কলকাতা – অখিল ভারতীয় সংস্কৃতি পরিষদের উদ্যোগে ব্রিগেডে অনুষ্ঠিত হল ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ’ অনুষ্ঠান। আর স্বাভাবিকভাবেই গীতাপাঠের অনুষ্ঠান নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে শাসক বনাম বিরোধীর রাজনৈতিক তর্জা। রবিবার ব্রিগেডে লক্ষ মানুষ কি জড়ো হয়েছিলেন? এই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন শাসকদল তৃণমূলের নেতারা। আর তা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে উঠেছে। পালটা বিজেপির নেতারাও এনিয়ে যুক্তিতক্কে নেমে পড়েছেন এই দাবি করে যে অনুষ্ঠান সফল হয়েছে। তবে রাজনৈতিক তর্জার মাঝে এই অনুষ্ঠানকে প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে লিখিত বার্তা দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তাতেই জয় দেখছেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির নেতারা। আমন্ত্রণ নিয়ে দিল্লি গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী দফতরও জানিয়েছিল, মোদী কলকাতার অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ‘কাজের চাপ’ থাকায় প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে পারেননি। তবে বঙ্গ বিজেপির নেতারা যাতে মুষরে না পড়েন সেজন্য রবিবার ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ’-এর অনুষ্ঠান শুরু হতেই প্রধানমন্ত্রীর তরফে লিখিত বার্তা পাঠানো হয়।
তাতে মোদী লেখেন, ‘‘সনাতন সংস্কৃতি পরিষদ, মতিলাল ভারততীর্থ সেবা মিশন আশ্রম এবং অখিল ভারতীয় সংস্কৃত পরিষদের উদ্যোগে কলকাতায় ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ’ কর্মসূচির যে আয়োজন করা হয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এটাই আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য। একইসঙ্গে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যও আমাদের শক্তি। সেই মহাভারতের সময় থেকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, বর্তমান সময়েও গীতা আমাদের অনুপ্রাণিত করে। গীতা জ্ঞানের ভান্ডার। জীবনের চালিকাশক্তি। ভারতের সংস্কৃতি অনুযায়ী জীবনযাপনের এবং অগ্রগতির বহু পরস্পর সংযুক্ত পথ দেখায় গীতা।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত, একসঙ্গে এত মানুষের কণ্ঠে গীতাপাঠ আমাদের সামাজিক সম্প্রীতিকেই আরও জোরদার করবে। দেশের উন্নয়ন-যাত্রার ক্ষেত্রেও যা আবশ্যক। উন্নত, শক্তিশালী ভারত গড়ে তোলার জন্য ২০৪৭ সাল পর্যন্ত সুযোগ আছে। ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ’ সকলের জন্য শান্তি নিয়ে আসুক। আয়োজকদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’’
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদী গীতা পাঠের অনুষ্ঠান নিয়ে কী বললেন না বললেন তা নিয়ে মোটেও চর্চায় রাজি নয় শাসকদল তৃণমূলের নেতারা। তার বদলে বরং তাঁদের দাবি, এই লোক দেখানো অনুষ্ঠানে লোক হয়নি। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সোশাল মিডিয়ায় ব্রিগেড মাঠের ফাঁকা ছবি শেয়ার করে বিজেপিকে খোঁচা দিয়ে মন্তব্য করেন, ‘‘গীতাপাঠের সময়ে ব্রিগেড। ভাই, ব্রিগেড ভাড়া না করে শ্রদ্ধানন্দ পার্কে করলেই পারতেন। এ তো গীতার অপমান।’’
কিন্তু শাসকদলের এমন দাবি মানতে রাজি নন বিজেপির নেতারা। বিরোধীদলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পালটা দাবি করেন, গীতাপাঠের অনুষ্ঠান সফল হয়েছে। বরং পালটা তিনি প্রশ্ন তোলেন, পার্কে স্ট্রিটে ৩ হাজার পুলিশ অথচ গীতাপাঠের অনুষ্ঠানে কোনও পুলিশ নেই কেন?
শাসকদল তৃণমূলকে পালটা খোঁচা দিতে দেখা যায় রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকেও। তিনি কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘এটার সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূল কংগ্রেসের কাজ এসব বলা। ওরা দুর্নীতি থেকে মাথা তুলতে পারছে না। গীতাপাঠ নিয়ে আর ভাল কী বলবে।’’
কিন্তু বিজেপি ছাড়তে নারাজ কুণাল ঘোষ। তিনি ফের খোঁচা দিয়ে বলেন, পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘লক্ষাধিক নয়, গীতাপাঠে যোগ দিয়েছেন ৩ হাজার ৭৫০ জন। গীতাকে সবাই সম্মান করে। কিন্তু রাজনীতি করছে বিজেপি। ব্রিগেড কেন, শ্রদ্ধানন্দ পার্ক ভাড়া করলেই হয়ে যেত। লোক হবে না, বুঝতে পেরেই আসেননি প্রধানমন্ত্রী।’
পরিষ্কার কথায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গীতাপাঠের অনুষ্ঠানে না আসাকে রাজ্য বিজেপির ব্যর্থতা হিসেবে তুলে ধরতে চায় তৃণমূল। উলটো দিকে বিজেপির নেতারা ভাঙলেও মচকাতে নারাজ। প্রধানমন্ত্রী না আসায় গীতাপাঠের অনুষ্ঠান যে অনেকটাই মণি হারা ফণি হয়ে গিয়েছে – সেটা তাঁরা ভালোমতই বুঝতে পারছেন। কিন্তু আর যাই হোক সেকথা তো আর বিরোধীদের কাছে স্বীকার করা যায় না।