নিজস্ব প্রতিনিধি – বাংলাদেশী অভিনেতা মোশরফ করিমকে (Mosharraf Karim) ‘টোপ’ বানিয়ে লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের নাট্য উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিয়ে আসা হয়েছিল বাংলাদেশের জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা মোশারফ করিমকে (Mosharraf Karim)। সেখানেই লোকসভা ভোটের প্রচার করে বসলেন নাট্যকার-অভিনেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। যা নিয়ে রাজনৈতিক শোরগোল উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে।
অশোকনগরে নাট্যোৎসবের মঞ্চ থেকে তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের হয়ে সওয়াল করতে দেখা যায় রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে। বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার যে আগামী লোকসভা নির্বাচনেও বারাসত থেকে লড়া করবেন, তাই বুঝিয়ে দিয়ে নাট্যোৎসবে উপস্থিত দর্শকদের কাছে ভোটভিক্ষা শুরু করে দেন ব্রাত্য (Bratya Basu)।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা মোশারফ করিমকে (Mosharraf Karim) ‘টোপ’ হিসেবে ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘রাজনীতির কথা একটা বলতে চাই। যে দাবি উঠেছে এখানে, সেটা হল, মোশারফ করিমকে আবার পরের বছর চাই। যদি অশোকনগরে ২০২৪ সালে কাকলি ঘোষ দস্তিদার (বারাসত লোকসভা) বিরাট ভোটে লিড পান তাহলে, আমাদের পক্ষে কাজটা সুবিধার হয়। কাজটা আরও সহজ হয়ে যায়। এই বার্তাটা অশোকনগরের দিকে দিকে ছড়িয়ে দেবেন। বলে দেবেন, যদি মোশারফ করিমকে দেখতে চান তাহলে তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে জোড়াফুল চিহ্নে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করবেন।’’
স্বাভাবিকভাবেই বিনোদনের মঞ্চে শিক্ষামন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রচারের নিন্দা করেছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের নেতাদের যুক্তি, তৃণমূলের নেতারা নাট্যোৎসবের মতো অরাজনৈতিক মঞ্চকেও রাজনীতির আখাড়া বানিয়ে তুলেছেন। বাংলার শিল্প-সংস্কৃতি-কৃষ্টির রাজনীতিকরণ করে ফেলছেন। কিন্তু নাটকের অনুষ্ঠান মঞ্চে কেন ভোটের প্রচার করছেন ব্রাত্য, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে গেরুয়া শিবির।
বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক শ্যামলেন্দু দে-র কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের ‘আপ টু বটম’ সব চোর। ব্রাত্য বসু শিক্ষা কেন্দ্রের অরাজকতা শেষ পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। তিনি কোনটা নাট্যমঞ্চ আর কোনটা তৃণমূলের মঞ্চ সেটা ভুলে গিয়েছেন।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘তৃণমূলের পায়ের তলা থেকে যে মাটি সরে গিয়েছে, এটা তারই প্রমাণ। তাই ভোটের প্রচারের জন্য নাট্য উৎসবও ছাড় পাচ্ছে না।’’
যদিও ব্রাত্যের মন্তব্যে ভুল কিছু দেখছে না তৃণমূল। ঘাসফুল শিবিরের নেতাদের আবার যুক্তি, এই নাট্যোৎসব অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী এবং সাংসদ কাকলী ঘোষদস্তিদারের পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছে। খোদ নারায়ণ গোস্বামী মঞ্চে হাজির ছিলেন। সুতরাং ব্রাত্য যদি দু‘টো রাজনীতির কথা বলেই থাকেন – এতে কোনও মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়নি।
এখানে বলে রাখা ভাল, বাংলাদেশী স্টারদের নিয়ে তৃণমূলের ভোটপ্রচার নতুন কোনও ব্যাপার নয়। এর আগে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে ভোট প্রচার করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন বাংলাদেশের কয়েকজন অভিনেতা। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ফেরদৌস আহমেদ। সেই ঘটনার পর কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে তাঁকে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছিল। মোশারফ করিম অবশ্য সেবার কোনও প্রচারের অংশ হননি। তবে এবার ব্রাত্য বসুর ভোটভিক্ষাতেই স্পষ্ট, তৃণমূল লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করেদিল এই মোশারফ করিমকে নিয়েই। এবং শুরু হয়ে গেল বিতর্কও।
প্রসঙ্গত, অশোকনগরে দুই দিন ব্যাপী নাট্য উৎসবের শুরু হয়েছে সোমবার। শহিদ সদন মঞ্চে ওই নাটক অনুষ্ঠিত হবে। অশোকনগর সঙ্গতি পার্কের সামনে নাট্য উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে সোমবার উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য এবং বাংলাদেশের অভিনেতা মোশারফ করিম। এ ছাড়াও নাট্য উৎসবের উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী, জলসেচ দফতরের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। অনুষ্ঠানে ব্রাত্য তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন নাটকের বিভিন্ন কথা। তার পর তিনি মোশারফের প্রশংসা করেন। তার পরই উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশ্যে ব্রাত্য বলে ফেলেন, আগামী বছরে মোশারফ করিমকে ফের এইভাবে দেখতে হলে তৃণমূলকে ভোটে জেতাতে হবে।
উল্লেখ্য, হুগলির অপরাধ জগতে ‘খ্যাতনামী’ শ্যামলের জীবনকে কেন্দ্র করে ব্রাত্যের নতুন ছবি ‘হুব্বা’য় অভিনয় করছেন মোশারফ। এর আগে মন্ত্রীর পরিচালিত ‘ডিকশনারি’ ছবিতেও অভিনয় করেছেন ওপার বাংলার ওই চর্চিত অভিনেতা।