মঙ্গলবার, নভেম্বর 19, 2024
মঙ্গলবার, নভেম্বর 19, 2024
Homeকাজকর্মসৌদি আরবে কাজ করতে চাইলে কি করতে হবে, জেনে নিন খুঁটি-নাটি তথ্য

সৌদি আরবে কাজ করতে চাইলে কি করতে হবে, জেনে নিন খুঁটি-নাটি তথ্য

- Advertisement -

আরব সাগরের তীরে অবস্থিত সৌদি আরব এমন একটি দেশ যা বিগত কয়েক দশক ধরেই ভারতীয় উপ-মহাদেশের মানুষদের কাছে ব্যবসা কিংবা কাজের জন্য খুবই পছন্দের জায়গা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই জনপ্রিয়তার সবথেকে বড় কারণ হল তুলনামূলকভাবে বেশি রোজগার এবং আয়ের ওপর সৌদি সরকারের আয়কর ছাড়। তাছাড়া সৌদি আরবে যেহেতু মরুভূমির জন্য জনসংখ্যা খুবই কম সুতরাং সেখানকার পরিকাঠামো নির্মাণ থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য চালানোর জন্য প্রচুর বাইরের লোকের প্রয়োজন হয়। আর সেই কারণেই বিশ্বের অন্য কোনও দেশের তুলনায় সৌদি আরবে যাওয়া যেমন সহজ তেমনই রোজগার করাও খুব সহজ।

সৌদি আরবের সরকারের ২০৩০ সালের লক্ষ্য

আমরা সবাই জানি সৌদি আরব সারাবিশ্বে জ্বালানি তেল বিক্রি করে পয়সা রোজগার করে। সৌদি আরবের পয়সার নাম দিনার। কিন্তু একদিন না একদিন এই তেল শেষ হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে নতুন প্রযুক্তিও আসতে শুরু করেছে। এখন সবকিছুই ব্যাটারিতে চলে। ফলে সৌদি আরব ভালোমতই বুঝতে পেরেছে – শুধু তেল বিক্রির ওপর ভরসা করে বসে থাকলে একদিন খারাপ দিন আসতে পারে। তাই সৌদি সরকার এখন থেকেই তেল বিক্রির টাকায় দেশে নতুন নতুন পরিকাঠামো তৈরিতে মন দিয়েছে। নতুন নতুন বিল্ডিং, নতুন নতুন হাসপাতাল, টুরিস্ট প্লেস, ব্যবসার কেন্দ্র, শহর – সমস্ত কিছুই অতি আধুনিক ভাবে তৈরি করতে শুরু করেছে সৌদি আরবের সরকার। আর এই সব তৈরি করতে হলে প্রচুর লোকের দরকার। লেবার থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ার দরকার। সৌদি আরব চাইছে সারাবিশ্বের মানুষ ভবিষ্যতে সেখানেই চিকিৎসা করাতে যাক। সেই জন্য এমন এমন হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে যা সারাবিশ্বে কোথাও নেই। এমনকি ইউরোপ আমেরিকাতেও নেই। কিন্তু এইসব হাসপাতাল চালাতে গেলে তো ডাক্তার, নার্স, কর্মী লাগবে। তাই সৌদি আরবে কাজের লোকের দরকার হচ্ছে। সৌদি আরব ২০৩০ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৫ লাখ বাইরের লোককে কাজ দিতে চাইছে।

কিন্তু চাইলেই তো আর সৌদি আরবে গিয়ে কাজ শুরু করা যায় না! এরজন্য কিছু নিয়ম-কানুন আছে। খেয়াল রাখতে হবে সৌদি আরবের আইন কিন্তু খুবই কড়া। শরিয়া আইন মেনে সেখানকার দেশ চালায় শাসকরা। অর্থাৎ হাতের বদলে হাত, চোখের বদলে চোখ কিন্তু সেখানে একেবারে সরকারি আইনে আছে। দোষীকে ফাঁসাতে টাঙানো কিংবা গুলি করে মারা সৌদি আরবের কাছে জলভাতের খেলা। তাই সৌদি আরবে কাজ করতে গেলে সেখানকার সমস্ত নিয়ম মেনেই কিন্তু কাজ করতে হবে। তাহলেই কোনও সমস্যা নেই। আর সেজন্য সবার আগে লাগবে সৌদি ওয়ার্কিং ভিসা বা সৌদি আরবে কাজ করার ভিসা।

