নয়াদিল্লি – ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে বড়সড় ধাক্কা খেলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নিষেধাজ্ঞা ধোপে টিকল না। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
এই সিনেমা দেখানো হলে বাংলায় অশান্তি হতে পারে – এই যুক্তি খাড়া করে পশ্চিমবঙ্গে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ সিনেমার প্রদর্শন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এমন যুক্তি মেনে নিতে পারেননি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র শিল্পীরা। পালটা যুক্তিতে তাঁরা বলেন, সারা দেশে যখন নির্বিঘ্নে কেরালা স্টোরি চলছে, পশ্চিমবঙ্গে আলাদা করে অশান্তি হবে কেন?
এমনকী, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র পরিচালক সুদীপ্ত সেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ করে একথাও বলেছিলেন, ‘‘দিদি, দয়া করে আপনি আগে সিনেমাটি দেখুন। তারপরই কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন।’’ পাশাপাশি সিনেমাটি পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ হওয়ায় প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর এক সময়ের অতি ঘণিষ্ঠ শিল্পী শুভাপ্রশন্ন।
কিন্তু তারপরেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে পিছোন নি। এরপরই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ছবির নির্মাতারা। সেই মামলাতেই বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, ”শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের আবেগের উপর নির্ভর করে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা যায় না। মানুষের আবেগ নিয়ন্ত্রিত হওয়া দরকার। যদি আপনার পছন্দ না হয়, তাহলে দেখবেন না। বক্স অফিসের উপর ছেড়ে দিন পুরো বিষয়টা।”
এই মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের আরও পর্যবেক্ষণ, দেশের সব রাজ্যেই ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ প্রদর্শিত হচ্ছে। আর কোথাও তেমন কোনও অশান্তির খবর প্রকাশ্যে আসেনি। বাংলাতেও যে তিন দিন ছবিটি চলেছে, তাতে তেমন কোনও অশান্তির নজির নেই। এরপরেও কেন রাজ্য সরকার অশান্তির যুক্তি দেখিয়ে সিনেমাটি পশ্চিমবঙ্গে দেখানো বন্ধ রেখেছে? প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট।
শেষমেষ সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে জানিয়ে দেয়, এই ছবি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের কোনও যৌক্তিকতা নেই। প্রধান বিচারপতি জানান, নির্দিষ্ট করে বাংলার কোথাও এই ছবিতে ঘিরে অশান্তি হলে সেখানে ছবিটি নিষিদ্ধ করা যেত। কিন্তু কোনও অশান্তি ছাড়াই গোটা রাজ্যে ছবি নিষিদ্ধ করার যৌক্তিকতা খুঁজে পায়নি আদালত।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, সিনেমাটি নিষিদ্ধ করে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে। শুধুমাত্র ভাবনার ভিত্তিতে এ ভাবে মৌলিক অধিকার খর্ব করা যায় না। আগামী ১৮ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে।
‘কেরালা স্টোরি’ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এই স্থগিতাদেশের পর রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দিলে রাজ্যের আর কোনও দায় থাকে না। রাজ্য অশান্তি এড়াতে আগে থেকে সতর্কতা অবলম্বন করেছে। সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর এ বার কোথাও কিছু হলে সেটা আর রাজ্যের দায় নয়।’’
এ প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের পর এ বার কী পদক্ষেপ করা হবে, মুখ্যমন্ত্রী সেই সিদ্ধান্ত নেবেন। যে কোনও মুখ্যমন্ত্রীরই তাঁর রাজ্যের মঙ্গলের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে।’’
যদিও বিরোধীদের যুক্তি, আসলে সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খাওয়ার পর এখন কুণাল ঘোষ, শশী পাঁজারা মুখ্যমন্ত্রীর মুখরক্ষার চেষ্টা করছেন। ঘুরিয়ে সুপ্রিম কোর্টকেই হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখতে তৃণমূল কিংবা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কতটা মরিয়া, সেটা তৃণমূল নেতাদের কথাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।