মঙ্গলবার, ডিসেম্বর 3, 2024
মঙ্গলবার, ডিসেম্বর 3, 2024
Homeপাঁচফোড়ন১৪ফুট দৈর্ঘ্য, ১২০০ কেজি ওজনের রুশ ‘গুপ্তচর’ তিমি হলদিমির মৃত্যু রহস্য ফাঁস

১৪ফুট দৈর্ঘ্য, ১২০০ কেজি ওজনের রুশ ‘গুপ্তচর’ তিমি হলদিমির মৃত্যু রহস্য ফাঁস

- Advertisement -

কিছুদিন আগে একটি তিমি মাছকে নিয়ে সারাবিশ্বে হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল। পশ্চিমী দুনিয়ার মিডিয়ায় দাবি করা হচ্ছিল তিমিটি আসলে রাশিয়ার ‘গুপ্তচর’। কিন্তু বিবিসির তরফে প্রকাশ করা এক তথ্যচিত্রে দাবি করা হল – তিমিটি আসলে মোটেও কারও গুপ্তচর নয়। সেটি আসলে পাহাদারের কাজ করত।

অনেকে তাকে ডাকত হলদিমির নামে। দৈর্ঘ্য ১৪ ফুট। ওজন ১২০০ কেজি। ২০১৯ সালে প্রথমবার তার কথা জেনেছিল বিশ্ব। গত ৩১ আগস্ট হলদিমির নামে সেই ‘গুপ্তচর’ তিমির দেহ উদ্ধার হয় নরওয়েতে। তার পর থেকেই শুরু হয় জল্পনা। বিবিসির ‘সিক্রেটস অফ দ্য স্পাই হোয়েল’ নামের সেই তথ্যচিত্রে দাবি করা হয়েছে, হলদিমির নামের তিমিটি ‘গুপ্তচর’ নয়। সেটি আসলে পাহারাদারের কাজ করত।

ব্লেয়ার আর্ভিন নামে এক সমুদ্র বিশেষজ্ঞর বিবৃতিও নেওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, কীভাবে ডলফিনের মতো জলচরদের প্রশিক্ষণ দেয় সেনা। সোভিয়েত ইউনিয়ন (আজকের রাশিয়া) ডলফিনদের ব্যবহার করা হয় কৃষ্ণসাগরে পাহারার কাজে। মনে করা হচ্ছে, এই তিমিটিকেও সেই কাজেই ব্যবহার করা হত। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান উপকূলের পাশাপাশি সুইডেনের উপকূলেও জলে ভাসতে দেখা গিয়েছে হলদিমিরকে। গত বছর তাকে বাণিজ্যিক ও বিপজ্জনক জলেও সাঁতার কাটতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু বিজ্ঞানীদের দাবি, আকস্মিক মৃত্যুর আগে তার শরীরে কোনও সমস্যা ছিল না।

কীভাবে মারা গেল তিমিটি? বলা হচ্ছিল, বিতর্কে রাশ টানতেই রুশ সেনা গুলি করে মেরেছে হলদিমিরকে। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে পরিষ্কার, এমন কিছু হয়নি। দেখা যাচ্ছে, মুখে একটি লাঠি আটকেই মৃত্যু হয়েছে প্রাণীটির।

ওই বেলুগা তিমিটিকে কেন ‘গুপ্তচর’ ভাবা হয়? বছর পাঁচেক আগে যখন সে প্রকাশ্যে এসেছিল তখনই দেখা যায় তার গলায় বাঁধা রয়েছে একটি বেল্টের মতো যন্ত্র। তাতে সেন্ট পিটার্সবার্গের নাম ছিল বলেই দাবি। তখন থেকেই মনে করা হচ্ছিল রুশ ‘গুপ্তচর’ হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে এই তিমিকে। যদিও রাশিয়া এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। কেন তার এমন নাম? আসলে নরওয়ের ‘হল’ ও রাশিয়ার ‘ভ্লাদিমির’- এই দুই শব্দ মিলেই তার এমন নাম। পুতিনের সঙ্গে মিলিয়েই ওই ‘ভ্লাদিমির’ শব্দটি তার নামের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়।

বছর পাঁচেক আগে নরওয়ের উপকূলে মৎস্যজীবীদের নজরে আসে। তার পরেই ‘রুশ গুপ্তচর’ হিসেবে শিরোনামে এসেছিল সে। ভালদিমির নামে দুধসাদা সেই বেলুগা তিমি হঠাৎই উধাও হয়ে যায় নরওয়ে উপকূল থেকে। শেষ পর্যন্ত দেহ মেলে তার। এ বার সেই ‘রুশ’ তিমিটির অন্তর্ধান রহস্য সামনে এল। এক তথ্যচিত্রে এ নিয়ে মুখ খুলেছেন এক সমুদ্র বিশেষজ্ঞ।

১৯৯০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ায় সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী নিয়ে গবেষণা করেছেন ওলগা শপাক। তাঁর দাবি, তিমিটি সত্যিই সেনার অধীনে ছিল। আর্কটিক সার্কলের এক নৌসেনা ঘাঁটি থেকে সেটি পালিয়ে যায়। তবে শপাক মনে করেন না, তিমিটি গুপ্তচর। নৌসেনা ঘাঁটি পাহারার কাজেই সেটিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল বলে তাঁর অনুমান।

রাশিয়া যদিও কখনওই এই নিয়ে মন্তব্য করেনি। বেলুগা তিমিটি তাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত— তা স্বীকারও যেমন করেনি, তেমনই অস্বীকারও করেনি। তবে এ ধরনের প্রাণিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে রাশিয়ার। রুশ কর্নেল ভিক্টর ব্যারানেটস জানান, রাশিয়া যদি তিমিটিকে গুপ্তচরের কাজেই যুক্ত করে, তা হলে কি সেটির শরীরে মোবাইল ফোনের নম্বর লিখে রাখা হত! একটি সংস্থার জন্য তথ্যচিত্র তৈরির কাজে বন্ধু ও প্রাক্তন সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন শপাক। সেখানেই এ নিয়ে মন্তব্য করেন ওই বিশেষজ্ঞ।

বছর পাঁচেক আগে ভালদিমির-কে প্রথম যিনি দেখেছিলেন নরওয়ের সেই মৎস্যজীবী জোর হেস্টেন জানিয়েছেন, তিমিটি নৌকার গায়ে গা ঘষছিল। নজরে পড়তেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। এমন দুধসাদা বেলুগা তিমি সচরাচর দেখা মেলে না। গলায় পরানো ছিল রেডিও কলার। সেটির গায়ে লেখা ছিল সেন্ট পিটার্সবার্গ। ছিল ক্যামেরাও। ওই রেডিও কলারটি খুলে দেন হেস্টেন। তার পরেই তিমিটি সাঁতরে হ্যামারফেস্ট বন্দরের দিকে পাড়ি দেয়। সেখানেই কয়েক মাস ছিল সে। তিমিটির নজরদারিও করা হয়। অনেকেরই ধারণা, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নাম থেকেই ভালদিমিরের নামকরণ।

শপাক জানান, তিমিটিকে নিয়ে হইচই হতেই সূত্র মারফত জানতে পারেন, ভালদিমিরকে নিজেদের বলে চিহ্নিত করেছে রাশিয়া। প্রথম ২০১৩ সালে রাশিয়ার পূর্বে ওখটস্ক সাগরে ভালদিমিরকে দেখা গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন শপাক। বছর খানেক পরে সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে রুশ আর্কটিকে সেনার অধীনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই ভালদিমিরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শপাক জানান, প্রশিক্ষকেরা শুরুতেই বুঝতে পেরেছিলেন, এই তিমিটি এক দিকে দক্ষ অন্য দিকে সাঁতরে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। একই সঙ্গে এই বেলুগা তিমিটি দামাল বলেও মনে হয়েছিল, জানান ওই বিশেষজ্ঞ। তাঁর কথায়, “সে কারণেই তিমিটি যখন নরওয়েতে পাড়ি দিয়েছিল, সেই খবর শুনে আমরা বিস্মিত হইনি।”

রুশ সেনা ঘাঁটি মুরমানস্কের কাছে উপগ্রহ চিত্র থেকে চিহ্নিত করা গিয়েছে ভালদিমিরের আদি ঘাঁটি কোথায়। গত বছরের মে মাসে সুইডেনের এক উপকূলের কাছে শেষ বার জীবন্ত অবস্থায় দেখা গিয়েছিল ভালদিমিরকে। চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর নরওয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের কাছে রিসাভিকা শহর সংলগ্ন সমুদ্রে ওই বেলুগা তিমির দেহ ভেসে ওঠে। অনেক পশুপ্রেমী সেই সময়ে অভিযোগ করেন, বিতর্কে ইতি টানতে গুলি করে খুন করা হয়েছে তিমিটিকে। যদিও সেই তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছে নরওয়ে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি যাতে মনে হতে পারে এর পিছনে কোনও মানুষের হাত রয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, মুখে একটি লাঠি আটকেই মৃত্যু হয়েছে ভালদিমিরের।

আরও খবর
- Advertisment -

সবাই যা পড়ছেন

পছন্দের খবর