নয়া দিল্লি – ‘তুমি চল ডালে ডালে, আমি চলি পাতায় পাতায়।’ বহুল প্রচলিত এই বাংলা প্রবাদবাক্যটি মোদী-শাহ কিংবা বিজেপির অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা জানেন কি না – জানা নেই। কিন্তু মোদী বিরোধী জোটের ‘ইন্ডিয়া’ (দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স) নামের বেলুন যেভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়ার কাজ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার শুরু করেছে, তাতে রাহুল-সনিয়া-মমতারা নির্ঘাত দাঁত দিয়ে নখ খুটতে বাধ্য হচ্ছেন।
আচমকাই সংসদের বিশেষ অধিবেশনের ডাক দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই সংসদের বিশেষ অধিবেশনের উদ্দেশ্য কী? এর উত্তর খুঁজতে বিরোধীরা যখন মাথার চুল ছিঁড়ছেন, ঠিক সেই সময়ই আরেকটি কান্ড ঘটল। রাষ্ট্রপতির আয়োজনে জি২০ বৈঠকে একটি নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’-র পরিবর্তে লেখা হল ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’। ব্যস! আর যায় কোথায়? বিরোধী জোটের ‘ঠাকুর্দা’ কংগ্রেস বুঝে ফেলল মোদী কোন খেলা খেলছেন। আর সেই খেলা কী – সেটা দেশবাসীকে (পড়ুন মোদী বিরোধী ২৭টি দলের নেতাদের) জানাতে এক্স -এ (আরে দাদা টুইটার) কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ লিখে ফেললেন, ‘‘তা হলে যেটা শুনেছিলাম, সেটাই সত্যি! আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি ভবনে জি২০ নেতাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’, অথচ চিরাচরিত ভাবে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ লেখাই দস্তুর।’’
জয়রাম রমেশের বক্তব্য, এতদিন ভারতের রাষ্ট্রপতি কাউকে কোনও চিঠি লিখলে তাতে চিরাচরিত ভাবে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ কথাটি লেখা থাকত। কিন্তু জি২০ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর চিঠিতে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’। সুতরাং জয়রাম রমেশ কিংবা কংগ্রেসের মতে, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। তাঁদের প্রশ্ন, আচমকা এমন বদলের কারণ কি?
এর উত্তর আবার মোদী বিরোধীরা নিজেরাই দিচ্ছেন। দুয়ে দুয়ে চার করে বলছেন, একে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’ অন্যদিকে সংসদের বিশেষ অধিবেশন – মানে ইন্ডিয়ার বদলে ভারত নামে পুরোপুরি শিলমোহর! কংগ্রেসীদের দাবি, যেদিন থেকে বিরোধীরা নিজেদের জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ দিয়েছে, সেদিন থেকেই মোদী-শাহ-নাড্ডা কিংবা বিজেপির অন্যনেতারা দেশকে ইন্ডিয়া বলছেন না। তার বদলে তাঁরা ভারত ভারত করতে শুরু করেছেন। এবার দেশের মানুষও যাতে ইংরেজদের দেওয়া ভারতের ইন্ডিয়া নাম ভুলতে বসেন – মোদী সরকার সেই ব্যবস্থায় করতে চাইছে।
যদিও আবার অনেকের দাবি, সংসদের বিশেষ অধিবেশনে ‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিল আনা হতে পারে। কেউ কেউ আবার এও বলছেন, মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ হতে পারে। এই প্রেক্ষিতেই জি২০ নেতাদের নৈশভোজে আমন্ত্রণের চিঠিতে ভারতের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণপত্র ঘিরে নতুন জল্পনা দানা বাঁধতে শুরু করেছে। কিন্তু বিরোধীরা এ নিয়ে উতলা হয়ে পড়লেও শুরু থেকেই এ বিষয়ে মোদী সরকার তার মুখে কুলুপ এঁটেছে। তাতে মোদী বিরোধীদের উদ্বেগের উত্তাপ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
আর এতেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসলে ‘ইন্ডিয়া’ নাম নিয়ে মোদী বিরোধীরা খেলতে গিয়ে গোল খেতে বসেছেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, নতুন বোতলে পুরনো মদ ঢেলে মোদী সরকারকে বেশ জব্দ করা যাবে। কিন্তু তলে তলে মোদী-শাহ-নাড্ডারা যে ‘ইন্ডিয়া’কে এমন ’অনাথ’ বানিয়ে দেবেন – সেটা রাহুল-সনিয়া-মমতা-শরদ পাওয়ার – নীতিশ কুমার – লালু যাদব -কেজরিওয়াল – উদ্ধব ঠাকরের নেতারা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। সুতরাং এখন হাত কামড়ানো ছাড়া আর উপায় কী রয়েছে!