মাথাভাঙা – কথায় এক, আর কাজে এক! কিছুদিন আগে নতুন তৃণমূলের ডাক দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তা নিয়ে নানা জল্পনা ছড়িয়ে ছিল। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই সেই জল্পনার জবাব দিতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, নতুন তৃণমূল আসলে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বাদ দিয়ে এগিয়ে চলা তৃণমূল। এবং তারপরই তৃণমূলের নাম্বার টু‘কে দেখা গিয়েছিল বিভিন্ন সভার আগে গ্রামে-গঞ্জে পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সদস্যদের হড়কাচ্ছেন। দুর্নীতির অভিযোগ শোনা মাত্রই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইস্তফা চাইছেন। যদিও অনুব্রত মণ্ডল কিংবা পরেশ অধিকারীর মতো নেতাদের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি। দিন কয়েক আগে অবশ্য বীরভূমের সম্মেলনের ব্যানার-পোস্টার থেকে কেস্টর ছবি বাদ গিয়েছিল। কিন্তু যে পরেশ অধিকারীর মেয়ের চাকরি গেল, আদালতের আদেশে মাইনের টাকা ফেরত দিতে হল – সেই পরেশ অধিকারীকেই শনিবার দেখা গেল মাথাভাঙায় অভিষেকের জনসভায় দিব্যি ‘ভিআইপি গেস্ট’ হয়ে বসে রয়েছেন। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কী তৃণমূল কথায় এক আর কাজে এক?
সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, এদিন মাথাভাঙায় তৃণমূল বিধায়ক পরেশ অভিষেকের পুরো সভাতেই ছিলেন। সভামঞ্চে উপস্থিত থাকার সময় অভিষেক তাঁর নামও করেন। তবে মেয়ের চাকরি যাওয়ার পর তাঁকে নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক বা ওই প্রসঙ্গে অভিষেকের সঙ্গে তাঁর কোনও কথাই হয়নি পরেশ অধিকারীর। এক সংবাদ মাধ্যমকে পরেশ অধিকারী একথাও জানিয়েছেন, ‘‘শুধু এই মঞ্চেই নয়, সব (তৃণমূলের) মঞ্চেই ছিলাম। এ নিয়ে কেউ কোনও আপত্তি করেননি।’’ পরেশ বুক ঠুকে দাবি করেছেন, ‘‘শিলিগুড়িতেও মুখ্যমন্ত্রীর সভায় ছিলাম। আমাকে দলের তরফে কেউ কিছু বলেননি। অভিষেকও কোনও বিষয় নিয়ে আমায় কিছুই বলেননি।’’
অর্থাৎ পরেশের স্পষ্ট দাবি, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তাঁর ‘সাতখুন মাফ’ হয়ে গিয়েছে। আর সেই কারণেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতার সভায় তিনি হাজির থাকতে পেরেছেন। দল থেকে তাঁকে কোনও বারণ করা হয়নি। এমনকী, কোনও সভা-সমিতিতেই যে তাঁর বাধা নেই, সেকথাও পরেশ অধিকারী মিডিয়ায় জানিয়েছেন। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব কি তাহলে পাবলিক ভোলানো খেলা খেলছে। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন বলেই কি ধরে ধরে পঞ্চায়েত প্রধান কিংবা সদস্যদের ইস্তফা নেওয়া হচ্ছে? তবে এনিয়ে তৃণমূলের জেলা স্তরের নেতা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও তাঁরা যে বেশ অস্বস্তিতে সেটা বেশ তাঁদের হাভে-ভাবে বোঝা যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরবঙ্গের এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘যখন নতুন তৃণমূলের কথা শুনে ছিলাম, ভেবেছিলাম দলের এবার শুদ্ধিকরণ হবে। দুর্নীতিবাজ বড় নেতাদের দল বসিয়ে দেবে। কিন্তু তার কোনও লক্ষন তো দেখতে পাচ্ছি না।’