কি এই সৌদি ওয়ার্কিং ভিসা

বোঝায় যাচ্ছে, আসলে সৌদি আরবে কাজ করতে হলে সেখানকার সরকারের যে ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয় সেটাকেই বলে সৌদি ওয়ার্কিং ভিসা। এমনিতে ভিসা নানা ধরনের হয়। যেমন – টুরিস্ট ভিসা, মেডিক্যাল ভিসা, কূটনৈতিক ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক ভিসা। যেহুতু আপনি সৌদি আরবে কাজের জন্য মানে রোজগারের জন্য যাবেন তাই আপনাকে ওয়ার্কিং ভিসা নিতে হবে। টুরিস্ট ভিসা কিংবা স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে পৌঁছে গেলেন। তারপর কাজ করে টাকা ইনকাম করতে শুরু করলেন। এরকমের কান্ড করলে কিন্তু ওই যে আগেই বললাম, সৌদি আইন মেনে কিন্তু আপনার শাস্তি হবে। সুতরাং সঠিক পথে ভিসা নিয়েই কিন্তু সৌদি আরবে পা রাখতে হবে। না হলে কিন্তু পরে পস্তাতে হবে।

কারা কিভাবে কোথায় এই সৌদি ওয়ার্কিং ভিসা পাবেন

দেখুন সৌদি আরবে কাজের জন্য ভিসা পেতে গেলে কয়েকটা বিষয় আপনাকে জানতে হবে। যেমন – সৌদি আরব চায় যে বা যাঁরা সে দেশে কাজ করতে যাবেন তাঁরা যেন দীর্ঘদিন সেখানে থাকেন। এই নয় যে ১ থেকে ২ বছরের জন্য গেলাম আর মাল কামিয়ে ড্যাং ড্যাং করে ফিরে এলাম। সেটা করলে কিন্তু হবে না। অতএব সৌদি আরবে গেলে ধরে নিতে হবে অন্তত ৫ বছর সেখানে থাকতে হতে পারে।

দ্বিতীয়ত, শরীরে কোনও রোগ থাকলে হবে না। রোগী হয়ে সৌদি আরবে যেতে চাইলে মেডিক্যাল ভিসায় যেতে হবে। সেখানে গিয়ে উলটে হাসপাতালে টাকা থুড়ি দিনার খরচা করতে হবে। কামাই করা যাবে না। সুতরাং কাজের ভিসার আবেদনকারীকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ-সবল হতে হবে।

তৃতীয়ত, আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং যে কাজের জন্য যাচ্ছে তার সরকারি সার্টিফিকেট থাকতে হবে। গেলাম আর মুখের কথায় কাজে লাগিয়ে দিল – তারপর কিছু একটা ঘটে গেল – না মশাই, সৌদি আরব সেভাবে চলে না। সৌদি আরবের সরকার আগে-ভাগেই কে কোন কাজের জন্য আসছে সেটা তথ্য-প্রমাণ দিয়ে জেনে নেয়। তারপর কাউকে দেশের ঢোকার জন্য ছাড়পত্র দেয়। কেননা, সৌদি আরবে কাজ করতে গেলে জীবনবীমা থেকে শুরু করে মেডিক্যাল বীমা সবই সৌদি সরকার ব্যবস্থা করে দেয়।

সৌদি আরবের ওয়ার্কিং ভিসার প্রকারভেদ

সৌদি আরবে কাজ করতে গেলে মূলত ৩ ধরনের ওয়ার্কিং ভিসা রয়েছে।

১। টেম্পোরারি ওয়ার্ক ভিসা – এই ভিসা সাধারণ নতুন লোকেদের দেওয়া হয়। এর মেয়াদ ৯০ দিনের থাকে। এই ৯০ দিন পরে বাড়িয়ে আরও ৯০ দিন করা যেতে পারে। আসলে এই ধরনের ভিসা দিয়ে সৌদি সরকার দেখে কে বা কারা কাজের যোগ্য আর কারা কাজের অযোগ্য। যে কাজের জন্য গেছেন, সেটা যদি ঠিকঠাক না করতে পারেন তাহলে ৯০ দিনের মধ্যেই ভাগিয়ে দেবে। আর যদি কাজ মনের মতো হয় তাহলে আর ৯০ দিন বাড়বে। তারপর পারমান্যান্ট হয়ে যাবে।

পারমান্যান্ট ওয়ার্ক ভিসা – বুঝতেই পারছেন এধরনের ভিসা পাওয়ার অর্থ হল আপনি সৌদি সরকারের কাছে যোগ্য কাজের লোক। এধরনের ভিসা হাতে পেলে আপনি একজন সৌদি নাগরিকের মতো সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

৩। সিজিনাল ওয়ার্ক ভিসা – আরও এক ধরনের ওয়ার্কিং ভিসা আছে যাকে বলে সিজিনাল বা সাময়িক ভিসা। এধরনের ভিসা তখনই সৌদি সরকার দেয় যখন কোনও বিশেষ সময়ে বিশেষ কাজের জন্য বেশি করে লোকের দরকার হয়। কথার কথা, ধরুন কোনও একটা হাসপাতাল ৩ মাসের মধ্যে তৈরি করতে হবে। কিন্তু হাসপাতালটা এত বড় যে বাইরে থেকে বেশি করে লোক না নিলে ৩ মাসে কাজ সম্পূর্ণ হবে না। তখন এই বাইরে থেকে লোক নিতে সৌদি সরকার এধরনের ভিসা দিতে শুরু করে।

