Homeপাঁচফোড়নব্যবচ্ছেদ

ব্যবচ্ছেদ

- Advertisement -

দেবা রায়

প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে বেড়িয়ে এলো কিছু কাগজ। সেই কাগজগুচ্ছ থেকে বেরিয়ে নীচে পড়ে গেল একটা কন্ডোমের ব্যবহার করা প্যাকেটের অংশ। ঘাটের দিকে মুখ করে বসেছিল সে। উল্টোদিকে গঙ্গায় স্নান করার জন্য তেল মাখছেন এই প্রৌঢ়। কন্ডোমের প্যাকেট পড়ে যাওয়া আর সেই প্রৌঢ়ের তেল মাখতে মাখতে হাত চলে গিয়েছে নিম্নাঙ্গের গোপন অংশে। দুটোর মোমেন্টাম অদ্ভুত ভাবে মিলে যায়। প্রৌঢ় বড় বড় চোখ সোজা সেই প্যাকেটের দিকে। তারপর সেই বসে থাকা বছর চল্লিশের সেই ছেলেটার দিকে। অদ্ভুতভাবে মুখ দিয়ে একটা আওয়াজ করে ছেলেটির মনোযোগ কাড়ার চেষ্টা করে। সফলও হয়। ছেলেটি দেখে দুটো চোখ কাপালিকের মত তার দিকে তাকিয়ে। ছেলেটি তাকাতে সেই প্রৌঢ় গজালের মতো দাঁত বার করে অদ্ভুত ভাবে হেসে তাকে, তারই পড়ে যাওয়া কাগজের দিকে নজর দিতে বলে। ছেলেটি ওর অভিব্যক্তি অনুসরণ করে নীচে তাকায়। দেখে তারই ব্যবহার করা কন্ডোমের প্যাকেটের অংশটা। সে এইটিকে সযত্নে রেখে দিয়েছে পকেটে। কারণ এ নিয়ে তার এক স্মৃতি আছে। বিষয়টি সেই প্রৌঢ় দেখে ফেলায় খানিক লজ্জিত বা খানিকটা বিব্রত হয়ে সে সেটা তোলার চিন্তা করে। ততক্ষণে সেই প্রৌঢ়ের গুরুগম্ভীর কন্ঠ ভেসে-
-‘এসব ব্যবহার করে সুখ পাওয়া যায় না। বুঝলেন? আমার এসব লাগে না।’ -কথার সাথে তেল ভালো করে ওটিকে মুচরে মালিস করতে করতে কথাগুলি বলে।
ছেলেটির মুখে কথা নেই। যদিও চারপাশে আর কেউ নেই। লোকটাকে তার খুব ভালো লাগে না। সে তৎপর হয়, প্যাকেট টিকে তুলে নিয়ে সে এই জায়গা ত্যাগ করবে বলে মনস্থির করে।
প্রৌঢ় এতোটাই সজাগ হয়ে আছে তার ওপর যে ছেলেটি সুযোগই পাচ্ছে না। একসময় প্রৌঢ় জলে নামার জন্য পিছনে ফিরেছে, ওমনি সেই প্যাকেটের অংশটি তুলতে চেষ্টা করে, একটা দমকা হাওয়া এসে সেই প্যাকেটি খানিকটা দূরে সরে যায়। সেও তার পিছু নেই। ঘাটে সেই প্রৌঢ় আর সে ছাড়া কেউ নেই। হাওয়া তাকে ঘুরপাক খাওয়াতে থাকে, তার এই আচরণ দেখে প্রৌঢ় সেই জল থেকেই বলে ওঠে – আরে মশাই ওতে কি আছে, ওতো ব্যবহার করে ফেলেছেন, নতুন একটা কিনে নিয়ে যান। ছেলেটি ধরা পড়ে গেছে বুঝতে পেরে দমে যায়। প্যাকেট ততক্ষণে গঙ্গার জলে একটি ভেসে আসা কচুরিপানার স্তুপের ওপর গিয়ে পড়েছে। এই অবস্থা তাকে আরও চঞ্চল করে। ভেসে যাওয়া সেই কচুরিপানার স্তুপে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। যেন অসহায় সেই চাহনি। যেন কি একটা হারিয়ে যাবার বেদনা। ছেলেটি অভিব্যক্তি সেইভাবে প্রৌঢ় লক্ষ করতে পারে না, তবে বুঝতে পারে, এবং সেই মোতাবেক মন্তব্য করে বলে- আরে মশাই একটা ছেড়া কন্ডোমের প্যাকেটের জন্য এমন করছেন, যেন আপনার আজীবনের প্রেম হারিয়ে গেছে। যান যান আবার একটা কিনে নিয়ে মস্তি নিয়ে আসুন। আরে জীবনটা মস্তির। খাও দাও আর লাগাও। এই যে দেখুন আমাকে।’ ততক্ষণে জল থেকে উঠে এসেছে ছেলেটি ঠিক পাশেই। ছেলেটির নিথর শরীরটায় হাত রেখে বলে- ‘কি হল অমন স্থির হয়ে গেলেন যে? ওই প্যাকেটে কি মূল্যবান কিছু ছিল? ‘

মনে মনে ছেলেটি বলতে থাকে ‘ছিল তো, অনেক মূল্যবান কিছু ছিল’।  বিড়বিড় করতে করতে সে চলে যায়। প্রৌঢ় বেশ অবাক হয়। সে তার জীবদ্দশায় এমন ঘটনা দেখেনি, সেও বার পাঁচেক এই কন্ডোম নিয়ে মালতি, বুলবুলি, অজন্তা, বুচিদের সাথে আনদ করেছে, কই সে তো ব্যাবহার করা কন্ডোমের প্যাকেটের খাপ কখনও পকেটে রেখে সেটা নিয়ে এরকম….  প্রৌঢ় এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে স্থান ত্যগ করে।

ছেলেটি হেঁটে চলেছে কোনো অনির্দষ্ট পথে। সে ভাবে সে নিজে নিজে কথা বলে। ‘ প্যাকেটটা আমাকে সাহস দিত অনেক, প্যাকেটায় তুমি ছিলে, তোমাকে পাবার পারপাস ছিল সেই প্যাকেট, সেটাও আজ হারিয়েছি। তোমাকে পাবার মুহুর্তের একমাত্র সাক্ষী। সেটা আজ খোয়া গেল। আজ তোমার স্মৃতির এতোটুকু প্রমাণ আমার কাছে নেই’! ভাবনার গভীরে সে তলিয়ে যায়।
নিজের সাথে কথা বলতে বলতে সে একটা দোকানের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। হঠাত একটি মেয়ে তাকে দেখে ছুটে আসে, ‘ স্যার স্যার আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না, আমি আপনার কাছে অঙ্ক করতাম, আমি মিলি’।  নামটা তাকে নিমেষে চমকে দিতে সাহায্য করে। সে কেঁপে ওঠে। এই প্রথম একটি শব্দ সে বলে ওঠে, ‘মিলি’! মানে তমালিকাদের ব্যাচে’?
– হ্যাঁ  স্যার ঠিক, আপনি তমালিকাকে মনে রেখেছেন, মিলিকে ভুলে গেলেন, মানে বলতে চাইলাম তমালিকাকে মনে করে আমার নামটা মনে করতে হল?
– না মানে তমালিকা সেই ব্যাচে বেস্ট ছিল, সেই জন্য বললাম’
– আবার ঢপ, আমি আজ আর সেই ছোট্টটি নেই স্যার, চলুন একটু মিষ্টি খাওয়াই আপনাকে। বলে একপ্রকার টেনেই নিয়ে গেল একটি মিষ্টির দোকানে।
– কি খাবেন?
– তুমি যা খাওয়াবে।
– তাই যা খাওয়াবো,  তাই খাবেন
– হ্যাঁ
– সিওর?
– আশ্চর্য নয় কেন?
– দাদা দুটো তালসাস দিন। আর দুটো রসগোল্লা। তাহলে আমার চাওয়ার ওপর আপনার সমর্থন আছে।
– আছে।
– এখন কোথায় থাকেন
– স্পেসিফিক কোনও জায়গা নেই। যখন যেভাবে যা মিলে যায়।
– মানে? আপনার বাড়িঘর কি হল!
– সেসব৷ চলে গিয়েছে। তালসাসটা বেশ ভালো। বহুদিন বাদে খেলাম।
– আর একটা খাবেন?
– না থাক। অনেক দাম দেখছি। তোমার অনেক টাকা খরচ হয়ে গেল।
– আমি যা স্যালারি পাই তাতে আপনার মতো চারটে মানুষের খোরাকির ভার নিতে পারি স্যার। এই আর দুটো তালসাস দাও। আপনি তালসাস ভালোবাসেন বলেই জানতাম।
– হ্যাঁ,  একটা দীর্ঘস্বাস ফেলে সম্বিত।
সম্বিত ছোটবেলা থেকেই  পড়াশুনায় চৌখস। টিউশান করে আর্ট কলেজে পড়াশুনা করতো। আর অসম্ভব সব কবিতা লিখতে পারতো। সেই সময় থেকে বা কিছু পড়ে এই মিলি তার কাছে পড়তে আসে। তমালিকাই নিয়ে এসেছিল।
– কি ভাবছো?
– তোমার কথাই ভাবছিলাম।
– আচ্ছা, আমার কথা ভাবছিলেন নাকি আমার সূত্র ধরে তমালিকাদির কাছে ঘোরেফেরা করছিলেন।
– সেটাও মিথ্যা নয়। কারণ তোমার সুতোটা যে তমালিকাতেই বাধা আছে।
– এখনও এতো তমালিকা তমালিকা করেন কেন! সে কবে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ভেগেছে।
– সে ভেগেছে। আমিতো ভাগতে পারিনি।
– কেন?
– জানিনা।
– বিয়েটাও তো করে নি আপনাকে।
– বিয়েটাই কি সব। ঘটনাগুলো কি মিথ্যা ছিল?
– কোন ঘটনাগুলো?
– সে অনেক ঘটনা।
– আপনি কি এখন আমার বাড়ি যাবেন?
– যেতে পারি।
– তাহলে চলুন। বাড়িতে বসে কথা শোনা যাবে।
– বেশ তাই চল। মিষ্টির টাকাটা…
– হ্যাঁ  হ্যাঁ  আমি দিচ্ছি।
মিষ্টির দাম মিটিয়ে দুজনে একটা রিক্সা নিয়ে চলল মিলির বাড়ি। রিক্সাতে পাশাপাশা মিলি আর সম্বিত বসে। মিলি যথেষ্ট সুন্দরী। মিলি একসময় প্রোপোজ করেছিল, সম্বিত কে। কিন্তু তখন সম্বিত তমালিকায় ডুবে আছে। হঠাত মিলি বলে ওঠে, আপনার কি কোনো ফিলিং  হচ্ছে না?
– কিসের ফিলিং?
– আমাকে নিয়ে,  পাশে বসে আছি, এমন একজনকে নিয়ে যাকে আমি একসময় কাছে চেয়ে এসেছি। যে ছিল তার স্বপনচারী।
– তুমি এখনও সেই ছেলেমানুষ রয়ে গেলে মিলি।
– এতো ন্যাকা না আপনি। ভেতরে ভেতরে তো আমাকে চেটে পুটে খাচ্ছেন। সব পুরুষদের আমার জানা আছে।।
– তুমি আমায় এমন ভাবলে মিলি!
– এই রিক্সা দাঁড়াও, আমরা এসেগেছি। এই যে এই বাড়িটা আমার।
সম্বিত বিশাল আকৃতির সেই বাড়িটার দিকে তাকিয়ে। স্তব্ধ হয়ে যায়। ধীরে রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে দুজনে বাড়ির গেটে এসে দাঁড়ালো। ব্যাগ থেকে চাবি বার করে দরজা খুলছে। এমন সময় কৌতুহল সামলাতে না পেরে সম্বিত বলে-
– বাড়িতে কেউ নেই? তুমি একা থাক?
– কেন একটা বাড়িতে একটা মেয়ে একা থাকতে পারে না?
– না তা নয়।
– তাহলে?
– বাড়িতে কেউ থাকলে তো দরজা খুলে দিত।
– আপনার তো বাড়িই নেই, আপানার আবার এতো বাড়ি কেমন হওয়া উচিত এই নিয়ে এতো জ্ঞান কোত্থেকে এলো শুনি।
-যান উপরের চলে যান,  গিয়ে ডানিদিকে ওয়াস রুম আছে ওখানে ফ্রেস হয়ে নিন।
সম্বিত উপরের চলে যায়। সিঁড়ি দিয়ে উঠে বিশাল লিভিং রুম। ডানদিকে একটা ব্যালকনি। যার দরজা খোলা, বাইরের আলো এসে লিভিং স্পেসকে আলোকময় করেছে। নিখুত ভাবে সাজানো ঘর। ওয়েল মেন্টেইনড। ভেবেছিল সোফায় একটু বসবে। পিছন থেকে টাওয়েল ও কিছু জামাকাপড় নিয়ে এসে মিলি বলে-
– নো এখন এখানে বসবেন না স্যার। যান ওয়াসরুমে যান। 
সম্বিত অনুগতের মতো ওয়াসরুমে ঢুকে যায়।
অত্যাধুনিক টয়লেট। বাথটাব, আধুনিক শাওয়ার, কি নেই সেখানে, একটা ছোট টিভি স্ক্রিনও রয়েছে। হঠাত সেটা চালু হয়ে গেল। রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজাচ্ছেন একজন।  মোটামুটি পরিবেশ ভরপুর আরামের। এতো আরাম সম্বিতের সয় না। কিছুক্ষণের জন্য সে আরাম পায় আবার পরক্ষণেই সেই আরাম ব্যারামে রূপান্তরিত হয়। শাওয়ার ছেড়ে বেশ কিছুক্ষণ সে মহা আনন্দে স্নান সারলো। এতোদিনের জমে থাকা একটা কষ্ট নিমেষে ধুয়ে গেল শাওয়ারের জলধারায়। ফ্রেস হয়ে সে টয়লেট থেকে বেড়িয়ে দেখে মিলি সোফা বসে একটা শরবতের গ্লাস হাতে। এতো মেঘ না চাইতেই জল। সবকিছু এমন আশ্চর্য জনকভাবে ঘটে যাচ্ছিল সে তার সাথে খাপ খাওয়াতে সময় নিচ্ছিল। সে সোফায় এসে বসে। মিলি তার দিকে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
– কি দেখছো? বুড়ো হয়ে গেছি?
– না একদম না, বরং ভাবছি এরকম ফ্রেসনেস কিভাবে ধরে রেখেছো।
– সে স্নান করে এসেছি বলে তোমার মনে হচ্ছে।
– একদম না। তুমি আগের মতোই আছো।
– জানিনা, তবে থাকার চেষ্টা করি। আমি আজও তমালিকাকে ভুলতে পারিনি মিলি।
– সেটা জানি। তবে তুমি যে তার প্রতি কেন এতো আসক্ত সেটা আজও বুঝতে পারিনি। আমি কি তার থেকে এতোই বাজে দেখতে।
– তুমি একরকম ও আরেকরম। ওর সাথে যেটা হয়েছে সেটা আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ট মুহুর্তের ভাগাভাগি।
– আমার সাথে সেই ভাবাগাভাগিটা হলে তোমার কি আপত্তি থাকবে?
– নিশ্চই। আমি ওকে যেটা দিয়েছো সেটা তোমায় কি করে দি?
– সে তো একবারই। ঠিকাছে। কিন্তু সে তো তোমার সাথে  বিট্রে করেছে।
– সেটা বিট্রে কি না জানি না। হয়তো আমাকে সেইভাবে পছন্দ ছিল না।
-আমাকে বলেছিল,  কারণটা শুনবে?
– হ্যাঁ  বলো।
– তুমি তাকে ঠিক করে খুশী করতে পারো নি। ওর সেক্সের কাছে তোমারটা ম্যারম্যারে। এরকমই কিছু জানিয়েছিল। পাতি বাংলায় তুমি ওকে ভালো করে করতে পারোনি।
– আচ্ছা। কিন্তু আমার সাথে তো ওর একবারই সম্পর্ক হয়েছিল। যা আমারও জীবনে প্রথমবার।
– এরপর কতবার কোথায় কোথায় আপনার এই ভালোবাসা বিলিয়েছেন মশাই?
– কোথাও না।
– বলেন কি! এতো সত্যিকারের সাধুবাবা।
– সেরকমও নয়। আমি আসলে তমালিকার সাথে সম্পর্কের বিষয়টি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছি।
– একি ভালোবাসা নাকি নিজেকে ঠকানো। আমাকেও ঠকিয়েছেন আপনি। আমাকে প্রত্যাখান করেছেন। আর আজ আপনার পরণতি কি? আমি কিন্তু জীবনটাকে ঐভাবে দেখি না। সেক্সুয়াল এক্টিভিটি একটা প্রাইমারি ক্রায়েটেরিয়া অব ইচ এন্ড এভরি হিউম্যান বিইং।  তার জন্য স্পেসিফিক কাউকে আমি পছন্দ করি না। ইনফ্যাক্ট কেউই করে না। ভান করেমাত্র।
– এটা মানতে পারছি না।
– বয়ে গেল। যাক একটা কথা বলি, এই বাড়িতে আপনাকে নিয়ে আসার কারণ। এই বাড়িটা আমার খালিই পড়ে থাকে। আপনি থাকতে পারেন। আমি অফিস থেকে  সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরি। না না আপনাকে এখানে থাকার জন্য কোন কিছু দিতে হবে না। বরং আপনি আমার বাড়ি পাহাড়া দেবেন বলে আপনাকে আমি মাসে কিছু টাকা দেব। খাওয়া খরচ আমার। রাজী?
– রাজী না হবার কিছু নেই। আমার আত্মসম্মান নেই বলেই আমি কাজটা করতেই পারি। তাছাড়া আমার তো যাবার আর কোনো জায়গাও নেই।
– তাই,  অবশেষে এই ঘাটে তরী ভেরাবেন বলছেন।
– উপায় কি!
– এই স্টুপিড, সরি স্যারকে এটা বলা ঠিক না। উপায় থাকলে চলে যাবেন? ঠ্যাং খোড়া করে দেব বুঝেছেন?
– সব্বনাশ। আমি তাহলে খাচার আটকা পড়েছি,  অবশেষে।
– একদম বাঘের খাঁচা।
– তা বাঘ কি শুধুই আটকে রাখবে নাকি শারিরীক নির্যাতনও করবে।
– আমাকে আরাম দিতে পারেন? কি? পারেন?
– সে তো তমালিকা তোমায় বলেই দিয়েছে। আমার সামর্থ কি বা কতটা। তারপরও আমার দিকে এগোচ্ছো কেন?
– সেটা আমি প্রমাণ নিয়ে দেখতে চাই?
– বেশ দেখো-
– মিলি যে নিমেষে একটা ফড়িং এর মতো ডানা মেলে ওর গোটা লিভিং রুম ঘুড়ে বেড়ালো। হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেল বাইরে। যাবার আগে বলে গেল-
– রাতে তোমার স্পেশাল ডিস কিনে আনবো, চলি, আর ওটাও হা হা হা….
মিলির উপস্থিতি আজও ভুলতে পারেনি সম্বিত৷ সেই রাতে সে এসেছিল। আর সারাটা রাত সে যেন আমার শরীটাকে যেমন খুশী পরখ করে দেখেছে। তার সেই আনন্দ আমি আজও ভুলতে পারিনি। আমার কাছে সে কি এমন পেয়েছিল জানি নাই। আমি পেয়েছিলাম অনেক। তমালিকার সাথে যা,  তার চাইতেও অনেক বেশী আর সেই সেই রাতের কন্ডোমের প্যাকেটা আজও বয়ে নিয়ে চলছিলাম স্মৃতি হিসেবে। স্মৃতি। হ্যা মিলি পরদিন মনের আনন্দে অফিস গিয়েছিল, ফেরার পথে পথ দুর্ঘটনায় সে স্পট ডেড। আমি ওর বাড়ির কাউকেই জানি না। আজও এই বাড়ি আগলেই বসে আছি। আর পুরো বাড়িটাকে সযত্নে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রেখেছি। যদি মিলি একবার আসে। না সে আর আসবে না জেনেও আমার মন বার বার ভাবে যদি আসে। আমার আর তার ভালোবাসার সেই যে ছোট্ট মাধ্যমটা যা আমাদেরকে সেই পরম প্রাপ্তির দিয়েছিল সেই প্যাকটটা আমি আজ খুইয়েছি। এরকম অনেক স্মৃতি আমি রেখে দিয়েছি আজও, ওর ব্যাবহার করা গ্লাস, প্লেট, আরো কিছু জিনিস। সবই আছে, মিলি নেই। আমার জীবনের এই ট্রাজেডি আমি কাকে বোঝাবো। তমালিকা পেলাম তাও চলে গেল। কিন্তু যে আমাকে আমার নিজের থেকেও বেশী ভালোবাসত, সেও চলে গেল। অথচ আমি রয়ে গেলাম। এই পথের শেষে একদিন নিশ্চই দেখা পাব মিলির। প্রথমে দরজা বন্ধ করে সে সিড়ি দিয়ে নেমে তারপর পথে নেমে হাঁটতে শুরু করে।
একটি বড় পথে ধরে সে হেঁটে চলেছে।
(কপিরাইট – পারফেক্ট পলিটিক্স)

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -