HomeবৈঠকKalighat Meeting: ভরাডুবি থেকে বাঁচতে তৃণমূলের শেষমেষ ‘শুভেন্দু ফর্মুলা’তেই প্রত্যাবর্তন!

Kalighat Meeting: ভরাডুবি থেকে বাঁচতে তৃণমূলের শেষমেষ ‘শুভেন্দু ফর্মুলা’তেই প্রত্যাবর্তন!

- Advertisement -

তথাগত সিংহ

অবশেষে কালীঘাটের বৈঠকে (Kalighat Meeting) ফের শুভেন্দু বিতর্ক ফিরে এল। শুভেন্দু অধিকারী কেন তৃণমূল ছেড়েছেন, তা নিয়ে অনেক গল্পই বাজারে চলে। কেউ বলেন, তৃণমূলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান শুভেন্দুর রাজনৈতিক জীবনের জন্য বড় বাধা তৈরি করেছিল। কেউ বলেন, শুভেন্দু অধিকারী নারদার মতো দুর্নীতি থেকে বাঁচতেই বিজেপিতে যোগ দেন।

আবার কেউ কেউ এটাও বলেন, তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমান্তরালে নিজের মতো করে জেলায় জেলায় সংগঠন সাজাচ্ছিলেন শুভেন্দু। সেটা বুঝতে পেরে অভিষেক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ করেন। এবং ‘গদ্দার’ বলে চিহ্নিত করেন।

পর্যবেক্ষক নিয়ে পুরনো বিতর্ক

এমন সব গাল-গল্পের কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল সে নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলে থাকার সময় নিজেকে ‘পর্যবেক্ষক’ হিসেবে তুলে ধরে সেই সময় যে বেশ কয়েকটি জেলা লাগাতার চষে বেরিয়েছিলেন – তার অনেক প্রমাণ রয়েছে।

অর্থাৎ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ একেবারে মিথ্যা ছিল না। খোদ শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দিয়ে পরে একথাও স্বীকার করেন, তিনি না কি ২০১৫ থেকেই তৃণমূল ছাড়ার চক্করে ছিলেন। আর হয়তো সেই কারণেই তৃণমূলে থাকার শেষ কয়েক বছর নিজেকে ‘পর্যবেক্ষক’ হিসেবে তুলে ধরে তিনি জেলায় জেলায় ঘুরে নিজের মতো করে সংগঠন গোছানোর চেষ্টা করেছিলেন।

শুভেন্দুর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কয়েক মাস আগে এই ‘পর্যবেক্ষক’ পদ নিয়ে তৃণমূলে বড় রকমের গলযোগ তৈরি হয়। এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দু অধিকারীকে ভুল প্রমাণ করতে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলীয় সংগঠনে ‘পর্যবেক্ষক’ পদটি তুলে নিজেকে সবজেলার পর্যবেক্ষক ঘোষণা করেন। তবে কাজের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে দিতে পর্যবেক্ষকের পরিবর্তে জেলায় জেলায় ‘চেয়ারম্যান’ বসানো হয়।

পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকলেও পর্যবেক্ষক নয়

কিন্তু সাগরদিঘিতে ধাক্কা খাওয়ার পর সেই ‘পর্যবেক্ষক’ পদটিকেই এবার ‘ফিরিয়ে’ আনলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার কালীঘাটে দলীয় বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, এবার থেকে বিভিন্ন জেলার সংগঠনের গতি-প্রকৃতি দেখার জন্য একাধিক নেতা দায়িত্বে থাকবেন।

যদিও বৈঠকের পর তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, ‘‘পর্যবেক্ষক পদ ফিরছে বলা যাবে না। দলনেত্রী কে কোন জেলার সংগঠন দেখবেন, সেটা ঘোষণা করে দিয়েছেন।’’ সাদা বাংলায়, পর্যবেক্ষণ বা সংগঠন দেখার দায়িত্বে থাকলেও তৃণমূলের কোনও নেতাকে পর্যবেক্ষক বলা যাবে না। ব্যাপারটা অনেকটা ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো ব্যাপার আর কি!

কে কোন জেলার পর্যবেক্ষক

তৃণমূল সূত্রে খবর, এখন থেকে ফিরহাদ হাকিম হাওড়া ও হুগলির দায়িত্বে থাকবেন। তাপস রায় দক্ষিণ দিনাজপুরের দায়িত্বে থাকবেন। মলয় ঘটক থাকবেন বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার দায়িত্বে। মালদা ও মুর্শিদাবাদে যেহেতু সংখ্যালঘুদের সংখ্যা অন্য জেলার তুলনায় বেশি, সুতরাং এই দুই জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিদিকুল্লা চৌধুরিকে।

সাবিনা ইয়াসমিনকে দেওয়া হয়েছে উত্তরদিনাজপুরের দায়িত্ব। এবং অরূপ বিশ্বাস দার্জিলিং, নদীয়া ও পূর্ব বর্ধমানের সংগঠনের কাজকর্মগুলোর দিকে নজর রাখবেন। এবং বাকি জেলাগুলির ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান ও সভাপতিরাই সংগঠন দেখভাল করবেন।

অভিষেকের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন

কিন্তু এখানে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সংগঠনেও ফেল মারলেন? তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গোয়া, ত্রিপুরা কিংবা মেঘালয় কোনও রাজ্যেই তেমন ছাপ ফেলতে পারেননি অভিষেক। মাঝখানে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে কিছুদিন বাংলাতেই সংগঠনের সমস্যা দূর করার চেষ্টা করেছিলেন। ২০২১’এর বিধানসভা ভোটের আগে ঘন ঘন তাঁকে উত্তরবঙ্গ সফর করতে দেখা যেত।

তাহলে কি অভিষেকের ওপর পুরোপুরিভাবে সাংগঠনিক দায়িত্ব না দিয়ে শুভেন্দুর মতোই এবার ‘পর্যবেক্ষক’ দিয়ে কাজ চালাতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? তাহলে এই ‘পর্যবেক্ষক’ পদ নিয়ে শুভেন্দুকে সেই সময় কোনঠাসা করে দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল?

কেন ফেরানো হল পর্যবেক্ষক

এর উত্তরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শুভেন্দু অধিকারী আর যাই হোক অভিষেকপন্থী ছিলেন না। আর সেটাই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। এতদিনে পরিস্কার হয়ে গিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবিষ্যতে কার হাতে তৃণমূলকে তুলে দিতে চাইছেন।

অভিষেক যতদিন রাজনীতিতে পা রাখেন নি ততদিন শুভেন্দুর মনে আশা ছিল – রাজনীতির জোর থাকলে তৃণমূলের রাশ কোনও দিন তাঁর ভাগে জুটলেও জুটতে পারে। কিন্তু আচমকাই অভিষেক দিল্লি থেকে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে তৃণমূলের সক্রিয় রাজনীতিতে ঢুকে পড়লেন। শুভেন্দুর ভাষায় যা কি না ‘লিফটে চড়ে’ আসা। তারপরই শুভেন্দু বুঝে যান, তৃণমূলের যা কিছু ‘ভাইপো’ই পাবে। সুতরাং ‘পর্যবেক্ষক’ হিসেবে তিনি ’মিরজাফরে’র কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন।

কিন্তু এবার যাঁদের নতুন করে ‘পর্যবেক্ষক’ করা হল, তাঁরা সবাই অভিষেকপন্থী। অভিষেক ছাপিয়ে যাওয়ার কথা তাঁরা স্বপ্নেও ভাববেন না। অতএব শুভেন্দু অধিকারীর ‘জায়গাটা’ তাঁদের দিতে আপত্তি কোথায়? কিন্তু যেহেতু ওই ‘পর্যবেক্ষক’ পদটার সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর নামটা জড়িয়ে রয়েছে, সুতরাং ফিরহাদ হাকিম, তাপস রায়, মলয় ঘটকদের শুধুই দায়িত্বটুকু দেওয়া হয়েছে, পদটা রাখা হয়েছে অভিষেকের কাছেই।

নিজের ঘাড়ের দায় অন্যের ঘাড়ে

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও একটি কথা বলছেন, এই ‘পর্যবেক্ষকের’ দায়িত্বটা (পড়ুন পদটা) এই কারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন ছিল, কেননা ইদানিং দুর্নীতির ইস্যুতে বিরোধীরা বড়ই জ্বালাতন করছেন। সেই বিখ্যাত বাণী ‘আমিই সব আসনের প্রার্থী’- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বড় বিপাকে ফেলেছে।

তাছাড়া তৃণমূল নেত্রী মুখে যাই বলুন না কেন, একজনের পক্ষে সবজেলার সব সমস্যার ওপর নজর রাখা মোটেও সম্ভব নয়। কানে কানে অনেকেই অনেক খবর হয়তো দেন ঠিকই, কিন্তু তাতে কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক সেটা যেমন বোঝা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়, তেমনই কোনও ভুলের জন্য কাউকে দায়ি করাও মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। শেষে ঘুরে ফিরে দায়টা এসে শীর্ষনেতৃত্বের ঘাড়ে চড়ে বসে।

এই পরিস্থিতিতে নিজেদের ঘাড়টা বাঁচাতে মাঝখানে তো একটা ‘লেয়ার’ চায়! অতএব শুভেন্দু অধিকারীর জন্য যতই ‘পর্যবেক্ষক’ পদের ‘বদনাম’ হয়ে থাকুক না কেন, দুর্নীতির বদনাম অন্যের ঘাড়ে চাপাতে ‘পর্যবেক্ষক’ তো চায়!

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -