মঙ্গলবার, নভেম্বর 19, 2024
মঙ্গলবার, নভেম্বর 19, 2024
HomeভারতGeorge Soros: মোদীর বিরুদ্ধে আমেরিকান ধনকুবের জর্জ সোরাসের এত রাগ কেন?

George Soros: মোদীর বিরুদ্ধে আমেরিকান ধনকুবের জর্জ সোরাসের এত রাগ কেন?

- Advertisement -

তথাগত সিংহ

এই মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতিতে হাঙ্গেরিয়ান বংশোদ্ভূত আমিরাকন শিল্পপতি জর্জ সোরাসকে (George Soros) নিয়ে বিতর্ক চলছে। বিতর্কের বিষয় হল আদানি শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের সু-সম্পর্ক। যে সম্পর্কের পিছনে অনেকে ‘দাল মে কুছ কালা’ দেখতে পান। কিছুদিন আগে পর্যন্ত আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) কিংবা তাঁর দল তৃণমূলের নেতারাও এনিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে (PM Narendra Modi) গালমন্দ করতেন। কিন্তু ইদানিং একমাত্র তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra) ছাড়া তেমন আর কেউ মুখ খোলেন না। কারণ, যে আদানির সম্পত্তি আর উত্থানের পিছনে নরেন্দ্র মোদীকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়ী করতেন, শেষ পর্যন্ত বাংলার তাজপুর গভীর সমুদ্রবন্দরে (Tajpur Deep sea Port) সেই আদানিরাই বরাত পেয়েছে। আর তার কিছুদিন পরেই আদানি গোষ্ঠীর (Adani) বিরুদ্ধে তাঁদের সংস্থার শেয়ারের দাম নিয়ে লুকোছাপা করার অভিযোগ উঠেছে। যে আমেরিকান সংস্থা এই অভিযোগ তুলেছিল, বাস্তবে দেখা গেছে সেই সংস্থা আসলে নিজেই শেয়ারের ব্যবসা করে কোটি কোটি ডলার মুনাফা অর্জন করে। এবং শুধুমাত্র আদানির বিরুদ্ধেই শেয়ারের দাম লুকোছাপার অভিযোগ তুলে তারা ফায়দা তোলেনি। বিশ্বের আরও বহু দেশের শেয়ার মার্কেটেও (Share Market) তারা একই খেলা খেলে নিজের পকেট ভরিয়েছে। সেই সংস্থার বিরুদ্ধে আদানিরা এরইমধ্যে আইনি লড়াইয়ে নেমেছে। অভিযোগ, ভুঁয়ো খবর ছড়িয়ে আদানির শেয়ারের (Adani Share) দামে পতন ঘটিয়ে তার থেকে ফায়দা লুট করায় ছিল ওই আমেরিকান সংস্থার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু সেই আইনি লড়াইয়ের হেস্তনেস্ত হওয়ার আগেই দেখা গেল আরেক আমেরিকান শেয়ার ব্যবসায়ী ধনকুবের মোদী আর আদানির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে গেলেন। আর সেই ভদ্দরলোকেরই নাম হচ্ছে জর্জ সোরস (George Soros)।

জর্জ সোরস ঠিক কি বলেছেন

এই জর্জ সোরস (George Soros) বৃহস্পতিবার জার্মানির মিউনিখে নিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মঞ্চ থেকে প্রশ্ন তুলেছেন , কেন আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে মোদী এখনও নীরব? ৯২ বছরের সোরসের কথায়, ‘‘মোদী এবং বিজনেস টাইকুন আদানি খুবই ঘণিষ্ঠ। এবং তাঁদের লক্ষ্যও প্রায় একই ধরনের। মোদী চুপ করে রয়েছেন। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জবাবদিহি করতে মোদীর সংসদে মুখ খোলা উচিত।’’ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর উচিত-অনুচিতের ব্যাপারে নাক গলিয়ে এখানেই থেমে থাকেননি আমেরিকান ভদ্রলোক। তিনি তাঁর বক্তব্যে আরও যোগ করেছেন, ‘‘হতে পারে আমি আমার দেশের হয়ে কথা বলছি, কিন্তু আমার মনে হয় ভারতের গণতন্ত্রে বদলের প্রয়োজন রয়েছে।’’ সোরসের (George Soros) বক্তব্যের সঙ্গে আমাদের দেশের মোদী বিরোধীদের বক্তব্য একেবারে হুবহু মিলে যাচ্ছে। এই আমেরিকান ‘শেয়ার দালাল’দের মতই ভারতের বিজেপি বিরোধী দলগুলি বেশ কয়েকদিন আদানিদের সম্পত্তি ডুবে যাওয়া নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবিতে কাজকর্ম সব শিকেয় তুলে রেখেছিল। তাদের অভিযোগ ছিল, আদানিরা আসলে মোদীর আস্কারাতেই একের পর এক বেনিয়ম করে সম্পত্তি বাড়াচ্ছে। যদিও বিরোধীদের এমন দাবিকে মোটেও পাত্তা দেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi)। তিনি এসবের তোয়াক্কা না করে নিজের মতো করেই কাজ করে গেছেন। তারপরই বিবিসির দফতরে আয়কর আধিকারিকদের তল্লাশি শুরু হতেই বিরোধীরা আদানিকে ছেড়ে বিবিসিকে (BBC) নিয়ে মরাকান্না শুরু করেন। কিন্তু ভারতের বিরোধীদলের নেতারা আদানিকে (Adani) ছাড়লেও সোরসের মতো আমেরিকান ‘শেয়ার দালাল’রা মোদীকে ছাড়তে নারাজ। তাঁরা ক্ষেপে রয়েছেন, কেন মোদী জবাব দিচ্ছেন না। কিন্তু তাঁরা একবারও একথা বলছেন না, যে আমেরিকান সংস্থা আদানিদের বিরুদ্ধে বেনিয়মের অভিযোগ করে কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা করল, তাদের বিরুদ্ধে কেউ তদন্ত করবে কি না? আদানিদের বিরুদ্ধে যেমন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন পাশাপাশি যারা অভিযোগ করে কোটি কোটি ডলারের মুনাফা ঘরে তুলেছে তাদের বিরুদ্ধেও তো সমান তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সেটার কথা কিন্তু কেউ বলছেন না।

জর্জ সোরস আসলে কেমন ব্যবসায়ী

এবার আসা যাক এই জর্জ সোরসের (George Soros) সম্পর্কে। এই ব্যক্তি আদতে ইউরোপিয়ান হলেও পয়সাওয়ালা ছিলেন না। তিনিও অনেকের মতো আমেরিকায় এসে কম পরিশ্রমে পয়সাওয়ালা হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। এবং শেয়ার মার্কেটে সফল হন। এক সময় শেয়ারের ব্যবসা করে প্রায় ৪৫-৫০ বিলিয়ন ডলারের মালিকও হয়ে যান। শেয়ারের ব্যবসা করে কেউ পয়সাওয়ালা হল, কোটিপতি হল – তাতে কারও কোনও আপত্তি থাকতে পারে না। কিন্তু এই জর্জ সোরসের মতো শেয়ার ব্যবসায়ীরা সোজাপথে ব্যবসা করেন না। এঁদের এতটাকা যে এরা যে কোনও দেশের শেয়ার মার্কেটে ধ্স নামাতে পারে। তৃতীয় বিশ্বের যে কোনও দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এবং এটা শুধু কথার কথা নয়, প্রায় বছর ১২ আগে এই জর্জ সোরসকেই (George Soros) এক আমেরিকান টিভি চ্যানেলের সাক্ষাতকারে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমি যখন ব্যবসা করতে নামি তখন আমার কারণে কোন দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, কোন দেশের কোম্পানি লাটে উঠে যাচ্ছে – সে সব আমি দেখি না। সে সব দেখলে ব্যবসা হয় না। আমি শুধু এতটুকু খেয়াল রাখি আমি যা করছি তাতে আমার দেশ আমেরিকার ভালো হবে কি না। আমেরিকা বেঁচে থাকলে আমার আর কিছু দেখার দরকার পড়ে না।’’ এবং জর্জ সোরস (George Soros) একথা বলা নয়, সিঙ্গাপুর, মালেশিয়ার মতো কয়েকটি দেশের অর্থনীতিকে সত্যি সত্যিই তাঁর শেয়ার ব্যবসার মাধ্যমে ধসিয়ে দিয়েছিল। তারপরই ওই টিভি সাক্ষাতটি নেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ পরিষ্কার কথায়, আমেরিকা কিংবা আমেরিকার ব্যবসায়ীরা নিজেদের মুনাফার জন্য পৃথিবীর যে কোনও দেশের অর্থনীতিকে যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। নিজেদের ব্যবসার লাভের জন্য প্রয়োজনে কমজোর অর্থনীতির কোনও দুর্বল দেশের সরকার ভাঙা গড়ার খেলাও খেলে।

জর্জ সোরসের গোপন খেলা

কিন্তু জর্জ সোরসের মতো লোকেরা এই খেলা খেলতে শুধু ব্যবসায়ী সেজে বসে থাকেন না। তাঁদের সমাজসেবীর মুখোস পড়তে হয়। আর সেই কারণেই জর্জ সোরস (George Soros) তাঁর বেশির ভাগ সম্পত্তি দিয়ে একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন খুলেছেন। আর সেই সংগঠনটির নাম হচ্ছে ‘ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন’ (open society foundation)। নিজের কাছে ৫-৬ বিলিয়ন ডলার রেখে বাকি ৪০-৪৫ বিলিয়ন ডলার এই সংস্থার নামে জমা দিয়ে আবার নিজেই সংস্থার মালিক সেজে বসে আছেন এই জর্জ সোরাস। তা এই ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের কাজ কি জানেন? ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের ওয়েব সাইট খুললেই দেখা যাবে, বড়বড় করে লেখা রয়েছে, ‘‘ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন (open society foundation) প্রাণবন্ত এবং অভ্যান্তরীন সরকার গড়তে সাহায্য করে। যে সরকার তার দেশের নাগরিকদের জন্য দায়বদ্ধ থাকে।’’ বুঝুন ঠ্যালা। কোন দেশ কেমন সরকার নির্বাচন করবে, সেটা তো সেই দেশের জনতা ঠিক করবে। সে দেশের ভোটের ফল ঠিক করবে। তুমি মাঝখান থেকে পয়সাওয়ালা হয়ে সেই দেশের কোন সরকার গড়বে হে? আসলে ওই যে আগেই বলেছি, যে দেশে মনে হবে ঠিকমত ব্যবসা হচ্ছে না, আমেরিকার লাভ হচ্ছে না – ভোটে জিতে আসা সরকারকে দে ফেলে। তারপর টাকার জোরে বিরোধীদের উস্কে দিয়ে সাহায্য করে এমন সরকার খাড়া কর যে সরকার আমেরিকার স্বার্থে কাজ করবে, আমেরিকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করবে। সারাবিশ্বে এমনই গণতন্ত্র চাইছেন জর্জ সোরসের (George Soros) মতো ‘শেয়ার দালালরা’। আর তাঁদের উদ্দেশে বড় বাগড়া দিচ্ছেন আজকালকার উঠতি ভারতীয় কোটিপতি গৌতম আদানির মতো লোকেরা। একে তো ভারতীয়, তারওপর ভারতের হয়ে সারাবিশ্বে অতিগুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর থেকে শুরু করে কয়লাখনি সবই দখলে করে ফেলছে। জর্জ সোরসদের মতো আমেরিকান ব্যবসায়ীদের পিছনে ফেলে বিশ্বের তৃতীয় ধনীব্যক্তি হয়ে যাচ্ছে। কালো চামড়ার এমন ক্ষমতা সাদা চামড়ার ব্যবসায়ীরা সহ্য করবে কেন? অতএব দাও ব্যাটাকে টেনে নীচে নামিয়ে। তাও যদি না পার, বল মোদীই পিছন থেকে কলকাঠি নেড়ে আদানিকে সাহায্য করছে। তাই দরকারে ভারতে ‘প্রাণবন্ত’ গণতন্ত্র আনতে মোদীকেও সরাতে হবে।

ভারতের বিরুদ্ধে জর্জ সোরস

তবে সেই কাজটি তো আর জর্জ সোরস (George Soros) তাঁর ৯২ বছরে ভারতে নিজে এসে করবেন না। সেটা তাঁকে করতে হবে ভারতের যাঁরা মোদী বিরোধী রয়েছেন, যে সব মোদী বিরোধী দল রয়েছে – তাঁদের কোটি কোটি ডলার ডোনেশনের লোভ দেখিয়ে, ঘুষ দিয়ে। বিরোধীদের কাছেও ব্যাপারটা এক্কেবারে দুই হাতে দুই লাড্ডুর মতো ব্যাপার। একদিকে ক্ষমতা পাওয়া যাবে, অন্যদিকে পার্টি ফান্ডে ডলার ঢুকবে – সুতরাং গৌতম আদানি আর মোদীর ষড়যন্ত্র নিয়ে যদি গলা ফাটাতে হয়, ভারতের হাফ শিক্ষিতদের ভুল বোঝাতে হয় – মন্দ কি! এতে শুধু নেতা-মন্ত্রীদের একাংশই জড়িয়ে রয়েছেন, এমনটা কিন্তু নয়। এই খেলায় সমাজসেবী নামের পরজীবী এবং সংবাদ মাধ্যম নামের ঢোলবাজানোদেরও বড় একটা অংশ চোরে চোরে মাসতুতো ভাইয়ের মতো গলা ধরে জড়াজড়ি করে রয়েছে। সুতরাং এমন খেলা যাতে ব্রিটিশ কিংবা আমেরিকান ব্যবসায়ীরা আর ভারতে খেলতে না পারেন, গণতন্ত্রের অধিকারের নামে ভারতের মানুষকে টুপি পরাতে না পারেন, সেজন্য সরকারের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে এই জর্জ সোরসের মতো ভদ্দরলোকের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হয়েছে। সবার আগে সরব হতে দেখা গিয়েছিল কেন্দ্রীয়মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি প্রত্যেক ভারতীয়কে জর্জ সোরোসকে (George Soros) উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’’ এরপরই মুখ খুলেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (S Jaishankar)। তিনি স্পষ্টভাষায় জানিয়েছেন, “মিস্টার সরস এক জন বুড়ো, বড়লোক এবং একগুঁয়ে ব্যক্তি। উনি এখনও মনে করেন যে, তাঁর কথাতেই গোটা বিশ্ব চলবে। আসলে এই সব লোকজন মনে করেন জনমত তৈরি করতে তাঁরা পরিশ্রম করছেন।” কিন্তু কেন্দ্রীয় দুইমন্ত্রীর এমন মন্তব্যকে নিয়ে আমাদের কিছু মিডিয়ায় এরইমধ্যে তির্যক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। আমেরিকান ব্যবসায়ী জর্জ সোরসের (George Soros) বক্তব্য এবং ইচ্ছাকে ‘যুক্তিসঙ্গত’ ঠেকাতে আর্টিক্যালের পর আর্টিক্যাল ছাপা হচ্ছে। কিন্তু সেই আর্টিক্যালে জর্জ সোরসের গোপন খেলার কথা কেউ লিখছেন না।

আরও খবর
- Advertisment -

সবাই যা পড়ছেন

পছন্দের খবর