মঙ্গলবার, ডিসেম্বর 24, 2024
মঙ্গলবার, ডিসেম্বর 24, 2024
Homeখবরআওয়ামী লীগ মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করতেই হাসিনাকে ‘রেড নোটিশ’ ইউনূস সরকারের

আওয়ামী লীগ মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করতেই হাসিনাকে ‘রেড নোটিশ’ ইউনূস সরকারের

- Advertisement -

ঢাকা – আমেরিকায় পালা বদল হতেই কিছুটা মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছিল আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশে পালা বদলের পর আজ রবিবার প্রথম কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল শেখ হাসিনার দল। মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ঢাকায় শহিদ নূর হোসেন চত্বর থেকে প্রতিবাদ মিছিল ডেকেছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। মিছিল শুরুর কথা ছিল ভারতীয় সময় দুপুর আড়াইটেয়। কিন্তু সেই মিছিল হতেই দিল না পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দাবি, এই কর্মসূচির জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে, পরিস্থিতি বুঝে পালটা পথে নামলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তাঁদের তরফেও গণজমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছিল রবিবার। আওয়ামী লীগ যেখান থেকে মিছিল শুরু করার কথা ছিল, তার থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরেই দুপুর ১২টা নাগাদ শুরু হয়েছিল গণজমায়েত। ভিড়ও হয়েছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারিজস আলমেরা উপস্থিত ছিলেন সেখানে। হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠতে দেখা গিয়েছে গণজমায়েতের মঞ্চ থেকে।

রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণজমায়েত কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে আওয়ামী লীগকে দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। জনগণ ক্ষমা করলে তবেই তারা রাজনীতি করতে পারবে। তবে সবার আগে গণহত্যার জন্য তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

এদিন দুপুর ১২টার আগেই শিক্ষার্থীরাও জমায়েত হতে শুরু করেন। তাঁরাও স্লোগান দিতে শুরু করেন – ‘এক হয়েছে বাংলাদেশ, ফ্যাসিবাদের দিন শেষ’, ‘হত্যাকারী, স্বৈরাচারী, শেখ হাসিনার গলায় দড়ি’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দিব রক্ত’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধরে ধরে জেলে ভর’ প্রভৃতি।

গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী বলেন, ‘১৫ বছর দুঃশাসন চালিয়ে আওয়ামী লীগ আবার বাংলার মাটিতে রাজনীতি করতে চায়। তারা নূর হোসেনকে ব্যবহার করে ফিরতে চায়। তারা কি ক্ষমা চেয়েছে? বাংলার মাটিতে আর কোনও ফ্যাসিবাদকে জন্মাতে দেবেন না। পৃথিবীর যে প্রান্তেই ফ্যাসিবাদ জন্ম নিক, সেখানেই বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের গল্প বলতে হবে। পৃথিবীর কোনো ফ্যাসিবাদী সরকার ফিরতে পারেনি। তাঁরা দুঃসাহস দেখাচ্ছে। বাংলার মাটিতে তাদের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। যদি জনগণ ক্ষমা না করে, তাহলে তাদের রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।’

মেহেদী সজীব বলেন, ’৯১–এর গণ–অভ্যুত্থানকারীদের সঙ্গে বেইমানি করা হয়েছে। কিন্তু ’২৪-এর শহীদ ছাত্র-জনতার সঙ্গে তাঁরা বেইমানি করতে চান না। ’২৪-এর শহীদদের রক্ত নিয়ে কাউকে খেলতে দেওয়া হবে না। যারা এখনো বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের চেষ্টা সফল হবে না। ছাত্র-জনতা মাঠে আছে, তারা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে মাঠে লড়াই করবে। এই বাংলাদেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে দেওয়া হবে না।

মাসুদ রানা বলেন, ‘আমরা বাকশালকে মানি নাই, হাসিনার ফ্যাসিবাদকেও মানি নাই। শহীদ নূর হোসেন কারও বাপের সম্পত্তি না, নূর গণতন্ত্রের প্রতীক। সব গণতন্ত্রের প্রতীককে আওয়ামী লীগ তার বাপ-দাদার সম্পত্তি বানিয়েছিল। এই বাপ-দাদার সম্পত্তিকে এখন তারা সবার সম্পত্তি করে তুলছে। তাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রশ্নে সবাই এক। আওয়ামী লীগ প্রশ্নে কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো বিভেদ নেই। জুলাই এখনো শেষ হয়নি। কিন্তু এখন তারা বলছে, ভয়ংকর হয়ে তারা ফিরবে। এই সমর্থকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়াই করতে হবে। আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমা না চায়, এই গণহত্যার দায় নিতে না চায়, এই বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগকে চায় না জনগণ।’

