কলকাতা – আগ বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে হাই কোর্টে বড় বিপাকে পড়লেন কাঁথির তৃণমূল ছাত্রনেতা শুভদীপ গিরি। তিনি ভেবেছিলেন, নাবালিকাকে ধর্ষণের মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের বড় বেঞ্চে গেলে হয়তো ছাড় পাবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, তাতে তিনি আরও চাপে পড়ে গেলেন। সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের উপর হস্তক্ষেপই করল না প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট ভাষায় তৃণমূল ছাত্রনেতা শুভদীপ গিরিকে জানিয়ে দিল, তাঁকে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার সিঙ্গল বেঞ্চের আদেশই মানতে হবে। অর্থাৎ সিঙ্গল বেঞ্চ শুভদীপ গিরিকে আত্মসমর্পণের যে নির্দেশ দিয়েছে, তাতে ডিভিশন বেঞ্চ হস্তক্ষেপ করবে না। তবে হ্যাঁ, শুভদীপ গিরির যদি মনে হয় তাহলে প্রয়োজনে তিনি সিঙ্গল বেঞ্চে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাতে পারেন।
ঘটনা হল, চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি কাঁথি থানায় তৃণমূল ছাত্রনেতা শুভদীপ গিরির বিরুদ্ধে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়। অভিযোগ করেন নির্যাতিতার বাবা-মা। কিন্তু পুলিশি তদন্তে অসন্তুষ্ট ওই পরিবার হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। আশ্চর্যজনক ভাবে তার পর গত ১৯ জানুয়ারি মামলা দায়ের হয়। এদিকে, আদালত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার আদেশ দেয়। কিন্তু তারপরও শুভদীপকে পুলিশ গ্রেফতার না করায় পুলিশকে বিচারপতি রাজশেখর মান্থা ভর্ৎসনা তো করেন-ই, পাশাপাশি শুভদীপ গিরিকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন। কিন্তু হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের সেই আদেশ না মেনে তৃণমূল নেতা শুভদীপ গিরি সোজা ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করে বসেন। আর সেই মামলাতেই এদিন হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ শুভদীপ গিরিকে সিঙ্গল বেঞ্চের আদেশ মানতে বলেছে।
উল্লখ্যে, নির্যাতিতার বাবা-মায়ের যেটা অভিযোগ, শুভদীপ তাঁদের মেয়েকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করেন। মোবাইলে একান্ত মুহূর্তের বেশ কিছু ছবিও তুলে রাখেন। কিন্তু পরে তাঁদের মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হননি। যে কারণে মেয়েটি তাঁকে ওই সব একান্ত মুহূর্তের ছবি মোবাইল থেকে মুছে দিতে বলে। কিন্তু গত বছরের ১৪ অক্টোবর সেই ছবি মোছার অজুহাতে মেয়েটিকে দিঘার একটি হোটেলে ডাকেন তৃণমূল ছাত্রনেতা শুভদীপ গিরি। নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, সেখানেই তাঁদের কন্যাকে ধর্ষণ করেন শুভদীপ। এবং এই ঘটনার পর ১ নভেম্বর তাঁদের মেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু এনিয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেও তৃণমূল ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি কাঁথি থানার পুলিশ। তারপরই নির্যাতিতার বাবা-মা বাধ্য হয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দরজায় কড়া নাড়েন।