Homeপশ্চিমবঙ্গKalighat Mamata: কালীঘাটের বৈঠকে দলের নেতাদের কী মন্ত্র দিলেন তৃণমূল নেত্রী...

Kalighat Mamata: কালীঘাটের বৈঠকে দলের নেতাদের কী মন্ত্র দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?

- Advertisement -

কলকাতা: রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যেমনটা আশা করেছিলেন, ঠিক তেমনটাই ঘটল কালীঘাটের বৈঠকে (Kalighat Mamata)। সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তৃণমূলের ভরাডুবিই মূল আলোচ্য বিষয় হয়ে রইল এদিন তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে। সাগারদিঘি হারানোর কারণ খুঁজতে আগেই কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তারপরই এদিন দেখা গেল, তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতিকে সরাসরি ছাঁটাই করে দিলেন তিনি ।

হাজি নুরুলের জায়গায় মোশারফ

এত দিন তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন হাড়োয়ার বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলাম। তাঁর জায়গায় এবার মমতা নিয়ে এলেন তৃণমূলের যুব নেতা তথা ইটাহারের বিধায়ক মোশারফ হোসেনকে। মোশারফ উত্তর দিনাজপুর জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতিও।

তবে দলের মধ্যে এনিয়ে যাতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে কোনও ধরনের অশান্তি না হয়, সেজন্য হাজি নুরুলকে সভাপতি পদ থেকে সরানো হলেও তাঁকে সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান করা হয়েছে। সেই পদে এত দিন ছিলেন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। কিন্তু এদিন সিদ্দিকুল্লাকেও অন্যতম গুরুদায়িত্ব দিলেন মমতা। মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলার সংগঠন দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গ্রন্থাগার মন্ত্রীকে।

কেন এই ফেরবদল?

পরিস্কার কথায়, সংখ্যালঘু সেলকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে নতুন করে ঢেলে সাজালেন। ইঙ্গিত স্পষ্ট। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। এই পঞ্চায়েত ভোটে কোনও ভাবেই তৃণমূলের খারাপফল করলে চলবে না।

কেননা, এর আগে বামজমানার পতনের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল এই পঞ্চায়েত ভোট থেকেই। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের উত্থান ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা দখলের সংকেত দিয়েছিল। সেই রকমই যদি ২০২৩ সালের পঞ্চায়েতে ভোটে কিছু একটা ঘটে, তাহলে কিন্তু ২০২৬ সালে বাংলার রাজনীতিতে অঘটন ঘটার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে দাঁড়াবে। আর এই চরম সত্যিটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভালোমতই জানেন। সুতরাং সবার আগে তিনি চাইছেন সংখ্যালঘু ভোটারদের ভাঙন আটকাতে।

সংখ্যালঘুদের নিয়ে মমতার ফর্মুলা

সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ঠিক আগে আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সেটা যে সংখ্যালঘু ভোটাররা মোটেও ভালোচোখে নেননি, সেটা এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংখ্যালঘু সেলের ফেরবদলেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সংখ্যালঘু ভোট যদি আগামীদিনে তৃণমূলের সঙ্গে না থাকে, তাহলে বিজেপির লড়াই অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপির স্বপ্নভঙ্গের মূল কারণই ছিল এই সংখ্যালঘু ভোট। পশ্চিমবঙ্গে গড়ে প্রায় ৩২-৩৫ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। যার ৫-৭ শতাংশ সিপিএমের দখলে। আর ২-৩ শতাংশ কংগ্রেসের দখলে। বাকি পুরোটাই কিন্তু তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক। অন্যদিকে, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ভোটে লড়তে নামে এই ৩৫ শতাংশ ভোটারকে বাদ দিয়েই। অর্থাৎ তৃণমূলকে ক্ষমতা ধরে রাখতে হলে ১০০‘র মধ্যে ৪০ বা ৪১ পেলেই চলবে।

কিন্তু বিজেপিকে ৬৫‘র মধ্যে ৪২ কিংবা ৪৩ পেতে হবে। তবেই বাংলার মসনদ দখলে আসবে। হিন্দু ভোটাররা পুরোপুরিভাবে একদিকে না হয়ে গেলে এটা কখনও সম্ভব নয়। সুতরাং সনাতন ধর্ম রক্ষার কথা বলে সেই চেষ্টাই চালাচ্ছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

চিন্তা বাড়িয়েছে আব্বাস-নওশাদ

এদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন, বিজেপি কিংবা শুভেন্দু অধিকারীর এই চেষ্টা তখনই বিফল হবে যদি সংখ্যালঘু ভোট পুরোপুরিভাবে তৃণমূলের পাশে থাকে। কেননা, ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট সুনিশ্চিত হলে বাকি ১০-১২ শতাংশ হিন্দু ভোট তৃণমূল পাবেই পাবে। সুতরাং জয় ঠেকায় কে?

কিন্তু সম্প্রতি পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর আইএসএফ সেই ফর্মুলায় বিপদ সংকেত দিচ্ছে। আইএসএফের একামাত্র বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী একাই যা কান্ড করছেন – তাতে সংখ্যালঘু ভোটারদের একটি বড় অংশ তৃণমূল হারাতে পারে।

আর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটার যদি আইএসএফের দিকে ঝুকে পড়ে, তাহলে কিন্তু আগামীদিনে বাংলায় ক্ষমতা ধরে রাখা তৃণমূলের জন্য অতি কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এটা আর কেউ বুঝুক বা না বুঝুক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু ঠিকই বুঝছেন। তিনি জানেন, দুর্নীতির ইস্যুর হাওয়া ইন্ধন না পেলেই থেমে যাবে। তখন কিন্তু সামনে পড়ে থাকবে শুধুই অঙ্ক। আর সেই অঙ্কটাই এদিন কালীঘাটে বসে কষে নিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এতে কি সংখ্যালঘু ভাঙন থামবে?

কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হাজি নুরুল ইসলামের জায়গায় মোশারফ হোসেনকে দায়িত্ব দিলেই কি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে? সত্যিই যদি সংখ্যালঘু ভোটারদের একাংশ আইএসএফের দিকে ঝুকে থাকে, তাহলে তাঁদের কি আদৌ ফেরানো যাবে? এত যে দুর্নীতির ইস্যু, যার মধ্যে কিনা মাদ্রাসায় নিয়োগের ব্যাপারটিও রয়েছে – এসবের কোনও প্রভাব কি সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে পড়বে না?

তৃণমূল সূত্রে খবর, মোশারফ হোসেন হাজি নুরুল ইসলামের থেকে বয়সে ছোট। তিনি যুবনেতা। খেয়াল করার বিষয় হল আইএসএফের বেশিরভাগ সমর্থকই কিন্তু সংখ্যালঘু যুবারা। অর্থাৎ সংখ্যালঘু ভোটে ভাঙন ঠেকাতে হলে আগে যুবাদেরই টার্গেট করতে হবে।

আর মোশারফ হোসেন যেহেতু যুবনেতা – ফলে হাজি নুরুল ইসলামের থেকে তিনি অনেক বেশি কার্যকরী হবেন। তাছাড়া, হাজি নুরুল কিংবা সিদিকুল্লা চৌধুরীকে তো সরিয়ে দেওয়া হয়নি। বরং তাঁদের আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেল আগের থেকে বেশি মজবুত করা হয়েছে।

ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশা, এতে কাজ হবে। আর যদি এতেও কাজ না হয়, হাতে তো এখনও সময় আছে। এরপর না হয় আরও নতুন ফর্মুলা তৈরি করা যাবে।

 

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -