নয়াদিল্লি – সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে পাঁচদিনের বিশেষ অধিবেশন। আর সেই অধিবেশনের ঠিক আগে সর্বদল বৈঠক ডাকল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। আগামী রবিবার (১৭ অগস্ট) সংসদ ভবনে ওই বৈঠক হবে। সর্বদল বৈঠকে সংসদের বিশেষ অধিবেশনের আলোচ্যসূচি সম্পর্কে আভাস মিলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বিশেষ অধিবেশন। পাঁচ দিনের এই অধিবেশন চলবে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সূত্রের খবর, ১৯ সেপ্টেম্বর, অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন নতুন সংসদ ভবনে অধিবেশন বসবে। ওই দিনই গণেশ চতুর্থী। তাই তিথি-নক্ষত্র দেখেই নাকি ওই দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে নরেন্দ্র মোদী সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত সে বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। সর্বদল বৈঠকে তার আঁচ দেওয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিরোধী নেতাদের একাংশ মনে করছেন, সংসদের বিশেষ অধিবেশনে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ প্রণয়ন এবং সংবিধান সংশোধন করে ‘ইন্ডিয়া’ নাম ছেঁটে ফেলে শুধু ‘ভারত’কে স্বীকৃতি দেওয়ার বিল পাশ করানোর চেষ্টা করবে মোদী সরকার। তাঁদের মতে, লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির এই ‘ভারত-ভক্তি’র প্রচার আরও বাড়বে। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল, তিন তালাক প্রথা রদ, অযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণের পরে ‘ইন্ডিয়া বনাম ভারত’ এবং ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ পদ্মশিবির প্রচারের মূল অভিমুখ করতে পারে। বিশেষ অধিবেশন চলাকালীনই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে গঠিত ‘এক দেশ এক ভোট’ সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশও প্রকাশ্যে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
সংসদের বিশেষ অধিবেশনে ন’টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে গত সপ্তাহে চিঠি দিয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী। ওই ন’টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য সময় বরাদ্দ করার আর্জিও জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে। তবে আর্জি জানানোর পাশাপাশি, সরকারকে নিশানা করে চিঠিতে বলা হয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা না করে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। এর ফলে সংসদে কোন বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হবে, সে বিষয়ে বিরোধী দলগুলি ‘অন্ধকারে’ বলেও প্রাক্তন কংগ্রেস সভানেত্রীর অভিযোগ।
সনিয়ার প্রস্তাবিত ন’টি বিষয়ের মধ্যে রয়েছে মূল্যবৃদ্ধি, মণিপুর সঙ্কট, এমনকি আদানি বিতর্ক। পাশাপাশি, জাতগণনা বিতর্ক, ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি)-র দাবিতে রাজ্য রাজ্যে কৃষকদের আন্দোলন, হরিয়ানা-সহ কয়েকটি রাজ্যে সাম্প্রতিক গোষ্ঠীহিংসা নিয়েও বিশেষ অধিবেশনে আলোচনার দাবি জানানো হয়েছে। তবে বিরোধীদের এমন দাবি মেনে এই বিষয়গুলি নিয়ে আদৌ এই বিশেষ পাঁচদিনের অধিবেশনে আলোচনা হবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, সনিয়া গান্ধীর এমন চিঠিকে ভোঁতা করে দিতেই এই সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকার। বিরোধীরা যদি এই বৈঠকে হাজির হয় আর তারপর যদি সনিয়ার চিঠিতে উল্লেখ করা বিতর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে বিশেষ অধিবেশনে আলোচনা না হয় – তাহলে বিজেপি বলতে পারবে – যা আলোচনা হয়েছে তা বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা করেই হয়েছে।