কলকাতা – আশঙ্কাটা আগে থেকেই ছিল। কিন্তু বাস্তবে পরিণত হল বুধবার। যখন রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের (West Bengal Assembly Budget Session) প্রথম দিনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (CV Ananda Bose) ভাষণ দিলেন। সেই ভাষণে বেজায় অসন্তুষ্ট বিজেপি পরিষদীয় দল। বিধানসভার অন্দরে রাজ্যপালকে থামানোর চেষ্টা চলল বিজেপির তরফ থেকে। হই-হট্টগোলও করা হল। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) নেতৃত্বে ওয়াক আউট করেন বিজেপি বিধায়করা। বাইরে বেরিয়েও প্রতিবাদ চলে। পরে সাংবাদিক বৈঠক করে নিজেদের অসন্তোষের কারণ ব্যাখ্যা করেন শুভেন্দু। কড়া ভাষায় তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম তামিলনাড়ুর বর্তমান রাজ্যপালের মতো, বা পশ্চিমবঙ্গের বিগত দিনের মেরুদণ্ড সোজা রাখা সংবিধান বিশেষজ্ঞ রাজ্যপালের মতো তিনিও এই সব লাইন পড়বেন না। কিন্তু আমরা দেখলাম তিনি এগুলি পড়েছেন। আমরা রাজ্যপালকে প্রায় দশ মিনিট ধরে থামানোর চেষ্টা করেছি। বলেছি, অসত্য ভাষণ পড়া বন্ধ করুন, টেবিল করে দিন। কিন্তু তিনি পড়েই যাচ্ছেন।’
আসলে, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতাদের তাল কাটছিল শুরুর দিন থেকেই।
সাধারণ যে কোনও রাজ্যেই বিধানসভার অধিবেশনের জন্য রাজ্যপালের বক্তৃতার খসড়া রাজ্যের থেকেই লিখে পাঠানো হয়। তবে শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, অতীতে অনেক রাজ্যপালই খসড়া ভাষণের বেশ কিছু লাইন রাজ্য সরকারকে পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছেন। সেই প্রসঙ্গে বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী, কেশরীনাথ ত্রিপাঠি, জগদীপ ধনখড়ের তুলনাও টানেন শুভেন্দু। বিরোধী দলনেতা জানান,তামিলনাড়ুর বর্তমান রাজ্যপালও সম্প্রতি সে রাজ্যের বিধানসভায় বেশ কিছু বিষয় পড়তে অস্বীকার করেছেন। শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘বাংলার রাজ্যপাল তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের দেখানো পথে না হেঁটে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের দেখানো পথে হেঁটেছেন। যেভাবে রাজ্যের প্রকৃত অবস্থার উল্লেখ না করে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিখে দেওয়া বক্তৃতা রাজ্যপাল পড়েছেন, তাতে রাজ্যের জনগণ ও বিরোধীরা হতাশ।’
শুভেন্দুর বক্তব্য, রাজ্যপালকে দিয়ে বলানো হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা সোনায় বাংলায় বসবাস করছি।’
বিরোধী দলনেতার মুখে উঠে আসে রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল কিংবা বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ধনখড়ের মতো তিনি শক্ত মেরুদণ্ডের পরিচয় দেবেন। কিন্তু উনি (রাজ্যপাল বোস) সরকারের লিখে দেওয়া বক্তব্যই পাঠ করলেন।” রাজ্যপালকে দিয়ে ‘মিষ্টি, মিষ্টি’ কথা বলানো হলেও রাজ্যের ‘প্রকৃত অবস্থাটা’ তাঁরা রাজ্যপালের কাছে তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অটল বিহারী বাজপেয়ী, ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ, এপিজে আব্দুল কালামের মতো ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে যে তুলনা রাজ্যপাল টেনেছেন, তাতেও তীব্র আপত্তি শুভেন্দুর। বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, এমন তুলনা টানায় ‘বাংলা ও বাঙালি লজ্জিত হয়েছে’। রাজ্যপাল যদি ভবিষ্যতে ফের এই ধরনের তুলনা টানেন, তাহলে এর প্রতিবাদ করবে বিজেপি, সেই হুঁশিয়ারিও দিয়ে রাখলেন তিনি।