা নানা বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, শাসকদলের জনা কয়েক খেলোয়ার সাসপেন্ডও হয়েছে। কিন্তু ক্যাপ্টেন, ভাইস ক্যাপ্টেন ও অন্য খেলোয়াররা কিন্তু দিব্যি ম্যাচ বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। গোল খাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পরেও যেভাবে বল একেবারে বিজেপির গোলপোস্টের কাছে তুলে দিয়েছে, তাতে গ্যালারির আম পাবলিক উত্তেজনায় এক্কেবারে থরথর করে কাঁপছে। কোন ম্যাচে কোন খেলোয়াড় কতটাকা খেয়েছে, তা নিয়ে কী তদন্ত হচ্ছে – সে সব এখন তাদের মাথায় থাকার কথা না। আর সেটাই তো চাইছিলেন বা চাইছেন তৃণমূল নেত্রী তথা শাসকদলের ক্যাপ্টেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুতরাং এই মুহূর্তে এটা বলাই যায়, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এখন আপাতত একটু চাপে। তাছাড়া, বিরোধী দলের আরেক স্ট্রাইকার দিলীপ ঘোষ শুভেন্দুর পায়ে বল দিয়ে গোল করাতে রাজি নয়। তিনি চান, গোলটা তিনি করবেন। যতই দল তাঁকে মিডফিল্ডে নামিয়ে আনুক না কেন। অন্যদিকে, ডিফেন্ডার তথা বিজেপির ক্যাপ্টেন সুকান্ত মজুমদারের পক্ষে ডিফেন্স থেকে অ্যাটাক পুরো মাঠ জুড়ে খেলার অভিজ্ঞতা কম। তাই হাফ ধরে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি স্ট্রাইকার শুভেন্দু অধিকারীর জন্য তৃণমূলের গোলপোস্টের জালে বল জড়ানো একটু কঠিন হয়ে যাচ্ছে বৈকি!

 

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -