কলকাতা – দর্শকের আসনে রয়েছেন বর্ষীয়ান নেতারা। আর মঞ্চ কাঁপাচ্ছে যুব নেতৃত্ব! বহুদিন পর বামেদের যুব ব্রিগেডে ‘বড় পরিবর্তন’ দেখল বাংলা। রবিবার যখন মঞ্চ কাঁপাচ্ছেন মীনাক্ষি-সেলিমরা, তখন মঞ্চের নীচে দর্শক আসনে শ্রোতা হয়ে বসে থাকলেন বিমান বসু থেকে সূর্যকান্ত মিশ্ররা।
দীর্ঘ ‘ইনসাফ যাত্রা’র শেষে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ব্রিগেড সমাবেশ করল সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই। ভিড়ের বহর থেকে শুরু করে বাম কর্মী-সমর্থকদের উন্মাদনা, সবেতেই ছিল অতীতে বামেদের তাবড় ব্রিগেড সমাবেশের ঝলমলে স্মৃতির প্রতিধ্বনি।
ব্রিগেডে রবিবার কর্মসূচির সূচনা হয় রবীন্দ্রনাথের ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গানটিকে দিয়ে। বাম মনোভাবাপন্ন একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন মঞ্চে রবীন্দ্রগানটি ধরে। তার পর তা মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে প্রায় গোটা মাঠে।
বামপন্থীদের ব্রিগেড সমাবেশের সূচনা গণসঙ্গীতেই দেখতে অভ্যস্ত চোখ-কান প্রাথমিক ভাবেই হোঁচট খেল এখানে। ঘটনাচক্রে, এই গানটিকেই সম্প্রতি রাজ্য সঙ্গীতের তকমা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা হলে কি মমতার দেখানো পথেই হাঁটল সিপিএমের যুবরা?
ডিওয়াইএফআই নেতৃত্বের অবশ্য ভিন্ন যুক্তি তৈরি। তাঁদের মতে, মমতা রবীন্দ্রনাথের গানের কথা বদলে বিকৃত করেছেন। তাই অবিকৃত ভাবে রবীন্দ্রসঙ্গীতটি পরিবেশন করে বাম যুবরা আসলে সেই বিকৃতিরই প্রতিবাদ তুলে ধরলেন।
তবে চিরাচরিত গণসঙ্গীতের বদলে রবীন্দ্রসঙ্গীতে বামপন্থীদের অনুষ্ঠান শুরুর তাৎপর্যে নতুনত্ব আছে। গোটা সময় ধরেই কিন্তু এই নতুনত্ব টের পাওয়া গিয়েছে। একটা সময় সিপিএমের কর্মসূচি মাত্রই নিয়ম করে বাজত হেমাঙ্গ বিশ্বাস, সলিল চৌধুরীদের অমর সৃষ্টি।
কিন্তু এ বার তার পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়াও জায়গা করে নিয়েছে সমসাময়িকদের লেখা প্রতিবাদের গান। ছিল এসএফআই নেতা সৃজন ভট্টাচার্য বা নাট্যকর্মী জয়রাজ ভট্টাচার্যের লেখা গানও। চোখে পড়েছে লোকসঙ্গীতের ব্যবহারের বিষয়টিও। বাউল বা লোকগীতির সুরে প্রতিরোধের ভাষা বসানো গানও ভরপুর বেজেছে ব্রিগেড জুড়ে।
চমক ছিল সভার একেবারে শেষে। যেখানে অনুষ্ঠান শেষ করা হল ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠের মধ্যে দিয়ে। যা সিপিএম তথা ভারতের সংসদীয় বাম ইতিহাসে নতুন তো বটেই, নজরকাড়াও বটে। এখানেই শেষ নয়, রবিবাসরীয় ব্রিগেডের মঞ্চে আগাগোড়া উড়তে দেখা গেল ভারতের জাতীয় পতাকা।
সিপিএম তথা বামফ্রন্টের ডাকে বহু ব্রিগেড সমাবেশ দেখেছে কলকাতা। এমনকি দেড় দশক আগে সিপিএমের যুব সংগঠনও এক বার ব্রিগেডে সভা করেছিল। কিন্তু কোনও বারই তেরঙ্গা পতাকা উড়তে দেখা যায়নি লাল ঝান্ডার মঞ্চে।