Homeপাঁচফোড়নPorimoni: পরীমনির জীবনি, বাংলাদেশের বাস্তব জীবনের যেন দ্রৌপদী

Porimoni: পরীমনির জীবনি, বাংলাদেশের বাস্তব জীবনের যেন দ্রৌপদী

- Advertisement -

আজ বলব বাংলাদেশের সুন্দরী, বিতর্কিত নায়িকা পরীমনির (Porimoni) কথা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এক পুরুষের একাধিক নারীকে বিয়ে করার একাধিকা উদাহরণ আছে। কিন্তু এক নারীর বহু স্বামী সমাজ সেইভাবে আজও মেনে নেয় নি। তবে মহাভারতের মতো মহাকাব্যে দ্রৌপদীর পঞ্চস্বামীর কথা বলা হয়েছে। মহাকাব্যের এই রচনা সেইদিক থেকে আধুনিকতম ভাবনা বলা যেতেই পারে।

যদিও মহাভারতের দ্রৌপদীর ক্ষেত্রে কোনও ভাবেই নিজের ইচ্ছায় পঞ্চস্বামীকে মেনে নিয়েছিলেন, এমনটা কিন্তু বলা যায় না। কিন্তু এই ডিজিটাল যুগে স্বামীপরিবর্তন একপ্রকার ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা সে সেলিব্রিটি মহল হোক আর আমাদের সাধারণ জনজীবন। বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমনি (Porimoni) তারই যেন জলজ্যান্ত উদাহরণ। পরীমনির সঙ্গে আদৌ কি দ্রৌপদীর তুলনা চলে? নাকি পরীমনির জীবনকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হবে? আসুন দেখে নেওয়া যাক।

পরীমনির (Porimoni) হিন্দু না মুসলিম

১৯৯২ সালের ২৪ অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলায় জন্ম হয় শামসুন্নাহার স্মৃতির (পরীমনির আসল নাম)। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী ছিলেন এই স্মৃতি। সারক্ষীরা মহিলা কলেজ থেকে তিনি বাংলা ভাষায় স্নাতক পাস করেন।

ছোটবেলায় তিন বছর বয়সে মা সালমা সুলতানা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। এরপর তার বাবা মনিরুল ইসলাম পুলিশের চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় মন দেন।

পরীমনির (Porimoni) প্রথম স্বামী

এদিকে পরীমনির দেখভালের দায়িত্ব পরে তার নানা-নানীর ওপর। ২০১০ সালে তার এস এস সি পাশের আগেই নানার কথামত গ্রামের জাকির হোসেনে ছেলে ইসামাইল হোসেনকে বিবাহ করতে হয়।

গ্রামবাসিদের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ি ইসমাইল তখন বেকার। যৌতুক হিসেবে মোটরসাইকেল চেয়েছিল কিন্তু সেটা না পাওয়ায় স্মৃতি ও ইসমাইলের ঝামেলা শুরু হয়, এবং শেষে দু-বছর পরে তাদের বিচ্ছেদ হয়।

পরীমনির (Porimoni) বাবার মৃত্যু

২০১২ সালে বাবা মনিরুল ইসলাম মারা যান। ব্যাবসায়ে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দে কুপিয়ে খুন করা হয় মণিরুলকে। ছোটবেলায় মাতৃহারা এরপর প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদ ও বাবাকে খুন করা হয়েছে, এমন সব ঘটনা পরীমনি বা স্মৃতির জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে। 

পরীমনির (Porimoni) দ্বিতীয় স্বামী

আবার একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এই প্রেমিকের নাম ফিরদৌস কবীর সৌরভ। ২০১২ সালের ২৮ এপ্রিল শামসুন্নাহার স্মৃতির সাথে ফিরদৌস কবীর সৌরভের এক লক্ষ টাকা দেনমোহরে কাবিলনামায় সই করে বিবাহ হয়।

সৌরভ পেশায় একজন ফুটবল খেলোয়ার। আর স্মৃতি সহজ সরল এক গ্রামের মেয়ে। স্বামী সৌরভের হাত ধরেই প্রথম আসেন ঢাকার বনশ্রীতে আসেন পরীমনি ওরফ স্মৃতি এবং সেখানে বাসা নেন।

সৌরভ পরীমনি (Porimoni) বা স্মৃতিকে ফের কলেজে ভর্তি করে দেন উচ্চশিক্ষার জন্য। স্মৃতি বা পরীমনির চোখে ছিল নায়িকা হবার স্বপ্ন। সংসার করার সাথে সাথে তিনি বার বার খুঁজে চলেছেন কীভাবে সে অভিনয় জগতে প্রবেশ  করবেন। এই সময় তার একজন মিডিয়ার লোকের সাথে পরিচয় ঘটে। সেই ব্যক্তি তাঁর কিছু ছবি তুলে পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন।

পরীমনির (Porimoni) তৃতীয় স্বামী 

এরপর সেই ব্যক্তি তাকে মডেল ও অভিনেত্রী হবার স্বপ্নকে পূরণের উৎসাহ দেন। শুরু হয় মডেল জীবন। শুরু হয় জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়। শামসুন্নাহার স্মৃতি নাম পালটে নাম রাখেন পরীমনি (Porimoni)। লাইফ স্টাইল পাল্টাতে থাকে।

স্বাভাবিকভাবেই স্বামীর সাথে তিক্ততা শুরু হয়। এরই মধ্যে পরীমনি (Porimoni) উৎশৃঙ্খল জীবন যাপন শুরু হয়ে যায়। পরে মিডিয়ার সাথে জড়িত সেই ব্যক্তি তামিম হাসানকে পরীমনি বিয়ে করেছেন বলে সৌরভ জানতে পারেন।

সৌরভ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন ২০১৪ পর্যন্ত তার সাথে পরীমনি সম্পর্ক ছিল। এরপর ২০১৫ সালে ঢাকা পরিত্যাগ করেন সৌরভ।

এরপরে পরীমনি (Porimoni) ও সাংবাদিক তামিম হাসানের মধ্যে বাগদান হয় ২০১৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি। দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কের পর তাঁরা বাগদানের তথ্য জানান। কথিত আছে ২০১৬ সালেই তাঁদের সম্পর্ক ও বিবাহ হয়ে গিয়েছিল।     

পরীমনির (Porimoni) চতুর্থ স্বামী

এর কিছুদিন বাদেই ১০ মার্চ ২০২০ সাথে পরীমনি বিয়ে করেন কামরুজ্জামান রণিকে। রণি ঢালিউডের একজন সহকারী পরিচালক ও নাট্যকর্মী। নাটকীয় সেই বিয়েতে মাত্র তিন টাকা কাবিল করেছিলেন।

রণিকে বিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করে পরীমনি (Porimoni) বলেছিলেন কাবিল কোনও বিষয়ই না, পারস্পরিক সম্পর্কটাই আসল কথা। কিন্তু কিছুদিন যাবার পরেই তাদের সম্পর্কের বিষয়টা আড়াল হতে থাকে।

এরপর পরীমনি একদিন জানান তাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। আর বিয়েটাও তিনি সিরিয়াসলি করেন নি।   

পরীমনির (Porimoni) পঞ্চম স্বামী

সবশেষে চলতি বছরের ২০২২ জানুয়ারি মাসে বিয়ে হয় পরীমনি ও শরীফুল রাজের। মাত্র সাতদিনের পরিচয়েই শরীফুলকে বিয়ে করেছিলেন পরীমনি।

একসময় এই বিবাহেও ইতি টেনে বিতর্কিত হন অভিনেত্রী। একটি সোশাল সাইটে ঘোষণা করেন – ‘আমি আজ রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম এবং নিজেকেও মুক্ত করলাম একটা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে। জীবনে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার থেকে জরুরী আর কিছুই নেই।’

পরীমনির (Porimoni) সন্তান

হ্যাঁ, এমনই চাঞ্চল্যকর পোস্ট করা হয়েছে পরীমনি ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে। তাঁর স্বামী শরীফুল রাজ ‘দামাল’ সহ-অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিমের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়েছেন এমন অভিযোগ এনেছিলেন পরীমনি।

পরে স্বামীর সঙ্গে ফের মিটমাট হয়ে যায় পরীমনির। আর ১০ই আগস্ট রাজ-পরীর কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে পুত্রসন্তান, শাহেম মুহাম্মদ রাজ্য। আর আজ তাঁদের সন্তান রাজ্যকে নিয়ে তারা ভালোই দিন কাটাচ্ছেন অভিনেত্রী।

পরীমনির (Porimoni) ধর্ষণের ঘটনা

পরীমনি ২০২১ সালের ৮ জুন বাংলাদেশের এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। পরীমনি নিজেই সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়ে ছিলেন, রাতে পারিবারিক বন্ধু, অমি ও ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী জিমির সঙ্গে বাইরে বের হন।

বন্ধুটি তাঁদের নিয়ে যান আশুলিয়ার একটি ক্লাবে। সেখানে মদ্যপানরত কয়েকজনের সঙ্গে পরীমনির পরিচয় করিয়ে দেন অমি। ওই ব্যক্তিদেরই একজন হঠাৎ জোর করে তাঁর মুখে পানীয়র গ্লাস চেপে ধরেন এবং ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় মারধর করা হয় পরীর সঙ্গে থাকা জিমিকেও।

পরীমনির আরও জানান, ঘটনার পরপরই বনানী থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন তিনি। তবে সে সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও কর্মকর্তা তাঁর অভিযোগ রেকর্ড করেননি। বরং সকালে এসে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন।

এ সময় পুলিশের সাহায্যে পরীমনি হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়েও আতঙ্কবশত চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যান। এ ঘটনায় মারাত্মক ভেঙে পড়েন পরীমনি। ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

এরপর এক ফেসবুক পোস্টে পরীমনি অভিযোগ করেন, তাঁকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ফেসবুক পোস্টে এই অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দাবি করেন পরীমনি।

শেখ হাসিনাকে পরীমনির (Porimoni) চিঠি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মা সম্বোধন করে পরীমনি লেখেন, ‘আমার আপনাকে দরকার মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে দরকার মা। মা আমি বাঁচতে চাই। আমাকে বাঁচিয়ে নাও মা।’

পরীমনি লেখেন, ‘আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেইপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’

তিনি লেখেন, ‘এই বিচার কই চাইব আমি? কোথায় চাইব? কে করবে সঠিক বিচার? আমি খুঁজে পাইনি গত চার দিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্রবন্ধু বেনজীর আহমেদ আইজিপি স্যার! আমি কাউকে পাই না মা।’

ক’দিন পরে পরীমনির করা মামলার প্রধান আসামি নাসির ইউ মাহমুদ, অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশ পুলিশ।

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -