মুম্বই – মঙ্গলবার সেনসেক্স নেমেছিল ৮২১ পয়েন্ট, বাজার থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছিল লগ্নিকারীদের ৫.৩ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ। বুধবারেও সেই রক্তপাত আরও গভীর হলো বাজারে। সেনসেক্স ৯৮৪ পয়েন্ট নেমে যাওয়ায় এ দিন ভারতের বাজারে বিনিয়োগকারীরা ‘গরিব’ হলেন আরও ৬.৮ লক্ষ কোটি টাকার।
এ সব অঙ্ক-পরিসংখ্যান নিতান্তই কেজো তথ্য। আমজনতার কাছে প্রশ্ন হচ্ছে, এ হেন পতনের পর বাজারে তাঁদের স্ট্র্যাটেজি কী হবে? গরিষ্ঠ অংশের নামীদামি শেয়ার অত্যন্ত আকর্ষণীয় দামে রয়েছে বলে ‘বাই অ্যাট ডিপ’ করে পোর্টফোলিও’র অ্যাভারেজটা আরও একটু বাড়িয়ে নেবেন নাকি বাজার টানা নামছে দেখে আপাতত কিছুদিন সেখানে লগ্নি থেকে সরে থাকবেন? প্রথমটা যতই আকর্ষক লেগে হাতছানি দিক না কেন, আপাতত দ্বিতীয় মতেই ভোট পড়ছে বেশি সংখ্যক বাজার বিশেষজ্ঞের।
তাঁদের গরিষ্ঠ অংশের দাবি, অত্যন্ত সংবেদনশীল স্তরে নেমে এসেছে নিফটি। গত ২০ মাসের মধ্যে এই প্রথম বুধবার কিছু সময়ের জন্য নিফটি ৫০ ইনডেক্স ২০০-ডিএমএ’র নীচে নেমে গিয়েছিল। যা বাজারের পক্ষে যথেষ্ট চিন্তাজনক তথ্য। চিনে যেখানে বিদেশি লগ্নি ট্রিলিয়ন ডলারের কাছে পৌঁছে যেতে চলেছে, মার্কিন ডলার ইনডেক্স যেখানে চার বছরের সর্বোচ্চ স্তরে উঠে গিয়েছে, সেখানে তার ফল যে ভারতকে ভুগতে হবে, এর মধ্যে নতুন কিছু নেই।
কিন্তু তাঁরা বলছেন, অক্টোবরে দেশে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির পরিসংখ্যান ১৪ মাসের মধ্যে প্রথম রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সহনসীমা ৬ শতাংশের গণ্ডি ছাপিয়ে যাওয়াটা ‘হিসেবের’ মধ্যে ছিল না। যে অঙ্কের জেরে ডিসেম্বরে তো বটেই, তার পরের কয়েক মাসেও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটির পক্ষে সুদের হার কমানো শক্ত হয়ে গিয়েছে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা। যার ঋণাত্মক প্রভাব পড়েছে বাজারে।
এই পরিস্থিতিতে যে ট্রিগার থেকে বাজার উঠতে পারত, সেই বিদেশি লগ্নিকারীদের ‘ভিটামিন-এম’ অক্টোবরে বাজার থেকে শুষে নিয়েছে ১.২ লক্ষ কোটি টাকা। নভেম্বরেও এ যাবৎ সেই ধারা বজায় রেখে ভারত থেকে সরে গিয়েছে ২৬,০০০ কোটি টাকার লগ্নি। যার ফলস্বরূপ বাজারের মোট ১৯টি সেক্টোরাল ইনডেক্সের মধ্যে ১৫টিই এক বছরের সর্বোচ্চ স্তর থেকে ১০ শতাংশের বেশি নেমে ‘কারেকশন’ জ়োনে চলে গিয়েছে। আগামী কয়েক মাসে নিফটি৫০ আরও ১০% নামতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই। যার থেকে এখন বাজারে নতুন করে ঢোকা বা বেরিয়ে যাওয়া, কোনওটাই বুদ্ধিমানের কাজ নয়, দাবি বিশেষজ্ঞদের।
তাঁরা জানাচ্ছেন, আপাতত মার্কিন মুলুকে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প কী করেন, সে দিকে একটু নজর রাখতে হবে। যে যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন, তার কতগুলো তিনি কার্যকর করেন বা করতে পারেন, তার উপর ভারত তথা বিশ্ববাজারের ভাগ্য অনেকাংশে নির্ভর করছে। এরপরেও যদি লগ্নি করতে চান, তাহলে মিউচুয়াল ফান্ড বেছে সেখানে লাম্পসামের বদলে SIP করে লগ্নি করা শুরু করুন। বাজারে পরিস্থিতি যখন শুধরাবে, তখন এখনকার লগ্নি আপনাকে দুর্দান্ত রিটার্ন দেবে।