মুম্বই– রবিবার সন্ধ্য়ায় মুম্বইয়ের এক বিলাসবহুল হাউজিং সোসাইটির এক ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হল এক প্রশিক্ষণাধীন এয়ার হোস্টেসের দেহ। তাঁকে হত্যার দায়ে আটক করা হয়েছে ওই আবাসনেরই এক সাফাই কর্মীকে। অভিজাত আবাসনে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই ঘটনার আরও তদন্ত প্রয়োজন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অনেকবার ফোন করেও তাঁর সাড়া পাচ্ছিলেন না আত্মীয়রা। তাই, বন্ধুদের তাঁর খোঁজ নিতে বলেছিলেন তাঁর বাড়ির লোক। বন্ধুরা এসে দেখেছিল, ফ্ল্যাটটি ভিতর থেকে তালাবন্ধ। সময় নষ্ট না করে তাঁরা খবর দিয়েছিলেন পুলিশে। পুলিশ দরজা ভাঙতেই দেখা গিয়েছিল, রক্তে ভেসে যাচ্ছে গোটা ঘর। আর তার মধ্যে গলা কাটা অবস্থায় পড়ে আছে ২৫ বছরের যুবতীর দেহ। অবিলম্বে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তবে ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই প্রশিক্ষণাধীন বিমান পরিচারিকার নাম রুপাল ওগ্রে। তিনি আদতে ছত্তীসগঢ় রাজ্যের বাসিন্দা। সম্প্রতি, ‘এয়ার ইন্ডিয়া’ সংস্থা তাঁকে বিমান সেবিকা হিসেবে বাছাই করেছিল। প্রশিক্ষণের জন্য চলতি বছরের এপ্রিলে তিনি মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন। আন্ধেরি এলাকার এক অভিজাত আবাসনে একটি ফ্ল্যাট নিয় থাকতে শুরু করেছিলেন। রুপালের প্রেমিকও এবং তাঁর এক বোনও থাকতেন তাঁর সঙ্গে। প্রায় এক সপ্তাহ আগে, তাঁরা দুজনেই কিছু ব্যক্তিগত কাজে ছত্তীসগঢ়ে ফিরে গিয়েছিলেন। ফ্ল্যাটে একাই ছিলেন রুপাল। ফোনে রোজই বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা হত তাঁর। রবিবার সকালে তাঁর সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্যদের শেষবার কথা হয়েছিল। বিকেল থেকেই তাঁর আর কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপরই তাঁর গলাকাটা দেহ উদ্ধার হয়।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বিক্রম অটওয়াল নামে এক ৪০ বছর বয়সী ব্যক্তির সঙ্গে দিন কয়েক আগে উত্তপ্ত বাদানুবাদ হয়েছিল রুপালের। বিক্রম অটওয়াল ওই আবাসনে সাফাইকর্মীর কাজ করেন। রুপালের হত্যার পরই গা ঢাকা দিয়েছিল সে। ফলে পুলিশের যাবতীয় সন্দেহ তার উপরই গিয়ে পড়েছিল। তাকে ধরার জন্য মোট ১২টি দল গঠন করেছিল পুলিশ। পরে রাতেই মুম্বইয়ের এক জায়গা থেকে তাকে আটক করা হয়। পুলিশের অনুমান আগের সেই তর্কের প্রেক্ষিতেই নিহত যুবতীকে ‘শিক্ষা দিতে’ তাকে হত্যা করেছে বিক্রম অটওয়াল। পুলিশ আরও জানিয়ছে, বিক্রমের মাথায় আঘাত রয়েছে। তাদের অনুমান, রুপালকে আক্রমণ করার পর, তিনি প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন। তাতেই মাথায় আঘাত পেয়েছে বিক্রম।
বর্তমানে বিক্রম অটওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন পুলিশ কর্তারা। সূত্রের খবর, হত্যার পিছনে তার ভূমিকা সন্দেহাতীতভাবে নিশ্চিত করার পরই তাকে গ্রেফতার করা হবে। তার গতিবিধি খতিয়ে দেখতে ওই আবাসনের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলিও স্ক্যান করা হচ্ছে। রুপাল হত্যার অন্য কোনও সূত্র পাওয়া যায় কিনা, তারও সন্ধান করছে পুলিশ। বিক্রম অটওয়ালের স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তিনি একই আবাসনে গৃহ পরিচারিকার কাজ করেন। রবিবার সকাল পর্যন্ত বিমানসেবিকার সঙ্গে তাঁর বাড়ির লোকের যোগাযোগ থাকায়, পুলিশ মনে করছে, তাঁকে বিকেলে হত্যা করা হয়েছিল। এই বিষয়ে পুলিশ একচি হত্যার মামলা দায়ের করেছে। ক্রাইম ব্রাঞ্চের আধিকারিকরা সমান্তরাল তদন্ত চালাচ্ছেন।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, একটি ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে রুপালের গলা চিরে দেওয়া হয়েছিল। হত্যার অস্ত্রটি অবশ্য এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। ডেপুটি কমিশনার দত্ত নালাভড়ে বলেছেন, “তাঁর গলা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে। আমরা দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা জানিয়েছে, যৌন নিপীড়নের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে, আমরা সম্ভাব্য সব দিক থেকে মামলাটির তদন্ত করছি।”