কলকাতা – রাজ্যপাল কার? মানে রাজ্যপাল কোন দিকে ঝুকে থাকবেন? শাসকদলের দিকে না কি বিরোধীদের দিকে? এই প্রশ্ন গত কয়েকমাস ধরেই বাংলার রাজ্য রাজনীতিতে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু সোমবার এই প্রশ্নই নতুন মাত্রা পেল যখন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপাল ইস্যুতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বিধানসভায় বিঁধলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগে এদিন বিধানসভায় বলতে উঠে শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যপাল প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘রাজ্যপালের ভাষণের সঙ্গে একমত নই। ওই ভাষণে অসত্য তথ্য ছিল… রাজভবন থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। তাতে রাজ্যপালের মনের ভাব প্রকাশ পেয়েছে এবং তথ্য দিয়ে আশ্বস্ত করেছেন।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘বিজেপির তরফে যে যে বিষয় তুলেছিলাম, তাতে তিনি সম্মত। লোকায়ুক্তকে অনুমোদন দেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বদল নিয়ে বিলে অনুমোদন দেবেন না বলে জানিয়েছেন।’’
এখানেই থেমে না থেকে শুভেন্দু অধিকারী সাংবাদিক বৈঠক করে একথাও বলেন, ‘‘রাজ্যপালের অফিস কখনই মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের মতো হওয়া উচিত নয়। রাজ্যপালকে ভুল পথে পরিচালনা করছেন মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপালের প্রধান সচিব, মুখ্যসচিব। আমরা মনে করি, গোপালকৃষ্ণ গান্ধী এবং জগদীপ ধনখড়ের দেখানো পথে চলা উচিত রাজ্যপালের।’’ আর শুভেন্দু অধিকারীর এমন দাবিতেই রীতিমতো বিধানসভায় মেজাজ হারাতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
শুভেন্দুর ওই মন্তব্যের সূত্র ধরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিধানসভার ভাষণে ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘‘বলছে, রাজ্যপালকে না কি গ্রিপে এনেছেন! উনি কি রাজ্যপালের উপেদেষ্টা?’’ অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যেই স্পষ্ট, শুভেন্দু অধিকারী যা দাবি করেছেন তা তিনি মানতে নারাজ। হয় তিনি শুভেন্দু অধিকারীর কথা বিশ্বাস করছেন না, নয়তো এমনটা হয়ে গেছে জেনে তিনি রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে কটাক্ষ করছেন। আর সেটাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এদিনের যে বক্তব্য, সেই বক্তব্যের মধ্যে ফুটে উঠেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আসলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে ঘণ্টা দু‘য়েক বৈঠক করার পরই যেভাবে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ‘পাল্টি’ মেরেছেন, তা নিয়ে এই মুহূর্তে বঙ্গ রাজনীতি তোলপাড়। যে রাজ্যপাল দিন কয়েক আগেও মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন, হাতেখড়ি পর্যন্ত নিয়েছিলেন, তিনিই কি না বিজেপির রাজ্য সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করার পরই রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রীকে দুর্নীতির ইস্যুতে রাজভবনে তলব করে বসলেন! শুধু তাই নয়, রাজভবনের সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীকে পর্যন্ত বদলির সুপারিশ নবান্নর কাছে পাঠিয়ে দিলেন!
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বেশ বুঝতে পারছেন রাজভবনে কিছু একটা ঘটেছে। রাজ্যপালের সঙ্গে কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু তার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে যেভাবে তিনি রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে বিধানসভায় সরাসরি আক্রমণ করে বসলেন, এবং ‘তিনি না কি রাজ্যপালকে গ্রিপে এনেছেন’ বলে কটাক্ষ করলেন, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর মনের অবস্থা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের এই যে মন্তব্য, তার মধ্যে দিয়ে একথা প্রমাণ হয়ে গেল না তো যে সত্যি সত্যিই এতদিন রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর ‘গ্রিপে’ ছিলেন। এবং ‘দিল্লির নির্দেশে’র পর এবার সুকান্ত-শুভেন্দুদের ‘গ্রিপে’ চলে এলেন?