লখনউ: পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত প্রাণ হারাল উত্তরপ্রদেশের গ্যাংস্টার আতিক আহমেদের ছেলে আসাদ। আর সেই খবর শুনতেই আদালতেই হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলেন আতিক আহমেদ। তবে এদিন উত্তর প্রদেশ পুলিশের এনকাউন্টারে শুধু আসাদ নয়, এই সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে গুলাম নামে আরও এক জনের।
আসাদ আহমেদ এবং তাঁর সঙ্গী গুলামের সঙ্গে যখন পুলিশের গুলির লড়াই চলছিল, সেই সময় উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে একটি মামলার শুনানিতে গ্যাংস্টার আতিক আহমেদকে হাজির করানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার শুনানি চলাকালীনই আতিক খবর পায়, তার ছেলে আসাদ পুলিশের গুলিতে খতম হয়ে গিয়েছে।
পুত্রের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরই আদালতে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখা যায় উত্তর প্রদেশের নাম করা গ্যাংস্টার আতিককে। এক দিকে সে যখন পুত্রশোকে কাঁদছিল, অন্যদিকে পুলিশের এনকাউন্টারে আসাদের মৃত্যুর খবর উমেশ পালের পরিবারের কাছে পৌঁছলে তাঁর মা এবং স্ত্রী বলেন, “বিচার পেলাম।”
উত্তরপ্রদেশ পুলিশ সূত্রে খবর, আতিকের এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী ঝাঁসিতে নিজের বাড়িতে আসাদ এবং গুলাম লুকিয়ে ছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ঝাঁসিতে চিরুনিতল্লাশি শুরু করে পুলিশ। এরপরই বরাগাঁও এবং চিরগাঁও থানার মাঝে পরীক্ষা বাঁধের কাছে আত্মগোপন করে থাকা আসাদ এবং গুলাম পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে। পাল্টা জবাব দেয় পুলিশও। দু’পক্ষের গুলির লড়াইয়ে আসাদ এবং গুলামের মৃত্যু হয়।
প্রয়াগরাজে উমেশ পাল হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ছিল এই আসাদ এবং গুলাম। পুলিশের খাতায় ‘ওয়ান্টেড’ অপরাধীর তালিকায় ছিলেন এই দু’জন। তাঁদের কাছ থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র, নতুন মোবাইল ফোন এবং সিম কার্ড উদ্ধার হয়েছে। আসাদ এবং গুলামকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা করেছিল পুলিশ।
এদিনের এই এনকাউন্টারের পর উত্তরপ্রদেশ পুলিশের প্রশংসা করেছেন রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য। তিনি জানান, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এই কাজই অপরাধীদের কাছে একটা বার্তা পৌঁছে দিল যে, নতুন ভারতে এই ধরনের কাজ করলে তার পরিণতি কী হয়।
উপমুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “উত্তরপ্রদেশ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স-কে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল। পাল্টা জবাব দিয়েছে তারাও। এই ঘটনা অপরাধীদের কাছে বার্তা দিচ্ছে যে, এটি নতুন ভারত। এটি যোগী আদিত্যনাথের সরকার, সমাজবাদী পার্টির সরকার নয়।”
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রয়াগরাজে নিজের বাড়ির সামনে খুন হন বিধায়ক রাজু পালের একমাত্র সাক্ষী উমেশ পাল। তাঁকে গুলি করে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় উমেশের দুই নিরাপত্তারক্ষীরও মৃত্যু হয়। উমেশ খুনে অভিযোগ ওঠে আতিক, তার ভাই আশরফ, পুত্র আসাদ, গুলাম-সহ বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে। উমেশ হত্যাকাণ্ডের পরই শোরগোল পড়ে গিয়েছিল গোটা উত্তরপ্রদেশে। সেই সময়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছিলেন, অপরাধীদের তিনি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেবেন।
যদিও এই ঘটনায় উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের সমালোচনায় সরব হতে দেখা গিয়েছে বিরোধীদের। সমাজাবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদব এক টুইটে দাবি করেছেন, এই এনকাউন্টার আসলে ভুয়ো। একই সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার খোঁচা দিয়ে অখিলেশ টুইটে লিখেছেন, বিজেপি সৌভ্রাতৃত্বের পরিবেশ চায় না। আইন আদালতে বিশ্বাস রাখে না। সেজন্য এধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে।