প্রথম ইনিংস ছিল নয় বছরের, দ্বিতীয়টা দশ মাসের। আর তৃতীয়টা এখনও চলছে। জেমিমা গোল্ডস্মিথ, রেহ্যাম খান ও বুশরা মানেকা – খাতায় কলমে এই হল গিয়ে এককালের ‘প্লেবয়’ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা পাকিস্তানকে ক্রিকেট বিশ্বকাপ এনে দেওয়া ইমরান খানের বিবাহিত জীবনের দস্তাবেজ। কিন্তু ইমরান খানের ‘প্লেবয়’ লাইফ এখানেই থেমে থাকেনি। শোনা যায়,
ইমরানের (Imran Khan) জীবনে এসেছিলেন একাধিক নারী। কেউ প্রেমিকা হিসেবে, আবার কেউ স্ত্রী হিসেবে। তাঁদেরই একজন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রেখা। শোনা যায়, ভারতের বেশ কয়েকজন বিদূষীও না কি এক সময় ইমরানের প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছেন। এই তালিকায় যেমন ‘চির যৌবনা’ বলিউড অভিনেত্রী রেখার নাম রয়েছে, তেমনই আমাদের বাঙালি মুনমুন সেনকে নিয়ে কানাঘুষো রয়েছে। শোনা যায়, অভিনেত্রী মুনমুন সেনকে (Munmun Sen) ভীষণ পছন্দ করতেন ইমরান। যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। তবু তাঁর কোনো এক দুর্বল মুহূর্তের মন্তব্যে সেটি আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এদিকে, রেখার (Rekha) সঙ্গে ইমরানের প্রেমের সম্পর্ক গড়িয়েছিল বিয়ে পর্যন্ত। মাস আটেক আগে ইমরান খানের (Imran Khan) যখন প্রধানমন্ত্রীত্বের পদ চলে গেল, সেই সময় নতুন করে রেখার সঙ্গে তাঁর প্রেমকাহিনী নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। শুধু কী তাই! ‘স্টার’ নামের এক সংবাদপত্রের সেই সময়ের খবরের শিরোনাম ছিল, ‘রেখাকে (Rekha) কি বিয়ে করছেন ইমরান?’ ওই সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, ১৯৮৫ সালের এপ্রিল মাসের প্রায় পুরোটাই মুম্বাইতে (তৎকালীন বম্বে) কাটিয়েছিলেন ইমরান, সঙ্গী ছিলেন রেখা। রেখার (Rekha) সঙ্গে নানা সময় ইমরানকে সমুদ্রসৈকত, পার্টি বা নাইটক্লাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা মনে করেন, তাঁদের বেশ ঘনিষ্ঠভাবেই দেখা যেত। স্টার সংবাদপত্রের এমন দাবিতে বলতে হয়, অমিতাভ বচ্চন সেই সময় কী করছিলেন, সেটাই সবথেকে প্রশ্ন।
স্টার সংবাদপত্রের আর দাবি ছিল, ইমরানের (Imran Khan) সঙ্গে বিয়ে নিয়ে নাকি রেখার (Rekha) মা পুষ্পাবলীরও আপত্তি ছিল না। তিনি মনে করতেন, ইমরানই তাঁর মেয়ের সেরা সঙ্গী হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত রেখার সঙ্গে সম্পর্ক টেকেনি, বিয়েটাও হয়নি তাঁদের। কেন এমনটা হল? এর ব্যাখায় সংবাদপত্রটি জানিয়েছিল, অভিনেত্রীদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করলেও বিয়ের কথা ভাবতেও পারতেন না ইমরান। এ বক্তব্যের সমর্থনে ইমরানের একটি মন্তব্যও প্রকাশ করেছিল তারা। সেখানে ইমরান বলেছিলেন, ‘কিছুদিনের সঙ্গী হিসেবে অভিনেত্রীরা মন্দ নয়। তাঁদের সঙ্গ পছন্দ করলেও অল্প কদিন পর আমি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতাম। একজন অভিনেত্রীকে বিয়ের কথা আমি ভাবতেও পারি না।’
