ভোপাল – দিন কয়েক ‘হিন্দু ধর্ম’ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনের ছেলে উদয়নিধি। এমকে স্যালিন আবার মোদী বিরোদী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরীক। তাই উদয়নিধির সেই বিতর্কিত মন্তব্যকে হাতিয়ার করেই এবার বিরোধীদের তুলোধনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)।
প্রধানমন্ত্রী মোদী (Narendra Modi) বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রদেশে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার পেট্রোকেমিক্যাল প্রকল্পের উদ্বোধনে যোগ দিতে এসে বিরোধী জোটকে ‘ঘমন্ডিয়া’ (অহঙ্কারী) বলে খোঁচা দেন। বলেন, ‘‘ঘমন্ডিয়া জোট সম্প্রতি মুম্বইয়ে বৈঠক করেছে। তাদের না আছে কোনও নীতি, না কোনও কর্মসূচি, না কোনও নেতা। তাদের সনাতন ধর্মকে আঘাত করার গোপন ছক রয়েছে। সনাতন ধর্মকে তারা ধ্বংস করতে চায়।’’
সামনেই মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা ভোট। এদিন কার্যত সেই বিধানসভা ভোটের প্রচারের সূচনা করেন মোদী। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বিরুদ্ধে সনাতন ধর্মকে ধ্বংস করার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘‘ওরা দেশকে হাজার বছরের দাসত্বের দিকে ঠেলে দিতে চাইছে।’’
সনাতন ধর্মকে অপমান করার অভিযোগে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিনের পুত্র উদয়নিধির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ বিজেপি নেতা-নেত্রীরা। ঠিক একই সুরে উদয়নিধির সমালোচনা করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
যোগীর মতে, ‘হিন্দু’ কোনও ধর্মীয় শব্দ নয়। এটি ভারতীয়দের একটি সংস্কৃতির পরিচয় বলে মনে করছেন তিনি। কিছু লোক যেভাবে হিন্দু পরিচয়কে একটি সংকীর্ণ পরিধির মধ্যে আনার চেষ্টা করছে, তার সমালোচনা করেন। যোগীর পর মোদীও যেভাবে, পুরো বিষয়টিকে সুকৌশলে ‘ইন্ডিয়া’র সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন তা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
২০২৪’এর লোকসভা ভোটে শাসকদল বিজেপির কাছে উন্নয়নের পাশাপাশি হিন্দুত্বও বিরোধীদের বিরুদ্ধে বড় হাতিয়ার হতে চলেছে তা এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ‘ইন্ডিয়া’ নাম নিয়ে মোদী বিরোধীরা বিজেপির জাতীয়তাবাদী হাওয়া কেড়ে নেওয়ার জন্য চাল দিয়েছে। কিন্তু পালটা বিজেপিও যে চুপ করে বসে নেই তা ধীরে ধীরে বেশ বোঝা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ‘ইন্ডিয়া’ নাম মাহাত্ম্যের জেরে বিরোধী শিবির জাতীয়তাবাদে ভাগ বসাতে পারে বুঝেই মোদী এর আগে বিরোধী জোটকে জঙ্গি সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’-এর সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। এবং উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ‘পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া’-র নামেও ‘ইন্ডিয়া’ রয়েছে। ভারত দখলকারী ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নামেও ‘ইন্ডিয়া’ রয়েছে। ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সঙ্গে নিষিদ্ধ সংগঠন ‘সিমি’-র (স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া) তুলনা টেনেছিলেন তিনি।
এবার সেই কটাক্ষের পাশাপাশি খোদ মোদী যেভাবে ‘সনাতন ধর্মে’র অপমান নিয়ে সরব হলেন, তাতে স্পষ্ট বিরোধীদের শুধু জাতীয়তাবাদ নয়, হিন্দুত্ব থেকে শুরু করে উন্নয়ন – সবেতেই এবারের নির্বাচনী প্রচারে খোঁচা খেতে হবে।