মঙ্গলবার, ডিসেম্বর 3, 2024
মঙ্গলবার, ডিসেম্বর 3, 2024
HomeUncategorizedUnemployment: বেকারত্ব কি, সফল হওয়ার গোপন রহস্য - পর্ব ১

Unemployment: বেকারত্ব কি, সফল হওয়ার গোপন রহস্য – পর্ব ১

- Advertisement -

বেকার (unemployed) শব্দটার সঙ্গে আমরা সকলেই পরিচিত। এবং বেকারত্ব (Unemployment) দূর করতে গেলে কি করা প্রয়োজন, এটা প্রায় সকলেই জানে। যে বেকার, সে নিয়েও জানে বেকারত্ব ঘোঁচাতে গেলে তাকে কী করতে হবে। কিন্তু তারপরেও বেকারত্বের (Unemployment) জ্বালা দিন কে দিন বেড়েই চলেছে। বেকারের সংখ্যা প্রত্যেক বছরেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বেশিরভাগ মানুষই মনে করে বেকারত্ব মানেই হল পড়াশোনা করার পর যদি কেউ কোনও চাকরি না পায়। যার চাকরি নেই সেই বেকার। কিন্তু সত্যি কি তাই? চাকরি না পেলেই কি জীবন ব্যর্থ হয়ে যায়? এর আরও একটা ব্যাখ্যা রয়েছে। যাঁরা আবার সফল বড় ব্যবসায়ী, শিল্পপতি – তাঁদের মতে যাঁরা চাকরি করে দিন কাটান তাঁদের জীবন ব্যর্থ। অর্থাৎ একেক জনের কাছে জীবনের সফলতার একেক মানে রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই বেকারত্বেরও একেক জনের কাছে একেক ব্যাখ্যা রয়েছে। সত্যিই বেকারত্ব কী, কিভাবে সেই বেকারত্বকে দূর করা যায় – সে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতেই এই আর্টিকেল। প্রথমেই আসা যাক বেকারত্ব কি, এই প্রশ্নে।

বেকারত্ব (unemployment) 

বেকারত্ব বা বেকার শব্দটির ইংরেজি সাধারণভাবে ‘আনএম্প্লয়েড’ (unemployment)। যার সরল মানে করলে দাঁড়ায়, যাকে কোনও কাজে রাখা হয়নি। কে কাজে রাখেনি? হতে পারে কোনও ব্যক্তি, হতে পারে কোনও পরিবার, আবার এটাও হতে পারে সরকারি, বেসরকারি কোনও সংস্থায় যাকে কোনও কাজ দেয়নি সেই ‘আনএম্প্লয়েড’ (unemployment)। মোদ্দা কথায়, যাকে কেউ কাজের যোগ্য বলে মনে করেনি, তাকেই বলে বেকার।

বেকারত্বের সংজ্ঞা (Definition of unemployment)

সাধারণভাবে অবশ্য বেকারত্বের একটি সংজ্ঞা আছে। সেটি একটু অন্যরকম। বেকারত্বের সংজ্ঞা হল, ‘‘বেকারত্ব একটি সামাজিক ব্যাধি অথবা সংকট। ইংরেজি আনএমপ্লোয়মেন্ট (Unemployment) শব্দটি থেকে বেকারত্ব শব্দটি এসেছে। একজন মানুষ যখন তার পেশা হিসেবে কাজ খুজে পায় না তখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয় তাকে বেকারত্ব বা বেকার বলে।’’

বেকারত্ব কি (what is unemployment)

এরপরেও যদি বুঝতে অসুবিধে হয় যে বেকারত্ব কি, তাহলে আরও সহজ করে বলি, রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে বন্ধু তোমার যদি মনে হয়, আজ খাওয়া-হাগা-মুতা আর চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়া ছাড়া কোনও কাজ নেই, কোথাও যাওয়ার নেই, কারো সঙ্গে দেখা করার ব্যাপার নেই, কাউকে কিছু বলার নেই, কাউকে কিছু শেখানোর নেই, কোনও দায় নেওয়ার নেই, কাউকে কোনও জবাবদিহি করার ব্যাপার নেই – তাহলেই বুঝবে তুমি একজন প্রকৃত বেকার। যাকে এই দুনিয়ার কারোর দরকার নেই, যে না হলে রোজকার সাংসারিক জীবনে কারও কোনও প্রভাব পড়ে না।

বেকারত্বের কারণ কি (unemployment)

সবার আগে আমরা বেকারত্বের জন্য হয় সরকার, নয়তো নিজের বাবা-মা, পরিবেশ-পরিস্থিতি, দুর্নীতি, প্রতিযোগিতা কিংবা নিদেনপক্ষে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে দায়ী করি। কিন্তু একথা আমরা কখনও তলিয়ে দেখিনা, অন্যরা বেকারত্ব কাটাচ্ছে কী করে? সবাই কি সরকারি চাকরি করছে কিংবা সরকারি চাকরির ওপর ভরসা করে বসে রয়েছে? সবাই কি পয়সাওয়ালা পরিবারে সোনার চামচ নিয়ে জন্ম নিয়েছে? সবাই কি ভালো স্কুলে পড়েছে? সবাই কি টাকাঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছে? মোটেও না। তাহলে বেকারত্বের আসল কারণ কে? অবশ্যই মানুষ নিজে।

বেকারত্ব কাটানোর উপায় (Ways to overcome unemployment)

তোমাকে কয়েকটা বাস্তব সত্যিকথা বলব। কেন তুমি বেকার হয়ে পড়ে রয়েছে? কেন তুমি কোথাও কাজ পাচ্ছ না? কেন কোনও কাজে সফল হচ্ছ না? একবারও ভেবে দেখেছ কি এর পিছনে কোন গোপন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে? কেন তুমি একটি কাজ করতে গিয়ে বার বার অসফল হচ্ছ?

নিশ্চয় ভেবে দেখেছ। ভেবে দেখেও কোন কুলকিনারা পাওনি। তাই না? তুমি দেখেছ, তোমার চেষ্টায় কোনও ত্রুটি ছিল না। তুমি দেখেছ তোমার ভাবনায় কোনও ভুল ছিল না। তারপরেও তুমি ব্যর্থ। তুমি যেটা চাইছ – সেটা পাচ্ছ না। পরিবার, বন্ধুবান্ধব একসময় কেউ তোমাকে সাহায্য করছে না।

ধীরে ধীরে তুমি তলিয়ে যাচ্ছ। তলিয়ে যাচ্ছ ব্যর্থতার সমুদ্রে। ব্যর্থতার সমুদ্রের গভীরে। যেখানে তোমার ওপর সবাই বিশ্বাস হারাচ্ছে। আশা হারাচ্ছে। মা-বাবা পর্যন্ত মনে করছে, ‘‘নাহ – ছেলেটাকে এত পড়িয়ে লিখেয়ে কোনও কাজ হল না। জীবনে কিস্যু করতে পারল না।’’

বন্ধু, কেউ বলবে না, আমারা শিক্ষায় ভুল ছিল তাই আমার ছেলে ব্যর্থ। কেউ বলবে না, আমার শিক্ষায় ভুল ছিল তাই আমার ছাত্র ব্যর্থ। কেউ বলবে না আমারা প্রেমে খাদ ছিল, তাই আমার প্রেমিক ব্যর্থ। কেউ বলবে না আমার ভালোবাসায় ঘাটতি ছিল, তাই আমার ভাই ব্যর্থ।

সবাই শুধু বলতে তুমি ব্যর্থ তুমি ব্যর্থ তুমি ব্যর্থ। এবং একসময় তোমার নিজেরও মনে হবে – সত্যিই তো, আমি ব্যর্থ। আমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না। সরকারি চাকরি, বড় ব্যবসা তো দূরের কথা, একটা সাধারণ দোকান পর্যন্ত আমাকে দিয়ে চলবে না। এ দুনিয়া মেরে কাম কি নেহি। তারপর একদিন রাতে দড়ি হাতে নিয়ে বাগানে বেরিয়ে পড়বে। সকালে খবরের কাগজে দু লাইনে বেরোবে – রাজ্যে আরেক বেকারের আত্মহত্যা। ব্যাস ওই পর্যন্তই। নিজের লোকেরা দু‘দিন হা হুতাশ করবে। পাড়া পড়শিরা দু‘দিন তাদের বেকার ছেলে-মেয়েদের ভালো মন্দ খাওয়াবে। তারপর যে কে সেই। দুনিয়া নিজের মতো করে চলতে শুরু করবে। দু‘ চারমাস হয়তো লোকে তোমার নাম নেবে – ভালোবেসে নয়, এক ব্যর্থ লোক কী করে সেটার উদাহরণ দিতে।

এই রকম জীবন চেয়েছিলে তুমি? এভাবে মরতে চেয়েছিলে তুমি? তুমি কী এতটাই অপদার্থ? তোমার থেকে আতি-পাতিরাও তো জীবনে করে – কম্মে খাচ্ছে। ভালো করে নজর বোলাও – যে লোকটা তোমার থেকেও পড়াশোনায় খারাপ সে আজ সরকারি চাকরি করছে। আরও নজর ঘোরাও – যে লোকটা তোমার থেকেও অঙ্কে কাঁচা সে বড় ব্যবসায়ী। চোখ ঘোরাতে থাক – যে লোকটা তোমার থেকেও কুড়ে, সেও একটা দোকান চালিয়ে সফল। তুমি কেন ব্যর্থ? কেন তুমি হেরে যাবে? কেন শুধু শুধু এই দুনিয়াকে লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে দেবে?

লোকের কথায় নিজেকে ব্যর্থ না ভেবে, লোকের কথায় হতাশ না হয়ে, লোকের কথায় এদিক-ওদিক দৌঁড়াদোড়ি না করে, লোকের কথায় নেতাদের হয়ে ল্যাজ না নাড়িয়ে, বরং খুঁজে বের কর – কোথায় তোমার খামতি। কোথায় তোমার ভুল। কোথায় তুমি অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়ছ। একান্তে নিজেকে প্রশ্ন কর। ভাব। দরকার পড়লে একা একা মাঠে-ঘাটে গিয়ে ভাব। কেন অন্যরা সফল হয়ে যাচ্ছে, তুমি হচ্ছ না?

একদিন, দুদিন, তিনদিন চারদিন – দেখবে তুমি নিজে তিন ভাগে ভাগ হয়ে গেছ। তুমি আর শুধু তুমি নেই। তোমার মন, মাথা আর শরীর তিন ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। মন এক জিনিস চাইছে, মাথা এক কথা বলছে আর শরীর আরেক জ্বালায় জ্বলছে। তুমি তিন ভাগ হয়ে নিজেই নিজের সঙ্গে লড়ছ। মন, মাথা, শরীরের লড়াই আরও একজন বসে বসে দেখছে – সে তোমার আত্মা। তুমি তখন তোমার আত্মা হয়ে গেছ। নিজেই নিজের মন, মাথা আর শরীরের লড়াই দেখছ একটা আত্মা হয়ে।

লড়তে দাও। ওই তিন ব্যাটাকে লড়তে দাও। মন মাথা আর শরীরকে লড়তে দাও। খেয়াল রাখবে সেই লড়াইয়ে কেউ যেন বাধা না দেয়। তোমার আত্মা যেন আরামসে সেই লড়াই দেখতে পারে। এরজন্য চাই একান্ত। প্রকৃতির নির্জনতা। মন মাথা আর শরীর একসময় লড়তে লড়তে তোমার আত্মার কাছে বিচার চাইবে। বিচার চাইবে আত্মা কার সঙ্গে রয়েছে। কী চাইছে তোমার আত্মা? বন্ধু মনে রাখবে, এই আত্মা তোমাকে কখনও বলবে না তুমি ব্যর্থ, এই আত্মা তোমাকে কখনও বলবে না তুমি ভুল। এই আত্মা কখনও তোমাকে বলবে না তুমি পারবে না। এই আত্মা তোমাকে বলবে – তুমি সব কিছুই পারবে। তোমার দ্বারা সবকিছু হবে। এই আত্মা তোমাকে এটাও বলবে – তুমি অন্য কারোর থেকে কম কিছু নও। সময় অনেক নষ্ট হয়েছে, আর নয়।

এই আত্মাকেই বেছে নিতে দাও মন মাথা নাকি শরীর – কাকে সে বেছে নেয়। দেখবে, আত্মা মন মাথা শরীর সবাইকে এক হয়ে লড়ার কথা বলছে। একে অপরের বিরুদ্ধে নয়, একে ওপরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়ার কথা বলছে। লড়াই করতে বলছে এই পৃথিবীতে তৈরি কিছু মানুষের কৃত্রিম পরিস্থিতির সঙ্গে। যেদিন এই কাজটা করে ফেলতে পারবে – সেদিন মনে হবে মরলেও কোনও অসুবিধা নেই, কিন্তু মরার আগে লড়াইটা দরকার। লড়তে লড়তে বীরের মতো মরা দরকার। রাতের অন্ধকারে চুপি চুপি দড়ি হাতে লজ্জার মৃতু নয়, মরতে যদি হয়ই লড়াই করে গর্বের মৃত্যু দরকার।

আত্মাই তোমাকে বলবে, তুমি এমনিও মরবে, ওমনিও মরবে। মরবে সবাই। খেলার মাঠ ছাড়বে সবাই। কিন্তু মাঠ ছাড়ার আগে খেলাটা দেখাবে না? এই দুনিয়াকে তুমি বুঝিয়ে দেবে না, তুমি কত বড় খেলোয়াড়। দুনিয়ার কথা বাদ দিলাম, তুমি নিজের কাছে নিজে প্রমাণ করবে না?    (চলবে)

আরও খবর
- Advertisment -

সবাই যা পড়ছেন

পছন্দের খবর