২০২৩ দোলপূর্ণিমা (Happy Holi 2023) ঘিরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে উৎসবের আবহ। দিকে দিকে যা কিছু ধূসর তাকে রঙে রাঙিয়ে নিতে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু জানেন কি, জ্যোতিষশাস্ত্রের মতে দোল বা হোলি উপলক্ষে যে সব রং, আবির ব্যবহার করা হয় সেগুলো গ্রহ-নক্ষত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত।
অর্থাৎ দোল কিংবা হোলিতে যদি আপনি আপনার রাশি অনুযায়ী রং খেলার মেতে ওঠেন, তাহলে আপনার জীবন ভরে উঠবে সুখ, সমৃদ্ধি ও ভালবাসায়। তবে তার আগে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক দোল বা হোলি কী – তার ওপর। পঞ্জিকা মতে দোলযাত্রা আর হোলি উৎসবের দিনক্ষণ আলাদা।
আলোচ্য বিষয়
দোল আর হোলির মধ্যে পার্থক্য
দোল ও হোলি একই অর্থে ব্যবহার হলেও এই দুটি বিষয় কিন্তু আসলে এক নয়। এই দুটির আলাদা আলাদা ভিন্ন ভিন্ন তাৎপর্য আছে।
বাংলায় এটি দোলযাত্রা, দোল পূর্ণিমা বা দোল উত্সব নামে পরিচিত হলেও ভারতের অন্যত্র বেশিরভাগ জায়গাতেই রঙের উত্সবকে হোলি বলা হয়। ক্যালেন্ডারে বছরের দুটি দিন চিহ্নিত করা থাকে। একদিন দোল ও তার পরের দিন হোলি। এই দু দিনই ‘হ্যাপি হোলি’ বলে শুভেচ্ছা আদান প্রদান করেন অনেকে।
দোল পূর্ণিমার কি
দোলযাত্রা (Dol Yatra) বা দোল পূর্ণিমা পালিত হয় রাধা – কৃষ্ণের প্রেম কাহিনির ওপর ভিত্তি করে। অন্যদিকে, হোলি পালন করা হয় নৃসিংহ অবতারের হাতে হিরণ্যকশিপু বধ হওয়ার যে পৌরাণিক কাহিনি, তার ওপর ভিত্তি করে। এই বছর দোল উত্সব পালিত হবে ১৮ মার্চ এবং হোলি উদযাপন হবে ১৯ মার্চ।
এর আগের দিন অর্থাৎ ১৭ মার্চ ন্যাড়া পোড়া বা হোলিকা দহন নামে পরিচিত। অর্থাৎ, ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা রাতের পর দিন দোল উত্সব পালন করা হয়। মনে করা হয় এদিনই রাধা আর তাঁর সখীরা দল বেঁধে আনন্দে রং খেলায় মেতে উঠেছিলেন। তখন ভগবান কৃষ্ণ তাঁর মুখটি সুগন্ধি ফুলের কুড়ির রঙ দিয়ে গন্ধযুক্ত করলেন। সেদিনই কৃষ্ণ রাধার প্রতি তাঁর প্রেম নিবেদন করেছিলেন বলে মনে করা হয়।
হোলিকা দহনের ইতিহাস
আর এদিকে হোলি উৎসব হল ভগবান বিষ্ণুভক্ত প্রহ্লাদকে কেন্দ্র করে যিনি রাক্ষস রাজা হিরণাকশীপুর ধর্মপ্রাণ পুত্র। রাক্ষস রাজা হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন পরম বিষ্ণুভক্ত। সেকারণেই, প্রহ্লাদকে হত্যা করার জন্য হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকা প্রহ্লাদকে আগুনে নিক্ষেপ করার পরিকল্পনা করেন।
বিষ্ণুর কৃপায় আগুন প্রহ্লাদকে স্পর্শ করতে না পারলেও সেই আগুনে পুড়ে মারা যান হোলিকা। এরপর থেকেই অশুভের উপরে শুভ শক্তির জয় উদযাপনের জন্য সারা বিশ্বে এই হোলি পালিত হয়। আর এই কারণেই হোলির আগের দিন রাতে পালিত হয় হোলিকা দহন যা বাংলায় বুড়িঘর বা ন্যাড়াপোড়া নামে পরিচিত।
কোন রাশির জন্য কোন রং শুভ
মেষ রাশি- মেষ রাশির উপর মঙ্গল গ্রহ অধিপতি। লাল রং মেষ রাশির জাতক-জাতিকাদের জন্য অত্যন্ত শুভ। লাল ছাড়া আপনি গোলাপি, হলুদ রঙের আবির ব্যবহার করতে পারেন। কালো রং এড়িয়ে চলুন।
বৃষ রাশি- বৃষ রাশির জাতক-জাতিকারা নীল, সবুজ এবং সোনালি রং দিয়ে দোল খেলতে পারেন। কিন্তু গাঢ় রং সবসময় এড়িয়ে চলবেন। চেষ্টা করুন হালকা রং বেছে নিতে। দোল খেলা শুরু করার আগে সূর্য দেবতাকে আপনার শুভ রং নিবেদন করুন।
মিথুন রাশি- সবুজ রং সবসময় মিথুন রাশির জাতকদের জন্য শুভ হিসেবে বিবেচিত হয়। সবুজ রং ছাড়াও আপনি হলুদ, নীল, গোলাপি ও বেগুনি ব্যবহার করতে পারেন। চেষ্টা করুন লাল ও কালো রং এড়িয়ে চলার।
কর্কট রাশি- কর্কট রাশির জাতকেরা খুব বেশি রং খেলতে পছন্দ করেন না। খেললেও কাছের মানুষদের সঙ্গে খেলেন। নেতিবাচক শক্তিকে দূরে সরাতে কর্কট রাশি জাতকেরা লাল, হলুদ এবং সবুজ রঙের আবির মাখতে পারবেন। নীল রং এড়িয়ে চলুন।
সিংহ রাশি- সিংহ রাশির জন্য দোল সেরা উৎসব। সিংহ রাশির জাতক-জাতিকারা উদার মনের মানুষ হয়। তাঁরা বেগুনি, বার্নট অরেঞ্জ এবং যে কোনও লাল রং ও সোনালি রং ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। চেষ্টা করুন কালো রং এড়িয়ে চলার।
কন্যা রাশি- কন্যা রাশির জাতকেরা রঙের উৎসবে মেতে উঠতে ভালবাসে। এই বছর কন্যা রাশির জাতকেরা বাদামি, নেভি ব্লু, পিচ ও হলুদ রঙের আবির ব্যবহার করতে পারেন। লাল ও কালো রং এড়িয়ে চলুন।
তুলা রাশি- তুলা রাশির জাতকেরা সবসময় নতুন এবং অনন্য পদ্ধতিতে হোলি উদযাপন করতে ভালবাসে। তাঁদের জন্য ল্যাভেন্ডার, বেগুনি এবং নীল অত্যন্ত শুভ হিসেবে বিবেচিত হয়। তুলা রাশির জাতকদের জন্য সবুজ ও হলুদ রং অশুভ।
বৃশ্চিক রাশি- বৃশ্চিক রাশির জাতকেরা কাছের মানুষদের সঙ্গে দোল খেলতে ভালবাসে। লাল, মেরুন, বাদামির মতো রং বৃশ্চিক রাশির জাতকদের জন্য অত্যন্ত শুভ। নীল রং বৃশ্চিক রাশিদের জন্য এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।
ধনু রাশি- ধনু রাশির জাতকেরা দোলের উৎসবে এনার্জিতে ভরপুর থাকেন। তাঁরা বেগুনি, নীল, হলুদ, লাল, কেশর রঙের আবির ব্যবহার করতে পারেন। দোল উৎসবে মেতে ওঠার আগে আপনার শুভ রং মহাদেবকে উৎসর্গ করুন।
মকর রাশি- মকর রাশির জাতক-জাতিকাদের জন্য নীল ও সবুজ রং অত্যন্ত শুভ হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু হলুদ রং এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। শুধু রং খেলা শুরু করার আগে দোলের দিন রাধা-কৃষ্ণর পুজো করুন।
কুম্ভ রাশি- কুম্ভ রাশির ব্যক্তিরা জল দিয়ে রং খেলতে ভালবাসেন। যে কোনও ধরনের নীল রং তাঁদের জন্য শুভ। নীল রং কুম্ভ রাশির জাতকদের জীবনে আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে। তবে, কুম্ভ রাশিদের জন্য গেরুয়া ও লাল রং এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
মীন রাশি- মীন রাশির জাতকেরা নীল, সবুজ রঙের সঙ্গে দোল খেলতে পারেন। চেষ্টা করুন গাঢ় রং সবসময় এড়িয়ে চলার। দোল উৎসবে মেতে ওঠার আগে বিষ্ণুর আরাধনা করুন। ভগবানকে হলুদ অর্পণ করুন।