কলকাতা – ফের বড়সড় ধাক্কা খেল শাসকদল তৃণমূল। বৃহস্পতিবার নিয়ম মেনে কলকাতা হাইকোর্টের রস্টারে (মানে কোন বিচারপতি কোন মামলা শুনবেন তার তালিকা) ফের বদল হল বটে, কিন্তু পরিবর্তন তেমন কিছু হল না। প্রাথমিকের মামলা শুনবেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ই। আর্থাৎ আগে তাঁর এজলাসে প্রাথমিকের যে সব মামলার শুনানি চলত এখনও তাই হবে। শুধু সুপ্রিম কোর্ট যে দু’টি মামলা তাঁর বেঞ্চ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল সেগুলির বিচার করবেন বিচারপতি অমৃতা সিন্হা।
সাধারনত, কোন বিচারপতির এজলাসে কোন মামলার শুনানি হবে তা নির্ধারণ করেন হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি। একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর বিচারপতিদের বিচার্য বিষয়ে পরিবর্তন হয়ে থাকে। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম হাই কোর্টের নতুন ‘রস্টার’ প্রকাশ করেছেন। তাতে উল্লেখ রয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত সব মামলাই বিচারের ভার থাকছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে। ৩২ হাজার চাকরি বাতিল সংক্রান্ত মামলাও শুনবেন তিনি।
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট নিয়োগ দুর্নীতির মূল দু’টি মামলা তাঁর এজলাস থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। জল্পনা ছিল, পরবর্তী কালে তাঁর এজলাস থেকে হয়তো প্রাথমিকের বাকি মামলাও সরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু ‘মাস্টার অফ রস্টার’ হিসাবে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি তা করেননি। তবে এ বারের ‘রস্টার’ অনুযায়ী অন্য বিচারপতিদের হাতে থাকা কিছু মামলার অবশ্য বদল হয়েছে। তবে একই রয়ে গিয়েছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মামলগুলি। একই ভাবে আগে হাতে থাকা মামলাগুলিই শুনবেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এবং বিচারপতি অমৃতা সিনহা।
এখানেই শেষ নয়। বিচার্য বিষয় পরিবর্তন হয়নি বিচারপতি রাজাশেখর মান্থারও। তাঁর এজলাসেই রাখা হয়েছে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা সংক্রান্ত মামলা। গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া – বিচারপতি অমৃতা সিন্হা আগে পুরসভা সংক্রান্ত মামলা শুনতেন। এখন তিনি পঞ্চায়েত সংক্রান্ত মামলাও শুনবেন। রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এই সংক্রান্ত মামলাটির এজলাস পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কোনও মামলা হলে সবই যাবে বিচারপতি সিনহার এজলাসে। অথচ, এই ৩ বিচারপতি অর্থাৎ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এবং বিচারপতি অমৃতা সিনহার রায় নিয়েই সাম্প্রতিকা কালে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বকে।
অন্যদিকে, মাদ্রাসা, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক সংক্রান্ত মামলা শুনবেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। তাঁর ক্ষেত্রেও কোনও পরিবর্তন হয়নি। বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে অপরিবর্তিত থাকছে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত মামলা। আগে সিবিআই এবং ইডি সংক্রান্ত মামলা শুনতেন বিচারপতি বিবেক চৌধুরী। এখন থেকে এই মামলাগুলি শুনবেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। বিচারপতি চৌধুরীর বিচার্য বিষয় হল জমি এবং অত্যাবশ্যক পণ্য সংক্রান্ত মামলা।
প্রসঙ্গত, কলকাতা হাই কোর্টে ৫৩ জন বিচারপতি রয়েছেন। অনেক বিচারপতির বিচার্য বিষয়েই নানা পরিবর্তন হয়েছে। তবে অধিকাংশ বিচারপতির এজলাসের বিচারভার পরিবর্তন করা হয়নি। হাই কোর্ট সূত্রে খবর, গ্রীষ্মাবকাশের পরে আদালত খুললে আগামী ৫ জুন থেকে নতুন ‘রস্টার’ অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়া চালাবেন বিচারপতিরা।