কলকাতা : নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ( Recruitment Scam ) একের পর এক রহস্যের জাল ঘনীভূত হচ্ছে। তদন্তকারী অফিসাররা যতই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করছেন, ততই রহস্যের জাল ক্রমশ ছড়িয়ে যাচ্ছে। কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডল এবং নিলাদ্রী ঘোষকে গ্রেফতার করার পর এবার সামনে এসেছে এক ‘রহস্যময়ী নারী’র নাম। যুব তৃণমূল নেতা (TMC Leader) কুন্তল ঘোষ(Kuntal Ghosh) এই রহস্যময়ী নারীকে সামনে নিয়ে এসেছে। নাম তাঁর হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায় (Haimanti Ganguly)? প্রশ্ন হচ্ছে, কে সেই ‘হৈমন্তী’? কেন কুন্তল ঘোষ তাঁর নাম নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িয়ে দিলেন?
ঠিক কী বলছেন কুন্তল ঘোষ
কুন্তল ঘোষ দাবি করছেন গোপাল দলপতির স্ত্রীর কাছে যেত নিয়োগ দুর্নীতির টাকা। বৃহস্পতিবার, আলিপুর কোর্ট থেকে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়ার সময় এই প্রসঙ্গে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন কুন্তল। এবিষয়ে সংবাদ মাধ্যম তাঁকে ছেঁকে ধরলে কুন্তল ঘাষ বলেন –
সাংবাদিক: টাকা কী জন্য তোলা হয়েছিল?
কুন্তল ঘোষ: আমি একটাই কথা বলছি, যা জানে তা হৈমন্তী গাঙ্গুলি।
তাপসদাও জানে, তদন্তে যেটা উঠে এসেছে সেটা হল হৈমন্তী গাঙ্গুলি।
কে এই রহস্য়ময়ী ‘হৈমন্তী’?
কুন্তলের দাবি, এই হৈমন্তী গাঙ্গুলি হলেন, গোপাল দলপতির স্ত্রী। আর এই গোপাল দলপতির আসল নাম আরমান গঙ্গোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে খোঁজ মিলছে না গোপাল দলপতির। গোপাল দলপতি ওরফে আরমান গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী-র নামে নথিভুক্ত মুম্বইয়ের এক সংস্থা সিরোকো পার্টনার্সের নাম। আর সূত্রের দাবি, মুম্বইয়ের প্রাণকেন্দ্র নরিম্য়ান পয়েন্টস-এ না কী রহস্য়ময়ী হৈমন্তীর অফিস।
মিডিয়া সূত্রে আরও যেটা জানা যাচ্ছে, হাওড়ার বাকসাড়া রোডে হৈমন্তীর বাপের বাড়ি। এই ঠিকানাতেই থাকে হৈমন্তীর পরিবার। পরিবারে রয়েছেন হৈমন্তীর বাবা-মা-ছোট বোন। ১০ দিন আগেও বাড়ি এসেছিল হৈমন্তী, দাবি ‘রহস্যময়ী’র পরিবারের। কিন্তু তারপর থেকেই আর কোনও খোঁজ নেই।
হৈমন্তীর কলকাতা যোগ
কিন্তুর রহস্যের মোড়ক এখানেই শেষ হচ্ছে না। মিডিয়া সূত্রে আরও যেটা জানা যাচ্ছে – খাস কলকাতার বুকেও রয়েছে নিয়োগ দুর্নীতির রহস্যময়ী নারী হৈমন্তীর অফিস। ডালহৌসী এলাকার একটি বিল্ডিংয়ের ৫ তলায় ৪১২ নম্বর রুমে রয়েছে হৈমন্তী অ্য়াগ্রো প্রডাক্ট প্রাইভেট লিমিটেডের অফিস।
সেই অফিস বর্তমানে তালাবন্ধ। তবে, দরজার বাইরে একটি ফোন নম্বর দেওয়া। সেই নম্বরে ফোন করলে, হিন্দি ও মারাঠি ভাষায় অটোমেটিকালি বলা হচ্ছে এই নম্বরটি ইনঅ্য়াক্টিভ রয়েছে। আশপাশের অফিসের কর্মীদের দাবি, হৈমন্তীর অফিসটি অনেকদিন ধরেই তালাবন্ধ।
রহস্যের জট আরও বাড়ছে কেন
নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডের তদন্তকারী অফিসারদের কাছে এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন, হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায় কোথায়? গোপাল দলপতিকে যখন এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, উত্তরে গোপাল দলপতি বলেছিলেন, তিনি জানেন না। কয়েক বছর আগেই স্ত্রী ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁর কোনও ফোন নম্বরও তাঁর কাছে নেই। গোপাল দলপতি দাবি করেছেন, কুন্তলের মুখে তিনি কালীঘাটের যে কাকুর কথা শুনেছিলেন, তাঁর কাছে যেত নিয়োগ দুর্নীতির টাকা।
এরপর থেকে এই রহস্যময়ীর খোঁজ করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। গোপাল দলপতি দাবি করেছেন, কুন্তলের মুখে তিনি কালীঘাটের যে কাকুর কথা শুনেছিলেন, তাঁর কাছে যেত নিয়োগ দুর্নীতির টাকা। অন্যদিকে, এবার কুন্তল ঘোষ দাবি করছেন গোপাল দলপতির স্ত্রীর কাছে যেত নিয়োগ দুর্নীতির টাকা। আর এর মধ্যেই, বুধবার গোপাল দলপতিকে তলব করেছিল সিবিআই। যদিও, হাজিরা দেননি তিনি। তার পর থেকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না গোপাল দলপতিকে।
আরও তৎপর হয়ে উঠেছে সিবিআই ইডি
এদিকে সিবিআই সূত্রে খবর, একইসঙ্গে রাজ্য়ে ইডি এবং সিবিআই শীর্ষ কর্তারা হাজির হয়েছেন। আর তাতেই নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন সিবিআইয়ের অ্য়াডিশনাল ডিরেক্টর অজয় ভাটনগর এবং ইডির ডিরেক্টর সঞ্জয় মিশ্র। হঠাৎ তাঁদের এই সফর নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতেও।
কেন এই জোড়া কর্তাদের সফর? নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে এখন নতুন নতুন নাম সামনে আসছে। কুন্তল, তাপস, চন্দন নতুন করে ধরা পড়েছে। এবার নাম আসছে এক রহস্যময়ী নারী হৈমন্তীর নাম। তার উপর টাকা লেনদেন একটা বড় আকার ধারণ করেছে। তার সঙ্গে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলবেন দু’জনেই বলে সূত্রের খবর। এসএসসি দুর্নীতির তদন্ত কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে সেটা জানতে বৈঠক করবেন ইডির ডিরেক্টর সঞ্জয় মিশ্র। যে ৯ জনকে সিবিআই গ্রেফতার করেছে, তাঁদের জেরায় কাদের নাম উঠে এসেছে সেটা নিয়েও কথা বলতে পারেন সঞ্জয় মিশ্র।