নয়াদিল্লি – একদিন আগেই আদানি ইস্যুতে কংগ্রেসের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে। এবং মঙ্গলবার দুর্নীতি ইস্যুতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অশালীন শব্দ প্রয়োগের অভিযোগও উঠেছিল তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে। আর তার ঠিক একদিন পরই লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের নিয়োগে দুর্নীতিকে হাতিয়ার করে শাসকদল তৃণমূলকে ধুয়ে দিলেন বিজেপির সাংসদ তথা রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar )। সংসদে (Parliament) তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানালেন, পশ্চিমবঙ্গে যা নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে তাতে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ডকেও জেলে যেতে হবে। অর্থাৎ নাম না করে তিনি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলযাত্রার হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন।
‘এদিন ঠিক কী বলেছেন সুকান্ত মজুমদার’
লোকসভায় বাজেট অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘বাংলার শিক্ষকরা একসময় গোটা বিশ্বে শিক্ষা প্রদান করতেন। আজ বাংলায় শিক্ষকের চাকরি বিক্রি করা হচ্ছে’। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী জেলে, উপাচার্য জেলে, আরও অনেককে যেতে হবে’। সুকান্তর দাবি, ‘তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ডকেও জেলে যেতে হবে’। তিনি বলেন, ‘মোদি সরকারের আমলে দুর্নীতি করলে শাস্তি হবেই’ লোকসভায় হুঁশিয়ারি বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের।
কী কান্ড করেছিলেন মহুয়া মৈত্র
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির ভাষণে ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাবের উপর লোকসভায় বক্তব্য চলাকালীন এই অসংসদীয় শব্দের প্রয়োগ করেন তৃণমূল সাংসদ। লোকসভায় নিজের বক্তব্য শেষে তাঁর আসনে বসেও পড়েন মহুয়া মৈত্র। এরপর বলতে ওঠেন টিডিপি সাংসদ কে রাম মোহন নাইডু। সেই সময়ই নাকি বিজেপি সাংসদ রমেশ ভিদুরিকে উদ্দেশ্য করে অসংসদীয় ভাষার প্রয়োগ করেন তৃণমূল সাংসদ। উল্লেখ্য, সেই সময় স্পিকার ওম বিড়লার অনুপস্থিতিতে লোকসভা সামলাচ্ছিলেন বিজেপি সাংসদ বিজেডি সাংসদ ভারত্রুহারি মেহতাব। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, টিডিপি সাংসদ যখন বক্তব্য রাখতে ওঠেন, তখন নিজের আসনে বসেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে বিজেপি’র বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে কিছু বলছেন মহুয়া মৈত্র। তৃণমূল সাংসদের মুখে শোনা যায় ওই অসংসদীয় শব্দটি। হইচই শুরু হয়ে যায় লোকসভায়। এদিকে মহুয়ার মাইক তখনও বন্ধ হয়নি। এর জেরে তাঁর সেই কথা সম্প্রচারিত হয়ে যায়।
. @MahuaMoitra has shamed the entire WB with her unparliamentary language.
— Dr. Sukanta Majumdar (@DrSukantaBJP) February 7, 2023
Use of such words shows the TMC culture wherein murder, violence, rape and abuses are so common. TMC leaders have lost their common sense in such atmosphere.
I feel pity for them. Bengal is watching. pic.twitter.com/O0KyuoES8j
বিজেপি ও সুকান্তর প্রতিবাদ
কৃষ্ণনগরের সাংসদের এই মন্তব্যের প্রতিবার করে একটি ভিডিও ট্যুইট করে আক্রমণ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar )। তাঁর দাবি, ” ক্ষমা চান মহুয়া মৈত্র’, দাবি করেছেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী। এখনও রাজ্য সরকার তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে?’ মহুয়ার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন বিজেপি সাংসদ হেমা মালিনীও। তিনি বলেন, ‘আবেগতাড়িত এবং অতি উত্তেজিত হয়ে পড়ে কোনও কিছু বলা উচিত নয়। এই সংসদের প্রত্যেক সদস্যই সম্মাননীয় ব্যক্তি। তা মাথায় রেখেই কিছু বলা উচিত।’ হেমা বলেন, ‘যারা এই কুকথা বলছেন, তাঁরাও সম্মানীয় ব্যক্তি। তাঁদের জানা উচিত। আমাদের তাঁদের সেখানোর প্রয়োজন নেই। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অনেক সময়ই উত্তেজনার পারদ চড়ে যায়।’ পরে তৃণমূল সাংসদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হেমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাঁর (মহুয়া মৈত্র) স্বভাব হয়ত এমনই হবে। আমি তা জানি না।’
ক্ষমা চাইতে নারাজ মহুয়া
#WATCH | They should control their tongue and not get over-excited and emotional. Each and every member of Parliament is a respectable person: BJP MP Hema Malini on TMC MP Mahua Moitra using offensive language in Lok Sabha yesterday pic.twitter.com/J4OlQtLQDB
— ANI (@ANI) February 8, 2023
যদিও বুধবার এই বিতর্কে মুখ খুলে মহুয়া জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি আপেলকে আপেলই বলবেন, কমলালেবু নয়। অভিযোগ, মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির ভাষণে ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাবের উপর লোকসভায় টিডিপি সাংসদ রামমোহন নাইডু বক্তব্য রাখার সময়ই ওই ভাষা প্রয়োগ করেন মহুয়া। আর তারপরই গড়ায় বিতর্ক। সংসদ বিষক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী তাঁকে ক্ষমা চাইতে বললেও মহুয়া জানিয়েছেন, তিনি ক্ষমা চাইবেন না। তাঁর সাফ কথা, ‘সংসদীয় আচার আচরণ নিয়ে বিজেপির থেকে শিক্ষা নেব না।’ এদিন মহুয়া বলেন, ‘আমি অবাক যে বিজেপি আমাদের সংসদীয় শিষ্টাচার শেখাচ্ছে। দিল্লির সেই জনপ্রতিনিধি আমাকে হেনস্থা করেছেন। আমি আপেলকে আপেলই বলব, কমলা বলতে পারব না। তাঁরা যদি আমাকে স্বাধিকার ভঙ্গের কমিটির কাছে নিয়ে যায়, আমি আমার বক্তব্য তুলে ধরব।’ মহুয়া এদিন আরও বলেন, ‘বিজেপি বলছে, আমি একজন মহিলা হয়ে কীভাবে এই ধরনের ভাষা প্রয়োগ করতে পারি। আমাকে কী তাহলে তাঁর ভাষায় যোগ্য জবাব দিতে পুরুষ হতে হবে? এটাই তো পুরুষতন্ত্র।’