দেবা রায়
গত ৪ ও ৫ মার্চ চন্দননগর রবীন্দ্রভবনে চন্দননগরের দীর্ঘদিনের একটি নাট্যদল ‘নানামুখ’ (Chandannagar Nanamukh) আয়োজন করেছিল দুই দিনের নাটকের উৎসব। যেখানে মোট পাঁচটি নাটকের উপস্থাপনা ছিল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসূচীতে ছিল অনাড়ম্বর অথচ আন্তরিকতার ছোঁয়া। প্রথমে মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয় নাট্যকার বারীন চক্রবর্তী, নাট্যকার অলোক ভট্টাচার্য, আর স্বতন্ত্র নাট্যদলের নির্দেশক শ্যামল চক্রবর্তী মহাশয়দের। এরপর তাঁদের সম্বর্ধনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়।
নাট্যকারদের এইভাবে সম্মান জানানোটা নি:সন্দেহে এক বলিষ্ঠ ভাবনা। এরপর নাট্যকার বারীন চক্রবর্তী সংক্ষেপে কিছু মূল্যবার কথা মনে করিয়ে দিলেন। বারীনবাবু দিল্লী নিবাসী। দিল্লীতে তাঁর নিজস্ব দলও আছে।
বর্তমানে তাঁর বেশ কিছু নাটক বাংলার কিছু নাট্যদল অভিনয় করছেন। সমাজ বাস্তবতার ভাবনায় তার নাটকগুলি ভীষণ আধুনিক এবং প্রাসঙ্গিক। বারীনবাবু বলেন – নাটক তো অনেক হচ্ছে, কিন্তু দর্শক সেইভাবে হচ্ছে না’। এই উৎসবে দ্বিতীয়দিনে শেষে যে নাটকটি অভিনীত হয়েছে সেটি বারীন চক্রবর্তীর লেখা ‘স্বীকারোক্তি’।
পরবর্তী বক্তা নাট্যকার অলোক ভট্টাচার্য তিনিও নাট্যমোদী মানুষের কাছে নাটক দেখার আহবান জানান। তিনি বলেন- ‘দর্শক কেন আসছে না সেটা বিচার করা দরকার। দর্শকের সাথে আমাদের সম্পর্ক আরও নিবির করতে হবে।’ প্রথমদিন যে নাটকটি আয়োজক সংস্থা নানামুখে (Chandannagar Nanamukh) প্রযোজনা করেছেন সেটি নাট্যকার অলোক ভট্টাচার্যেরই রচনা।
এরপর সম্মান জানানো হয় স্বতন্ত্র নাট্যদলের অভিনেতা ও নির্দেশক শ্যামল চক্রবর্তী মহাশয়কে। শ্যামল চক্রবর্তী বলেন- ‘চন্দননগর নাট্যচর্চার পীঠস্থান। এই অঞ্চলের নাট্যভাবনা বা প্রযোজনা যথেষ্ট উচ্চমানের, কিন্তু কলকাতায় দেখাবার সুযোগ খুবই কম।’
চন্দননগরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেন। মন্তব্য করে বলেন, ‘যে সব নাট্যকাররা নাটক লেখেন তাদেরকে সেইরকম সম্মান দেয়া হয় না। নাট্যকাররা জানতেই পারেন না, দল তাদের নাটক করছেন, নাট্যকারের নাটককে নিজের মতো করে নির্দেশক এডিট করে নিচ্ছেন, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্যামলবাবু। নাট্যকারকে নূন্যতম সম্মান জানাও উচিত বলেই।মনে করেন
প্রথম দিনের প্রথম নাটক ব্যান্ডেল নান্দনিক প্রযোজিত অভিতাভ চক্রবর্তীর লেখা ‘যুদ্ধের পর’, যাঁর পরিচালনা’য় ছিলেন সমীরণ সমাদ্দার। নাটকটির উপস্থাপনা বেশ ভালো। দ্বিতীয় প্রযোজন ‘আতংকের শেষ প্রহর’ যার নির্দেশনায় ছিলেন আয়োজক গোষ্ঠী নানামুখের প্রাণপুরুষ শান্তি রঞ্জন ভট্টাচার্য। এই নাটকের অনবদ্য উপস্থাপনা দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের আয়োজন।
এরপর দ্বিতীয় দিনে প্রথম নাটক ছিল যাদবপুর ব্যতিক্রমের প্রযোজনায় মণি মুখোপাধায়ের ‘গণতন্ত্র ও গোপাল কাহার’ অবলম্ববে নাটক ‘চার অক্ষর’ যার পরচালনায় ছিলেন দেবা রায়। এরপর রাজডাঙ্গা দ্যোতক প্রযোজিত নাটক ‘ দ্বিখন্ডিত’ শৌভিক সেনগুপ্তের রচনায় ও শুভাশীষ ভট্টাচার্যের নির্দেশনায়। উৎসবের শেষ ও অন্তিম নাটক নানামুখেরই প্রযোজনায় ‘স্বীকারোক্তি’ যার নির্দেশনায় দলের কর্ণধার শান্তি ভূষণ ভট্টাচার্য।
এই দুদিনে চন্দননগরের নাট্যমোদি মানুষেরা যথা সময়ে নাট্যমঞ্চে পৌঁছেছেন এবং নাটক দেখেছেন। যাদের জন্য নাটকের উৎসবের তাঁরা এলেই আয়োজন সার্থক হয়। সেই দিকে থেকে নি:সন্দেহে নানামুখের এই আয়োজন সার্থক।