বোলপুর – বীরভূমের জন্য যাতে ‘সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙে’র রণকৌশল নিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দল পরিচালনার জন্য কোর কমিটিও রাখা হল সেই সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলকেও তাতে সামিল করে ‘অভিভাবক’ বানিয়ে দেওয়া হল। ব্যস, বলতে গেলে অনুব্রত তিহার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বীরভূম তৃণমূলে যে জগা-খিচুড়ি পাকিয়েছিল তার সমাধান হয়ে গেল। শনিবার বীরভূমে অনুব্রত-কাজলদের বৈঠকের নির্যাস বলতে এইটুকুই।
এদিন নেত্রীর নির্দেশে বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খেল। খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তৃণমূলের কোর কমিটিকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল-কাজল শেখরা। আর ঘণ্টা দেড়েকের বৈঠকের পর সকলেই একবাক্যে জানালেন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন কমিটির সাত সদস্য।
অনুব্রতর তিহার জেলে থাকার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি করে দেওয়া কোর কমিটি ছিল ৬ সদস্যের। শনিবার তাতে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকেও অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়ায় সদস্য সংখ্যা দাঁড়াল সাতে। তাঁকে ‘অভিভাবক’ বলে উল্লেখ করে দ্বন্দ্বের গুঞ্জন ওড়ালেন কাজল শেখ। আর কোর কমিটির আহ্বায়ক তথা বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী জানালেন, জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। এতদিন পর তিনি জেলায় ফিরেছেন। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে কাজে এগোবে কোর কমিটি।
যাঁর সঙ্গে অনুব্রতর দীর্ঘকালীন দ্বন্দ্ব নিয়ে জেলার অন্দরে এত জল্পনা, জেলা পরিষদের সভাতিপতি সেই কাজল শেখ হাসিমুখে জানালেন, উনি অভিভাবক। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলবেন সকলে। বৈঠক শেষে কোর কমিটির অন্যান্য সদস্যরা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রতিক্রিয়া দিলেও অনুব্রত মণ্ডল এনিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। কোর কমিটির পরবর্তী বৈঠক হবে ১৫ ডিসেম্বর। প্রতি মাসেই একবার করে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বীরভূমের তৃণমূল নেতৃত্ব। সমস্ত বৈঠকে হাজির থাকার কথা অনুব্রত মণ্ডলের।
এদিন বৈঠকের পর কাজল শেখকে বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেল। জেলার পার্টি অফিসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন, ”উৎসবের মরশুম শেষে আমরা বৈঠকে বসলাম। খুব ভালোভাবে আলোচনা হয়েছে। আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জেলা সংগঠনের কাজ করব। ছাব্বিশে বিধানসভা নির্বাচন। জেলায় ভালো ফলাফলের জন্য সকলে একসঙ্গে ঝাঁপাব। কীভাবে কাজ হবে, তা আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।”
এর পর অনুব্রত প্রসঙ্গ উঠতেই কাজল শেখ জানান, ”উনি আমাদের অভিভাবক। আমার রাজনৈতিক গুরু। উনি যেভাবে বলবেন, আমরা সবাই চলব।” পরে কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীর বক্তব্যেও একই সুর। তিনি আবার কটাক্ষের সুরে বললেন, ”অনুব্রত-কাজল নিয়ে অনেক গান হচ্ছিল। আজ স্পষ্ট হয়ে গেল, তাঁদের মধ্যে কখনও কোনও দ্বন্দ্ব ছিল না, নেইও। আমরা সবাই একসঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকব।”
কিন্তু কাজল শেখ যতটা এদিন ফুরফুরে মেজাজে বৈঠক থেকে বেরোলেন, অনুব্রত মণ্ডল পারলেন কি? রাজনৈতিক কারবারিরা মনে করছেন, কোর কমিটির বৈঠকে কেষ্টকে ঢুকিয়ে আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘুরিয়ে ডানা ছাঁটার কাজটা সেরে নিলেন। আর কাজল শেখ কাটা ঘায়ে মলম লাগিয়ে সেটাকেই বানিয়ে দিলেন ‘অভিভাবক’।
বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডল যে আর তাঁর পুরনো জায়গা ফিরে পাবেন না সেটা আজ একেবারে জলের মতো পরিস্কার হয়ে গেল। অনেকের মতে, এরপিছনে আসলে অভিষেক ব্যানার্জীই আসল খেলাটা খেললেন। শুধু অনুব্রতর ওপর ভরসা করে যে দল চালনা ঠিক হবে না, সেটা নেত্রীকে একমাত্র তিনিই বোঝাতে পেরেছেন। তাই এদিনের মিটিংয়ে অনুব্রতকে কোর কমিটির একজন করে নেওয়া হল।