আগরতলা – হাতিয়ার পুরনো। কিন্তু জায়গা নতুন। তাতে কি বাজিমাত হবে? সোমবার ত্রিপুরায় জনসংযোগের সময় আচমকা একটি দোকানে ঢুকে খাবার তৈরির চেষ্টা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেমনটা তিনি বরাবরই করে থাকেন পশ্চিমবঙ্গে। ত্রিপুরা সফরেও তার ব্যত্যয় হল না। আগরতলার একটি দোকানে ঢুকে সিঙাড়া তৈরি করতে শুরু করে মমতা। তারপর অন্য একটি দোকানে ঢুকে পান তৈরির চেষ্টা। সবটাই যেন ছকে সাজানো। আর এখানেই প্রশ্ন, পশ্চিমবঙ্গের এই পুরনো হাতিয়ারে কি এবার ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল বাজিমাত করতে পারবে?
এর আগে দার্জিলিঙে গিয়ে মোমো তৈরি করেছিলেন মমতা। গত বছর নভেম্বরে বেলাপাহড়ির কর্মসূচিতে গিয়ে শিলদার কাছে পথে গাড়ি থামিয়ে চপ বিক্রি করেছিলেন। এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে আগরতলায় রাস্তার পাশে একটি তেলেভাজার দোকানে ঢুকে সিঙ্গাড়া ভাজলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ ত্রিপুরা তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও। তৃণমূল সুপ্রিমো কেবল সিঙ্গাড়া ভেজে থেমে থাকেননি, একেবারে নিজে উদ্যোগ নিয়ে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মীদের চা, সিঙ্গাড়া খাওয়ার বন্দোবস্তও করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর একটি পানের দোকানে ঢুকে পানের খিলিও তৈরি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
সোমবার আগরতলা বিমানবন্দরে নেমে অবশ্য মমতা জানিয়ে ছিলেন, বাংলার থেকে ত্রিপুরাকে আলাদা ভাবে দেখেন না। আর তাই হয়তো ত্রিপুরায় জনসংযোগের সময়ও তা-ই মেনে চললেন। সন্দেহ নেই, ত্রিপুরার মানুষ এতে বেশ মজাও পেল। কিন্তু তৃণমূলের ঝুলিতে ভোট পড়বে কি?
অনেকেই বলছেন, ভোট পড়ুক বা না পড়ুক – আলাদা করে নজর কাড়তে অসুবিধা কী! এর আগে ত্রিপুরার কোনও রাজনৈতিক নেতা মমতার মতো করে জনসংযোগ করেন নি। ফলে এদিনের সিঙ্গাড়া ভাজা আর পানের খিলি সাজার মধ্যে নতুনত্ব আছে বৈ কি! তাছাড়া, আলাদা করে মিডিয়ার নজরে পড়া মানেই তো প্রচার। সেটাই তো তিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে করতে এসেছেন। ফলে মমতা ব্যানার্জী এদিন সিঙ্গাড়া ভেজে, পানের খিলি সেজে ১০০ তে ১০০ পেয়েছেন। আর যখন খোদ অমিত শাহ ত্রিপুরায়, তখন আলাদা করে নজর কাড়তে এধরনের কাজই তো করতে হবে। আর যাই হোক, অমিত শাহ তো আর সিঙ্গাড়া ভাজতে কিংবা পানের খিলি সাজতে পারবেন না। সুতরাং মাঠ একেবারে ফাঁকা।
প্রসঙ্গত, ১৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরায় ভোট। রবিবার সেখানে নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করেছেন তৃণমূল। এক দিন পর সেখানে গেলেন দলীয় নেত্রী মমতা। ইস্তাহারে ‘সবুজসাথী’, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তৃণমূল। চাকরি হারানো ১০ হাজার ৩২৩ জন শিক্ষককে আর্থিক সহায়তা, বর্ষীয়ান নাগরিকদের জন্য দুয়ারে দু’হাজার টাকা পৌঁছে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে এক্কেবারে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেওয়া হয়েছে।
যদিও তার পরে তৃণমূলকে ‘পরিযায়ী পাখি’ বলে কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। কিন্তু সেই কটাক্ষকেও ‘দিদি’র রাজনৈতিক রণকৌশলের ‘নকল’ বলে দাবি করছেন তৃণমূলের নেতারা। কেননা, এই ‘পরিযায়ী’ ইস্যুতেই তো বাংলায় মোদী-শাহদের ‘কাত’ করে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। সুতরাং এবারের ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে ‘দিদি’র হাতে যদি পুরনো হাতিয়ার হয়, তাহলে বলতে হয় বিজেপি জং ধরা হাতিয়ার নিয়ে মাঠে নেমেছে। এমনটাই দাবি তৃণমূলের নেতাদের।
অর্থাৎ, তৃণমূল এবং বিজেপি দুই দলের হাতেই ভোট প্রচারের তেমন কোনও গরম ইস্যু নেই। ফলে এখন দেখার ত্রিপুরা ভোটে পুরনো হাতিয়ারের ধার বেশি না জং ধরা হাতিয়ারের।