সৌদি ওয়ার্ক ভিসা পেতে হলে যা দরকার

১। অবশ্যই পাসপোর্ট থাকতে হবে। শুধু পাসপোর্ট থাকলেই হবে না, যেদিন থেকে সৌদি আরবে যাবেন তারপর অন্তত ৬ মাস যেন সেই পাসপোর্টের ভ্যালিডিটি বা বৈধতা থাকে। পাসপোর্টে অন্তত দুটো খালি পাতা থাকতে হবে।

২। অবশ্যই কোনও সৌদি আরবের কোম্পানি কিংবা সেই সেই কোম্পানির সহযোগী সংস্থার কাজের অফার থাকতে হবে।

৩। আপনার কাছে সৌদি আরবের সরকারের আমন্ত্রণ পত্র থাকতে হবে। যে আমন্ত্রণ পত্রে সৌদি সরকারের বিদেশমন্ত্রীর সই থাকতে হবে। আমন্ত্রণ পত্রটি আরবি ভাষায় লেখা থাকবে।

৪। যে কাজের জন্য আপনি সৌদি যাচ্ছেন সেটা পরিস্কারভাবে উল্লেখ করতে হবে। সেখানে পৌঁছে আবার অন্য কাজে যোগ দিলেন বা দেওয়ার চেষ্টা করছেন – সেটা করলে কিন্তু হবে না।

৫। আপনার বিরুদ্ধে যাতে কোনও ধরনের অপরাধমূলক রেকর্ড দেশে না থাকে। মানে থানায় কিংবা পুলিশ রেকর্ডে কোনও মামলা না থাকে।

সৌদি ওয়ার্ক ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট

১। বৈধ পাসপোর্ট

২। রঙিন ছবি

৩। ভিসার আবেদনের জন্য জমা করা টাকার রশিদ

৪। সম্পূর্ণ পূরণ করা আবেদন পত্র

৫। সুস্থ-সবল থাকার মেডিক্যাল সার্টিফিকেট এবং যে ডাক্তার সেই সার্টিফিকেট দিয়েছে তার লাইসেন্সের কপি। এরমধ্যে যে সব পরীক্ষা করাতে হবে –

ক। সাধারণ মেডিক্যাল পরীক্ষা খ। মূত্র ও মলের পরীক্ষা গ। বুকের পরীক্ষা ঘ। এবং যে কাজ করতে যাচ্ছেন তার জন্য বিশেষ কিছু পরীক্ষা (যদি কিছু থেকে থাকে)। ও হ্যাঁ, কি কি ভ্যাকসিন নিয়েছেন কবে নিয়েছেন সেটাও জানাতে হবে।

৬। সৌদি আরবের কোম্পানির এমপ্লোয়মেন্টের কাগজ।

৭। স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির কাগজ।

৮। সৌদি সরকারের আমন্ত্রণ পত্র

৯। পুলিশের ছাড়পত্র

১০। জরুরি জীবনবীমার কাগজ

১১। প্রয়োজন কাজের অভিজ্ঞতার কাগজ

সৌদি ওয়ার্ক ভিসার আবেদন কিভাবে করবেন

সত্যি কথা হল সৌদি ওয়ার্ক ভিসার আবেদন আপনি নয়, আপনার সংস্থা করবে। যে সৌদি সংস্থা কিংবা তার সহযোগী সংস্থা কাজের জন্য আপনাকে সৌদি আরবে নিয়ে যেতে চাইছে।

সংস্থা আপনার কাছ থেকে সমস্ত ডকুমেন্ট নিয়ে ভিসার আবেদন করলেই প্রসেস শুরু হয়ে যাবে। আপনাকে শুধু ভিসা আবেদনের সমস্ত কাগজপত্র নিজের হাতে নিয়ে গিয়ে সৌদি অ্যাম্বেসিতে গিয়ে জমা করতে হবে।

এরপর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১ থেকে ৩ সপ্তাহেল মধ্যেই আপনি সৌদি সরকারের তরফে ওয়ার্ক ভিসা পেয়ে যাবেন। তবে এরই মাঝে আপনাকে সৌদি আরবে থাকার জন্য রেসিডেন্ট পারমিটের আবেদন করতে হবে। যাকে ইকমা বলে। লেবার মিনিস্ট্রির কাছে এই আবেদন করার পর সেটা সৌদি আরবের ইন্টিরিয়র মিনিস্ট্রির কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে। তবে এই কাজে আপনার সংস্থায় সব ব্যবস্থা করে দেবে।

আরও খবর
- Advertisment -

সবাই যা পড়ছেন

পছন্দের খবর