স্পোর্টস ডেস্ক – ঐতিহাসিক নজির আরও একবার ছুঁয়ে ফেলল ভারত। প্যাট কামিন্সদের দর্পচূর্ণ করে সিরিজে ১-০ এগিয়ে গেল টিম ইন্ডিয়া। ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের কাছে ০-৩ চুনকামের পর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকায় পিছিয়ে পড়েছিল ভারত। দ্বিতীয় স্থানে নেমে গিয়েছিল তারা। শীর্ষে উঠেছিল অস্ট্রেলিয়া। পারথে প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সেই পয়েন্ট তালিকায় আবার সকলের ওপরে উঠে এল ভারত। অস্ট্রেলিয়া নেমে গেল দ্বিতীয় স্থানে।
গত বার এক তারকার জন্ম হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। ঋষভ পন্থ। ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়ার দম্ভ চুরমার করে ভারতকে সিরিজ় জিতিয়েছিলেন তিনি। এ বার পারথে জন্ম নিলেন যশস্বী। বোলারদের দুর্দান্ত লড়াইয়ের পর ভারতীয় ব্যাটারদের তাণ্ডব দেখল পারথের অপ্টাস স্টেডিয়াম। যশস্বী জয়সওয়ালের নজিরগড়া ১৬১, বিরাট কোহলির ৩০তম সেঞ্চুরি, ফর্মে ফেরা কে এল রাহুলের ৭৭ রান- সব মিলে ৪৮৭ পর্যন্ত পৌঁছে যায় ভারত। ৫৩৪ রানে পাহাড় চাপে অজি ব্যাটারদের ঘাড়ে। রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ১২ রানের মাথায় তিন উইকেট খুইয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় অজিরা।
তবে অস্ট্রেলিয়া মানেই শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই। পারথ টেস্টের (Border Gavaskar Trophy) চতুর্থ দিন দুরন্ত ব্যাটিং শুরু করেন ট্র্যাভিস হেড, মিচেল মার্শরা। ৮৯ করা হেডকে প্যাভিলিয়নে ফেরান বুমরাহ। জীবনের প্রথম টেস্ট উইকেট হিসাবে মিচেল মার্শকে তুলে নেন নীতীশ রেড্ডি। এই দুই ব্যাটার আউট হতেই ভারতের জয়ে কার্যত সিলমোহর পড়ে যায়। লোয়ার অর্ডারে অ্যালেক্স কেরি চেষ্টা করলেও, ম্যাচ ড্র করা তাঁর একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। ২৯৫ রানের বিরাট ব্যবধানে পারথ টেস্টে জিতে গেল টিম ইন্ডিয়া।
ভরসার নাম যশস্বী
ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপে ক্রমশ ভরসার নাম হয়ে উঠছেন তরুণ ওপেনার যশস্বী। দেশের মাটিতে যেমন সাবলীল, বিদেশের মাটিতেও তেমন স্বচ্ছন্দ। ব্যাটিং টেকনিক ভাল না হলে সম্ভব নয়। পার্থের দ্রুতগতির পিচে অস্ট্রেলিয়ার জোরে বোলারদের কী ভাবে সামলাতে হয়, তা হাতেকলমে দলের সিনিয়রদের দেখিয়ে দিলেন ১৬১ রানের ইনিংসে। তাঁর ২৯৭ বলের ইনিংসে ১৫টি চার এবং ৩টি ছয় রয়েছে। সুইং নিয়ে অযথা ভয় না পেয়ে বলের গতির মোকাবিলা করলেন ব্যাক ফুটে খেলে। প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্কেরা তাঁকে তেমন সমস্যাতেও ফেলতে পারলেন না। বিট অবশ্যই হয়েছেন। কিন্তু উইকেটে টিকে থাকার চেষ্টা করেছেন ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত। অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাট করার জন্য ঠিক যেমন মানসিকতা প্রয়োজন, তেমন ভাবেই খেলেছেন। ব্যাট হাতে যেমন প্রতিপক্ষের আক্রমণ মোকাবিলা করেছেন, তেমন স্টার্কদের স্লেজিংয়ের জবাব মুখে দিতেও ভাবেননি।
অস্ট্রেলিয়াকে বাঁচাতে পারলেন না ট্রেভিস হেড
অস্ট্রেলিয়ার নীচের সারির ব্যাটারেরা অনেক চেষ্টা করেছিলেন লড়াই করার। কিন্তু হার অবশ্যম্ভাবী ছিল। সেটাই হল। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একমাত্র নজর কাড়লেন ট্রেভিস হেড। এই নামটা ভারতীয় সমর্থকদের সবচেয়ে অপছন্দের। ২০২৩ সালের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও সে বছরই এক দিনের বিশ্বকাপ। দু’টি ম্যাচের ফাইনালেই হেডের ব্যাটে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল ভারতের। এই ম্যাচেও তিনি খেললেন। ৮৯ রান করলেন। মিচেল মার্শের সঙ্গে জুটি বাঁধলেন। কিন্তু এ বার পারলেন না। সেই বুমরাই জুটি ভাঙলেন। যে পিচে বোলারদের জন্য কিচ্ছু নেই সেখানে তিনি কী ভাবে এমন বল করেন তা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। যখনই ভারতের উইকেটের প্রয়োজন অধিনায়ক রোহিত তাঁর দিকে তাকান। আর এখানে তো তিনি নিজেই অধিনায়ক।
ফের বিশ্বে একনম্বর ভারত
১৫টি টেস্টর মধ্যে ন’টি টেস্ট জিতেছে ভারত। পাঁচটি হেরেছে তারা। একটি ড্র হয়েছে। ভারতের পয়েন্ট ১১০। তাদের পয়েন্টের শতাংশ ৬১.১১। এই পয়েন্টের শতাংশের উপর নির্ভর করেই শীর্ষে থাকা দুই দল বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলে। আগের দু’বারই ফাইনাল খেলেছে ভারত। এ বারও সেই সুযোগ রয়েছে তাদের।