বলিউডের আরেক অভিনেত্রী শাবানা আজমির (Sabana Azmi) সঙ্গেও ইমরানের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে একসময় আলোচনায় মেতেছিল বলিউড। আর সেই জল্পনাকল্পনা কখনো উড়িয়ে দেননি শাবানা বা ইমরান। আজও তাই শাবানা–ইমরানের সম্পর্ক এক রহস্য। আরেকজনের কথা না বললে ‘প্লেবয়’ ইমরান খানের গল্প অসম্পূর্ণ থাকবে। তিনি হলেন সত্তরের দশকের বলিউডের এক সাহসী নায়িকা জিনাত আমান (Jinat Aman)। তাঁর সঙ্গেও ইমরানের (Imran Khan) প্রেম নিয়ে আলোচনা শোনা যেত। ১৯৭৯ সালের নভেম্বর মাসে ভারতে খেলতে গিয়েছিল পাকিস্তান ক্রিকেট দল। সেবার পাকিস্তান–ভারত ক্রিকেট নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি গুঞ্জন ওঠে জিনাত-ইমরানের সম্পর্ক নিয়ে। সে বছরই নাকি ইমরানের নামের সঙ্গে ‘প্লেবয়’ শব্দটি জুড়ে গিয়েছিল।
এবার ইমরানের বিবিদের সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক –
জেমিমা গোল্ডস্মিথ (Jemima Goldsmith)
ব্রিটিশ-পাক সাংবাদিক জেমিমাকে ১৯৯৫-এর ১৬ মে বিয়ে করেছিলেন ইমরান (Imran Khan)। ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর ইমরান প্রেমের শহর প্যারিসে গিয়ে তাঁদের বিয়ের পর্ব সাড়েন। প্রায় অর্ধেক বয়সের জেমিমাকে (২১ বছর) ইসলামিক ঐতিহ্য মেনে বিয়ে করেন ইমরান। বিয়ের কয়েক মাস আগেই ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন জেমিমা (Jemima Goldsmith)। বিয়ের পরে লন্ডনের পাঠ চুকিয়ে পাকাপাকি ভাবে লাহোরের বসিন্দা হয়ে যান ইমরানের বিবি। যিনি উর্দুও রপ্ত করেছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ টাইকুন জেমস গোল্ডস্মিথের মেয়ে জেমিমার সঙ্গে ২২ জুন, ২০০৪ সম্পর্ক ছেদ করে নতুন ‘রানি’র খোঁজ শুরু করেন পাক ‘প্লেবয়’৷ জেমিমা ও ইমরানের দুই ছেলে রয়েছে।
তবে, ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলেও জেমিমা গোল্ডস্মিথকে (Jemima Goldsmith) বৃটিশ মিডিয়া ‘জেমিমা খান’ বলেই লিখে যাচ্ছে। ইমরান খানের পদবী খান, জেমিমা তার নামের সঙ্গে যুক্ত করে হয়েছিলেন ‘জেমিমা খান’। কিন্তু বিয়ে যখন বিচ্ছেদে পরিণত হয়েছে, তখন ওই খান পদবীটারও বিচ্ছেদ হওয়ার কথা। কিন্তু না, সেটাই ধারণ করে বৃটিশ মিডিয়া তাকে ওই নামে সম্বোধন করে যাচ্ছে।
জেমিমার (Jemima Goldsmith) নতুন একটি ফিল্ম বা ছবি মুক্তি পেতে যাচ্ছে। নাম ‘হোয়াট ইজ লাভ গট টু ডু উইথ ইট?’। এর কাহিনী ইমরান খানকে বিয়ে, পাকিস্তানে তার মূল্যবান ৯টি বছর কাটানো ইত্যাদি নিয়ে। এতে আছে বর্তমান বিশ্বের আধুনিক সব ডেটিং এবং অ্যারেঞ্জড ম্যারিজ নিয়ে কাহিনী। জেমিমার বয়স এখন ৫১ বছর। তিনি এখন স্ক্রিনরাইটার হিসেবে কাজ করেন।
রেহ্যাম খান (Reham Khan)
পাক চিকিৎসক রেহ্যাম খানের (Reham Khan) পরিচিতি ছিল সাংবাদিক এবং ফিল্ম প্রোডিউসার হিসাবে। ইংরেজি, পুস্তু, উর্দু, হিন্দি চার ভাষাতেই সমান পারদর্শী ছিলেন তিনি। ৪১ বছরের রেহ্যামকে বিয়ের প্রস্তাব দেন ইমরানই। হার্টথ্রব ফ্ল্যামবয়েন্ট ও স্টাইলিশ ক্রিকেটারের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া রেহ্যাম (Reham Khan) ইমরানের প্রস্তাবে না করেননি। ৬ জানুয়ারি, ২০১৫ দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন ৬২ বছরের ইমরান (Imran Khan)। তবে ১০ মাসের মধ্যেই রেহ্যামে মোহভঙ্গ হয় পাক ‘প্লেবয়’ ইমরান খানের৷
বুশরা বিবি (Bushra Bibi)
ইমরানের ‘হ্যাটট্রিক উইকেট’ এই বুশরা মানেকা (Bushra Bibi) হলেন ওয়াটোর বাসিন্দা। ইমরান যখন বুশরাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তখন তিনি গুছিয়ে ছেলে-মেয়ে সংসার করছেন। বুশরার আগের স্বামী ফরিদ একজন ইসলামাবাদের কাস্টমস অফিসার। বুশরা বিবি (Bushra Bibi) না কি ঘর-সংসার সামনে তন্ত্র-মন্ত্র চর্চা করতেন। ইমরান খান (Imran Khan) তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্বের কুর্সির জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কিন্তু কোনও ভাবেই রাজনীতিতে সফল হতে পারছিলেন। তাই শেষ পর্যন্ত নিজের ভাগ্য জানতে তন্ত্র-মন্ত্রের সাহায্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পাক প্লেবয়। এরপরই বুশরা মানেকার (Bushra Bibi) সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে যায় ইমরান খানের। বুশরা না কি ইমরান খানের গ্রহ-নক্ষত্র দেখে বলেন, খুব শিগগিরই ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবেন। তবে সেজন্য তাঁকে একটি কাজ করতে হবে। আর কাজটি হল বুশরা মানেকাকে (Bushra Bibi) বিয়ে করে জীবন সঙ্গিনী করতে হবে। হ্যাঁ, বুশরা মানেক ইমরানের ভাগ্য দেখতে গিয়ে নিজের ভাগ্যও বদলানোর সুযোগ দেখতে পান।
এরপর আর দেরি না করেন ইমরান বুশরাকে বিবি (Bushra Bibi) বানিয়ে ফেলেন। এবং সত্যি সত্যিই ইমরান খানও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান। তবে ইমরান খান (Imran Khan) বুশরা বিবির তন্ত্র-মন্ত্রের জেরে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন না কি পাক ফৌজের দয়ায়, সে নিয়ে পাকিস্তানে আজও জোর তর্ক-বিতর্ক চলে। পাকিস্তানে ফের ভোটের সময় চলে এসেছে। বর্তমান পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ (Shehbaj Shariff) লাগাতার চেষ্টা করছেন ইমরান খান যাতে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে ফিরতে না পারেন। পাক ফৌজও না কি চাইছে, ইমরান খানকে (Imran Khan) আর নয়। কিন্তু ইমরান খান এখনও বুশরা বিবিকে নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন। অনেকে বলছেন, বুশরা বিবির তন্ত্র-মন্ত্রের জেরেই না কি ইমরান খান পাক ফৌজের একাংশের বিরুদ্ধে রীতিমতো জিহাদ ঘোষণা করে বসে আছেন। তাছাড়া, বুশরা বিবির তন্ত্র-মন্ত্রের জেরেই না কি পাকিস্তানের বেশির ভাগ মানুষের দিল জয় করে বসে আছেন ইমরান খান।
ফলে বুশরা বিবিকে ছেড়ে ইমরান (Imran Khan) অন্যদিকে মুখ ঘোরাবেন এমন সম্ভাবনা খুবই কম। অন্তত ফের বিয়ে করবেন এমন সম্ভাবনা কম। কিন্তু তা বলে প্লেবয় ইমরান খান চুপ করে বসে নেই। কিছুদিন আগেই ইমরান খানের বেশকিছু অডিও লিক হয়েছে। যেখানে পাক প্লেবয় ইমরান খানকে (Imran Khan) পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন উঠতি অভিনেত্রীর সঙ্গে গভীর রাতে রতিক্রিয়ার রসালাপ করতে শোনা গেছে। সে নিয়ে দিন কয়েক পাকিস্তানে ছি ছি হলেও পাকিস্তানের মানুষ ঘুরে-ফিরে ইমরান খানকেই (Imran Khan) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইছেন। এর পিছনে বুশরা বিবির তন্ত্র-মন্ত্র-জাদুই কাজ করছে কি না – সে কথা কে বলবে।