আগরতলা – সকাল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের ভোটদান পর্ব। মোট ২৮ লক্ষ ত্রিপুরাবাসী রাজ্যের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন। বিধানসভাব নির্বাচনের ফল প্রকাশ হবে আগামী ২ মার্চ। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত যা খবর, এখন পর্যন্ত ভোট পড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশের কাছাকাছি। ত্রিপুরার ৬০ আসনে এবার ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। একদিকে জোট বেঁধেছে কংগ্রেস ও রাজ্যের প্রাক্তন শাসক দল সিপিআইএম, অন্যদিকে শাসক দল বিজেপিও ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াই করছে। প্রতিবেশী রাজ্যে নিজেদের জায়গা করে নিতে মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেস। নির্বাচনী লড়াইয়ে সামিল রয়েছে তিপ্রা মথাও। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে নজরকাড়া প্রার্থীরা হলেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা মানিক সাহা, উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী এবং কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন।
ভোটদানের আর্জি জানালেন প্রধানমন্ত্রী
এদিন ভোটদান শুরুর আগে ত্রিপুরাবাসীর উদ্দেশে টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। টুইটে তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের এই উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য ত্রিপুরার সমস্ত মানুষদের আবেদন জানাচ্ছি। বিশেষ করে রাজ্যের যুব প্রজন্মকে ভোট দেওয়ার আর্জি জানাচ্ছি।”
এখন পর্যন্ত কত ভোট পড়েছে
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিম ত্রিপুরায় সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৪.৫৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। ধলাইতে পড়েছে ১৩.৬২ শতাংশ, গোমতীতে ১২.৯৯ শতাংশ, খোয়াইয়ে ১৩.০৮ শতাংশ। উত্তর ত্রিপুরায় এবং দক্ষিণ ত্রিপুরায় ভোট পড়েছে যথাক্রমে ১২.৭৯ শতাংশ এবং ১৪.৩৪ শতাংশ। এরপর সকাল ১১টা পর্যন্ত ত্রিপুরায় ভোট পড়েছে প্রায় ৩২.১১ শতাংশ। তবে এরই মাঝে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর এসেছে। এক সিপিআই কর্মী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
আসছে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর
অশান্তির খবর পাওয়া যাচ্ছে শান্তিবাজার এবং পুরনো আগরতলার নাথপাড়া এলাকা থেকে। অভিযোগ, শাসকদল বিজেপি অন্যদলের কর্মী-সমর্থকদের মারধর এবং ভোটারদের ভোটদানে বাধা দিয়েছে। এর জেরে পথ অবরোধ করে প্রতিবাদে শামিল হন বিজেপি বিরোধী ভোটাররা। শান্তিবাজারে সিপিআই কর্মীকে মারধর করা হয়েছে বলে খবর। এই ঘটনায় পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করেছে। পাশাপাশি এক জখম বাম কর্মীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে খবর। উল্লেখ্য, শান্তিরবাজার নিয়ে গতকালই জাতীয় নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছিল বামেরা।
নির্বাচন কমিশন কী বলছে
যদিও ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, বিক্ষিপ্ত কিছু অশান্তির খবর পাওয়া গেলেও ত্রিপুরায় ভোটদান পর্ব নির্বিঘ্নেই চলছে। তবে এখনও পর্যন্ত শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে কমিশনে। তিনি আরও জানান, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত অপ্রীতিকর কোনও ঘটনার খবর নেই বলে দাবি করেন তিনি।
Gomati | BJP MP CM Biplab Deb cast his vote for #TripuraElection2023 today.
He says, “We don’t see any election as big or small. Public is supreme & it’s our duty to respect them. They gave us power in 2018 & despite COVID, we worked in all sectors of state. People know this.” pic.twitter.com/PtGMl2LcPG
— ANI (@ANI) February 16, 2023
নির্বাচন কমিশন সূত্রে আরও খবর, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় সব রকমের পদক্ষেপ করা হয়েছে। যদিও বিরোধী বাম-কংগ্রেস জোট এবং তৃণমূলের তরফে শাসক বিজেপির বিরুদ্ধে বুধবার থেকেই ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ তোলা হয়েছে।
প্রাক্তন বাম মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বক্তব্য
এদিকে, আগরতলায় ভোট দিলেন ত্রিপুরা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। রাজ্যজুড়ে বিক্ষিপ্ত অশান্তির মাঝেই নিজের বুথে গিয়ে ভোটদান করেন মানিকবাবু। নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগের পর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বাম নেতা মানিক সরকার সংবাদ মাধ্যমের সামনে অভিযোগ করেন, সিপিএমের অনেক দলীয় কর্মী এদিন বিজেপি কর্মীদের হাতে মার খেয়েছেন।
Agartala, Tripura | LoP and former CM Manik Sarkar casts his vote in Assembly elections#TripuraElection2023 pic.twitter.com/IccUvDEUne
— ANI (@ANI) February 16, 2023
শান্তিপূর্ণ ভোট চাই, বললেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা
এদিন সকালে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ ভোট চাই। সাধারণ মানুষ আমাকে প্রশ্ন করছেন যে আমার সামনে কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে? চ্যালেঞ্জটা হল কংগ্রেস ও বামের জোট বেঁধেছে, এই জোট যেন শান্তি বজায় রাখে। আমি আমার দলের কর্মীদের বলেছি, ওরা (বিরোধীরা) প্ররোচনা দেবেই, ওদের কথায় পা দেবেন না৷ নির্বাচন কমিশন গোটা বিষয়টি দেখছে৷”
#TripuraElection2023 | We want peaceful voting. People ask me what is the challenge before me? The challenge is that the rivals (Congress-Left) that have come together in an unholy alliance should maintain peace: Tripura CM and BJP’s Town Bordowali candidate, Manik Saha pic.twitter.com/FrXyioA4tX
— ANI (@ANI) February 16, 2023
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৩৬টি আসনে জিতে গরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল বিজেপি। জোটসঙ্গী আইপিএফটি পেয়েছিল ৮টি আসন। মাত্র ১৬টি আসনে জয়ী হয়েছিল বামেরা। এবারের নির্বাচনে ৬০টি আসনের মধ্যে ৪৬টিতে লড়ছে বামেরা। জোটসঙ্গী কংগ্রেস লড়ছে ১৩টি আসনে। একটি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে নির্দল প্রার্থীর জন্য। মোট ২৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।