রবিবারের আগে সবপক্ষের প্রস্তুতি

মার্কিন যুক্তরাজ্যে পালা বদলের পর বাংলাদেশে যে পুরনো সরকারের সমর্থকরা মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করবে, সেটা ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ঠিকই বুঝতে পেরেছিল। তাই শনিবার থেকেই শুরু হয়েছিল পুলিশি ধরপাকড়। ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের ১০ জন সমর্থককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। আমেরিকার হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি-সহ প্ল্যাকার্ডও পাওয়া গিয়েছিল তাঁদের থেকে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক নষ্টের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছিল। যদিও ধৃতের নাম-পরিচয় উল্লেখ করেনি পুলিশ।

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে ঢাকা-সহ সে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি)-র ১৯১টি প্ল্যাটুন মোতায়েন করা হয়েছিল।

মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম উপদেষ্টা সজীব ভুঁইয়া সরকারের অবস্থানও স্পষ্ট করে দেন। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, “গণহত্যাকারী কেউ কর্মসূচি করার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে।”

আত্মগোপন থেকে বাড়ি ফিরতেই গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা

এদিকে ফেনীতে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল করিম গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন। গত শুক্রবার শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। খবর পেয়ে গতকাল শনিবার রাতে পুলিশ তাঁর বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে নির্দিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

আবদুল করিমের নামে কোনো মামলা ছিল না বলে জানান তাঁর স্বজনেরা। তিনি শারীরিকভাবেও অসুস্থ ছিলেন বলে জানান তাঁরা। তবে কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

আবদুল করিমের পাশাপাশি গতকাল রাতে ফেনী শহর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের আরও ১৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ রোববার তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

পুলিশ জানায়, গতকাল রাতে ফেনী পৌরসভার শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কসংলগ্ন হাজী ইমাম বক্স লেনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল করিমকে (৬৫) গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার বাকিরা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী বলে জানা গেছে।

গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল করিমের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো মামলা নেই বলে জানান ফেনী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইকবাল হোসেন। তবে আসামি হিসেবে একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

ফেনী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল করিমসহ মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, তাঁদের আজ আদালতে পাঠানো হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ

এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সাক্ষাৎ করেছেন।

আজ রবিবার রাজধানী ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এই তথ্য জানিয়েছে।

শেখ হাসিনাকে ধরতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ‘রেড নোটিশ’

জুলাই-আগস্টের গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ বিদেশে পলাতকদের ধরতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ‘রেড নোটিশ’ জারি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংস্কারকাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে গিয়ে আজ রোববার এ কথা বলেন আসিফ নজরুল।

আইন উপদেষ্টা বলেন, বিশ্ব জনমতকে বিভ্রান্ত করতে নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে আবেদন করা হয়েছে।

আইসিসিতে দেওয়া আওয়ামী লীগের অভিযোগ অন্তর্বর্তী সরকার আমলে নিচ্ছে না বলে জানান আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, দেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করতেই সরকারের বিরুদ্ধে আইসিসিতে অভিযোগ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অভিযোগটি কোনোভাবেই গৃহীত হওয়ার কারণ নেই।

আইন উপদেষ্টা বলেন, এটা কোনো মামলা নয়। এটা আইসিসির প্রসিকিউশন অফিসকে একটা পিটিশন লিখে জানানো। এটা পৃথিবীর যেকোনো মানুষ করতে পারে। এটা এতই অবিশ্বাস্য ও বস্তুনিষ্ঠতাহীন একটা মামলা যে কোনোভাবেই এই রিট হওয়ার কোনো কারণ নেই। এটা ফ্যাসিস্ট চক্র বিশ্ব জনমতকে, বাংলাদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য ও আত্মরক্ষার জন্য মিথ্যা প্রচারণার চালানোর উপায় হিসেবে করেছে।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, সরকারের নির্দেশনা পেলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারে যুক্ত হচ্ছেন আরও কয়েকজন উপদেষ্টা

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে আরও কয়েকজন উপদেষ্টা যুক্ত হচ্ছেন। তবে কতজন উপদেষ্টা যুক্ত হচ্ছেন, সেটা ওই সূত্র নিশ্চিত করতে পারেনি। শুধু বলেছে, একাধিক উপদেষ্টা আজ শপথ নিতে পারেন। এদিকে উপদেষ্টাদের শপথের জন্য পাঁচটি গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টাসহ এই সরকারের সদস্যসংখ্যা এখন ২১।

আরও খবর
- Advertisment -

সবাই যা পড়ছেন

পছন্দের খবর