আগরতলা: ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক দু’দিন আগে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করলেন ত্রিপুরার রাজা। রাজপরিবারের সদস্য তথা তিপ্রা মথা পার্টির প্রধান প্রদ্যোত মাণিক্য দেববর্মা এক টুইটে জানিয়েছেন, নিজের জাতির জন্য তিনি একটা বিশেষ লড়াইয়ে নেমেছিলেন। সে লড়াই শেষ। এবার তিনি ভোট রাজনীতির বাইরে চলে যাবেন। একইসঙ্গে চলতি বছরেই বিয়ে করার কথাও ঘোষণা করেছেন ত্রিপুরার রাজা। দুদিন আগেই আগরতলায় একটি আলাপচারিতার অনুষ্ঠানে ত্রিপুরার রাজা প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মন জানিয়েছিলেন, এবার তিনি বিয়ে করে সংসারী হবেন। তাঁর জীবনসঙ্গী দরকার। কেননা, খাঁ খাঁ করছে উড্ডয়ন্ত রাজপ্রাসাদ। শিলংয়ে ত্রিপুরা ক্যাসেল। এমনকী, কলকাতার বালিগঞ্জে পড়ে রয়েছে প্রাসাদ।
প্রদ্যোত বিক্রম মাণিক্য দেববর্মা নিজে কখনও ভোটে লড়েননি। দলের প্রথম সারির নেতাদেরও মনোনয়ন দেননি। এডিসি নির্বাচনে জিতেছিলেন ঠিকই। কিন্তু নিজের হাতে ব্যাটন থাকা সত্বেও দায়িত্ব নেননি। এবার উপজাতি সংরক্ষিত ২০টি আসনের বাইরে তপশিলী জাতি সংরক্ষিত এবং সাধারণ আসন মিলিয়ে ৪২টিতে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন প্রদ্যোৎ মাণিক্য দেববর্মা। হেলিকপ্টারে ভোটের প্রচারে রাজ্যের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটেও গিয়েছেন। কিন্তু তারপরই তাঁর ঘোষণা, এবারই শেষ। আর তিনি কোনও রাজনৈতিক ভাষণ দেবেন না।
Done my duty ! I hope people will realise all this effort was for them and not for my own interest ! This was a tough fight and I hope I have fought a good fight even though I felt alone at times
— Pradyot_Tripura (@PradyotManikya) February 14, 2023
এবারের বিধানসভা ভোটে রাজার দল তিপ্রা মথা খুব বেশি হলে ১০-১২টি আসন পেতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতি বিশ্লেষকরা। তার বেশি আসন পাওয়া তিপ্রা মথা‘র পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা, ত্রিপুরার বাঙালিরা ত্রিপুরা ভেঙে আলাদা তিপ্রাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন করেন না। এই পরিস্থিতিতে দলের প্রধানই যদি রাজনৈতিক সন্যাসের কথা ঘোষণা করে ফেলেন – তাহলে পার্টির ভবিষ্যৎ কী হবে? যদিও রাজা অবশ্য মুখে বলছেন, যতদিন না পৃথক তিপ্রাল্যান্ডের দাবি পূরণ হচ্ছে, ততদিন তিনি অভিভাবক হিসাবে পার্টির সঙ্গে থাকবেন।
আর এখানেই অনেকে রাজার এই রাজনৈতিক সন্যাসের পিছনে ভোট রণকৌশল দেখতে পাচ্ছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজা প্রদ্যোত মাণিক্য দেববর্মা আবেগের খেলা খেলতে চাইছেন। ঠিক ভোটের মুখে সন্যাসের কথা বলে ত্রিপুরার মানুষের সহানুভূতি আদায় করতে চাইছেন। কেননা, এর আগেও বেশ কয়েকবার তাঁকে একইভাবে রাজনৈতিক সন্যাসের কথা ঘোষণা করতে দেখা গেছে। কিন্তু আবেগের বশে সন্যাসের কথা বলার পর তাঁকে পরে ফের রাজনৈতিক জীবনে ফিরে আসতে দেখা গেছে। এবারও হয়তো সেই রকমই কিছু একটা হতে পারে বলে মনে করছেন প্রদ্যোত মাণিক্য দেববর্মার দল তিপ্র মথা’র সমর্থক-কর্মী ও নেতারা।