HomeবিদেশPakistan Economical Crisis 2023: পাকিস্তানের দেউলিয়া হওয়ার পিছনে কি ভারতের হাত রয়েছে

Pakistan Economical Crisis 2023: পাকিস্তানের দেউলিয়া হওয়ার পিছনে কি ভারতের হাত রয়েছে

- Advertisement -

এই মুহূর্তে প্রতিবেশি পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমন উত্তাল, তেমনই আর্থিক দশাও Pakistan Economical Crisis 2023 খুবই খারাপ। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে পাকিস্তানের (Pakistan) নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা গরিব মানুষ দু’বেলা রুটি পর্যন্ত পেটভরে খেতে পারছেন না। আটার দাম কিলো প্রতি ২৫০ রুপিতে পৌঁছে গিয়েছে। সেই সঙ্গে আকাশ ছুঁয়েছে দেশের মুদ্রাস্ফিতি। যার জেরে এখন কাঁচা সব্জি থেকে শুরু করে আটা, ডাল, চিকেন, গোস্ত – সবকিছুরই দাম আকাশ ছোঁয়া। নিত্য প্রয়োজনীয় প্রত্যেকটি জিনিসের দামই প্রায় ৩ থেকে ৫ গুণ বেড়ে গিয়েছে।

পাকিস্তান ও আইএমএফ (Pakistan and IMF)

এই পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করছেন পাকিস্তান (Pakistan) এরইমধ্যে শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) মতো দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা একথা বললেও পাকিস্তানের নেতারা একথা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, পাকিস্তান এখনও দেউলিয়া হয়নি। শুধু ডলারের অভাব দেখা দিয়েছে। কিছু ডলার হাতে পেলেই পাকিস্তান ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সেজন্য পাকিস্তানের (Pakistan) তরফে আন্তর্জাতিক অর্থ প্রদানকারী সংস্থা আইএমএফের কাছে জোর আর্জি জানানো হয়েছে। সম্প্রতি আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল পাকিস্তানে এসে বেশ কয়েকদিন থেকে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকও করে গিয়েছে। কিন্তু তারপর একেবারে চুপচাপ হয়ে গিয়েছে।

পাকিস্তান আইএমএফের কাছে এখন পর্যন্ত ২৩ বার গিয়েছে। কিন্তু শেষবার আইএমএফের (IMF) কাছে ডলার চাইতে গিয়েছিল ইমরান খানের সরকার। কথা হয়েছিল, পাকিস্তান (Pakistan) এবার আইএমএফের কাছ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলারের মতো ঋণ নেবে। কিন্তু আইএমএফের কাছ থেকে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার পর আচমকাই ইমরান খানের সরকার শর্তভঙ্গ করতে শুরু করে। যার জেরে আইএমএফ বাকি ১ বিলিয়ন ডলার দিতে অস্বীকার করে। তারই মাঝে পাকিস্তানে সরকার বদল হয়।

পাকিস্তানের রাজনীতি (Political Situation of Pakistan)

সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ইমরান খানের সরকার ফেলে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসানো হয় নওয়াজ শরিফের ভাই শেহবাজ শরিফকে (Shahbaz Serif)। কিন্তু শেহবাজ পাকিস্তানের (Pakistan) কুর্সিতে বসেই বুঝতে পারেন, এদেশ চালাতে গেলে ডলার লাগবে। কেননা, পাকিস্তানের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে জমানো ডলার প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। দেরি না করে শেহবাজ শরিফ সারাবিশ্বে ডলার চাইতে শুরু করে করেন। প্রত্যেকটি দেশের সরকারের কাছে গিয়ে বলতে শুরু করেন, কিছু ডলার যাতে পাকিস্তানকে (Pakistan) ধার হিসেবে দেওয়া হয়। কিন্তু কোনও দেশই পাকিস্তানকে ডলার দিয়ে সাহায্য করতে রাজি হয়নি। এমনকী, যে আমেরিকা কিংবা মুসলিম দেশগুলি এতদিন খোলা হাতে পাকিস্তানকে কোটি কোটি ডলার দান করে দিত, তারাও হাত গুটিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।

পাকিস্তানের অর্থনীতি (Pakistan Economy)

এরইমধ্যে পাকিস্তানের মড়ার ওপর খাড়ার ঘায়ের মতো বন্যা আসে। যে বন্যায় পাকিস্তানের প্রায় ৩ ভাগের ১ ভাগ ডুবে যায়। বন্যার জেরে পাকিস্তানের অবস্থা আরও সঙ্গিন হয়ে দাঁড়ায়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ (Shahbaz Serif) আরও একবার ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বিভিন্ন দেশের কাছে ডলার ভিক্ষা করতে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু এবার কিছু ডলার যোগাড় হলেও অন্য দেশের নেতারা জানিয়ে দেন, এই ডলার পাকিস্তান সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হবে না। বরং সরাসরি এই ডলার বন্যাদুর্গতদের হয়ে যেসব সংস্থা কাজ করছে – তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এদিকে পাকিস্তানের ডলারের রিজার্ভ (Pak Reserve) কমে ৩ বিলিয়নে ঠেঁকে যায়। যারমধ্যে ৪ বিলিয়ন ডলার সৌদি আরবের (Saudi Arabia) এই শর্তে দেওয়া ছিল যে যখনই সৌদি আরব পাকিস্তানের কাছে এই ডলার চাইবে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফেরত দিতে হবে। কিন্তু পাকিস্তান সেও ডলারও খরচ করে বসেছে।

পাকিস্তান ও চিন (Pakistan and China)

এদিকে, যে চিনকে পাকিস্তান (Pakistan and China) বন্ধুত্বের সম্পর্কে হিমালয়ের থেকে উঁচু, সমুদ্রের থেকে গভীর আর মধুর থেকেও বেশি মিষ্টি বলে মনে করত, সেই চিন চুপি চুপি তার সব কর্মকান্ড পাকিস্তান থেকে গুছিয়ে নিতে শুরু করে। পাশাপাশি যে সিপেক (CPEC) প্রজেক্টের জন্য পাকিস্তানকে প্রায় ৫২ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়ে চিন নিজের পকেটে পুরেছিল – সেই প্রজেক্টও মাঝপথে বন্ধ করে দেয় চিন। শুধু তাই নয়, চিন তার আগেও পাকিস্তানকে প্রায় ১০-১২ বিলিয়ন ডলারের মতো ঋণ দিয়েছিল। পাকিস্তানের এই দুরবস্থার মাঝে সেই ডলারও চাইতে শুরু করে। এবং বেশকিছু ডলার প্রায় জোর করে নিয়েও নিয়েছে। যে কারণে পাকিস্তানের রিজার্ভ ব্যাঙ্কে রাখা সৌদি আরবের ৪ বিলিয়ন ডলারে হাত মারতে হয়েছে পাকিস্তানের শেহবাজ শরিফের সরকারকে।

এই পরিস্থিতিতে শেহবাজ শরিফের (Shahbaz Serif) সরকার যেনতেন প্রকারেণ আইএমএফের ১ বিলিয়ন ডলারের দিকে চেয়ে বসে রয়েছে। কেননা, কিছু দেশ এই শর্তে পাকিস্তানকে কিছু ডলার ধার দিতে রাজি হয়েছে যে আইএমএফ যদি ঋণ দেয় তাহলে তারাও ঋণ দেবে। তাই এখন পাকিস্তানের পাখির চোখ আইএমএফের ১ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আইএমএফও বুঝে গিয়েছে, পাকিস্তান আসলে কী খেলা খেলছে। আর সেই কারণে পাকিস্তানকে ডলার দেওয়ার আগে কঠিন শর্ত মানতে বলেছে।

পাকিস্তানের মিনি বাজেট (Pakistan Mini Budget)

পাকিস্তান আইএমএফের (IMF) সেইসব কঠিন শর্ত মেনে এরইমধ্যে দেশে মিনি বাজেট পেশ করেছে। যার ফলে পাকিস্তানে তেলের দাম, বিদ্যুতের দাম আরও কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু আইএমএফের (IMF) সব শর্ত মেনে নেওয়ার পরেও ১ বিলিয়ন ডলার এখনও পাকিস্তানের হাতে না আসায় সে দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তাল হতে শুরু করেছে। শেহবাজ শরিফের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইমরান খান লাগাতার পাকিস্তানের মানুষকে উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইমরান খান (Imran Khan) দাবি করেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী না হলে পাকিস্তান ভেঙে ৩ টুকরো হয়ে যাবে। সুতরাং যে করেই হোক পাকিস্তানের মানুষকে ইমরান খানকে (Imran Khan) প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি দিতেই হবে। প্রয়োজনে এরজন্য জেহাদের ঘোষণাও করে বসে আছেন ইমরান খান। পালটা শেহবাজ শরিফের সরকার ইমরান খানের একের পর এক সহযোগীকে ধরে জেলে পুরছে। এমনকী ইমরান খানকেও কী করে জেলে পোরা যায় সেজন্য লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইমরান খানের অনুগামীরা লাগাতার ২৪ ঘণ্টা ইমরান খানের পাহারা দিচ্ছেন বলে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।

পাকিস্তানি ফৌজ (Pak Army)

ওদিকে, পুরো খেলা চুপচাপ দেখছে পাকিস্তান ফৌজ। এতদিন ফৌজের ইশারাতেই পাকিস্তানে একের পর এক সরকার বদল হয়েছে। ইমরান খানকে ৪ বছর আগে পাকিস্তানের ক্ষমতায় নিয়ে আসার পিছনে এই পাক ফৌজেরই হাত ছিল। কিন্তু মাঝখানে বনিবনা না হওয়ায় পাক ফৌজ (Pak Army) ইমরান খানের সরকারকে সময়ের আগেই ফেলে দিয়েছে। এবং সেই জায়গায় শেহবাজ শরিফকে ক্ষমতায় এনেছে। কিন্তু পাকিস্তানের আর্থিক পরিস্থিতি যতই খারাপ হচ্ছে, পাক ফৌজ (Pak Army) ততই তার দায় ঘাড় থেকে নামাচ্ছে। পাক ফৌজ প্রধান নিজেও বেশকিছু দেশের কাছে গিয়ে ডলার ভিক্ষা চেয়েছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। পাক ফৌজ প্রধানের কথাও কোনও মুসলিম দেশ রাখতে হয় নি। এই পরিস্তিতিতে পাকিস্তানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক পরিস্থিতি একেবারে ধুলোয় মিশতে বসেছে।

পাকিস্তানের দুর্দশার কারণ ভারত (Pakistan and India)

আর কিছু বুঝতে না পেরে এই সমস্ত কিছুর পিছনে ঘুরে ফিরে ভারতকেই দায়ী করছেন পাকিস্তানের মানুষ। এনিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিও উস্কানি দিচ্ছে। পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন – ভারতের সঙ্গে দুশমনির কারণেই আজ পাকিস্তানের এই অবস্থা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) কারণেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী (Pak PM) থেকে শুরু করে পাক ফৌজ প্রধানকে বিশ্বের দরবারে ভিক্ষার পাত্র নিয়ে ডলার ভিক্ষা করতে হচ্ছে। তাছাড়া, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি পুরনো ভিডিতেও দেখা গিয়েছে, তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিতে গিয়ে বলছেন – ‘‘হামনে পাকিস্তান কি হ্যাকরি নিকাল দি। পাকিস্তান কো দোর দোর পে ভিখ মাঙ্গনে মজবুর কর দি।’’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (PM Narendra Modi) এই ভাষণকেই এখন পাকিস্তানের মানুষ তাঁদের দুর্দশার আসল কারণ বলে মনে করছেন। তাঁরা মনে করছেন, ভারত পাকিস্তানকে ভেঙে ৩ টুকরো করে দিতে চাইছে। পাক ফৌজকে (Pak Army) দুর্বল করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

আসল কথা (Main Reason)

কিন্তু বিশ্বের অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা একটি কথায় বলছেন, আজ পাকিস্তানের (Pakistan Economy) যে দুর্দশা হয়ে তার জন্য দায়ী পাকিস্তান নিজেই। পাকিস্তান শুরুর দিন থেকেই ভারতের সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে দুশমনি নিয়ে ভুল করেছে। তাছাড়া, কাশ্মীরের (Kashmir) মুসলমানদের নামে পাকিস্তান এতদিন গোটা দুনিয়া থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার যে চাঁদা আদায় করেছে, তা এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই পাকিস্তানের অর্থনীতি (Pakistan Economy) ধ্বসে গেছে। সেই সঙ্গে রয়েছে চিনের চাল। চিনকে পাকিস্তান বন্ধু ভেবেছিল। কিন্তু চিন যে আসলে বন্ধুত্বের আড়ালে পাকিস্তানকে ঋণের জালে বেঁধে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছে সেকথা এখনও পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষ বুঝেও বুঝতে চাইছেন না। ফলে ঘুরে-ফিরে ভারতকে দোষারোপ করা ছাড়া পাকিস্তানের মাথায় আর কিছুই আসছে না।

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -