নয়াদিল্লি – প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নিয়েছেন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। সুপ্রিম কোর্টের নতুন প্রধান বিচারপতি হিসাবে শপথ নিলেন সঞ্জীব খন্না। দেশের ৫১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে সোমবার শপথ নিলেন তিনি। এদিন নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সকাল ১০টায় রাষ্ট্রপতি ভবনে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। আগামী ছ’মাস দেশের বিচারব্যবস্থার শীর্ষপদে থাকবেন তিনি। তাঁর অবসর গ্রহণের দিন ২০২৫-এর ১৩ মে।
সাধারণত অবসর গ্রহণের আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি তাঁর উত্তরসূরি হিসাবে শীর্ষ আদালতের প্রবীণতম বিচারপতির নাম সুপারিশ করেন। সেই প্রথা মেনেই সদ্য প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হিসাবে সম্প্রতি বিচারপতি খন্নার নাম সুপারিশ করেছিলেন। তার পরেই রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
কে এই বিচারপতি সঞ্জীব খন্না
দিল্লিতে জন্ম। মডার্ন স্কুল বারাখাম্বা রোডে পড়াশোনা করেছেন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। এরপর তিনি যান স্টেন স্টিফেন্স কলেজে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ল কলেজে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। তাঁর বাবা বিচারপতি দেব রাজ খান্না ছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি। তাঁর মা সরোজ খান্না ছিলেন লেডি শ্রীরাম কলেজের অধ্যাপিকা।
২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি আয়কর বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী ছিলেন। ২০০৫ সালে দিল্লি হাইকোর্টে বিচারপতি হিসাবে কাজে যোগ দেওয়ার আগে আইনজীবী হিসাবে কাজ করেছেন প্রধান বিচারপতি খান্না। দিল্লির জেলা আদালতে আইনজীবী হিসাবে কর্মজীবন শুরু তাঁর। পরে তিনি দিল্লি হাই কোর্টের আইনজীবী হন।
২০০৫ সালে দিল্লি হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত হন তিনি। ২০০৬ সালে স্থায়ী বিচারপতি হন। ২০১৯ সালের ১৮ জানুয়ারি বিচারপতি খন্না সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত হন। বিচারপতি খন্না মুষ্টিমেয় কয়েক জনের মধ্যে অন্যতম, যাঁরা দেশের কোনও হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি না হয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হয়েছেন।
বিচারপতি খন্নার গুরুত্বপূর্ণ রায়
সুপ্রিম কোর্টের একাধিক যুগান্তকারী রায়ের অংশ থেকেছেন সঞ্জীব খান্না। সেই তালিকায় রয়েছে- Electronic Voting Machines-এর পবিত্রতা রক্ষা থেকে শুরু করে জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ৩৭০ ধারা বাতিল। এর পাশাপাশি তিনি সেই বেঞ্চেও ছিলেন, যে বেঞ্চ ইলেক্টোরাল বন্ড স্কিমাকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছিলেন।
সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের অন্যতম বিচারপতি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া নির্বাচনী বন্ড, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের জামিন-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের অংশ থেকেছেন বিচারপতি খন্না।
চলতি বছরে অগস্টে মুম্বইয়ের এক কলেজে পড়ুয়াদের বোরখা, হিজাব পরার উপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত মামলারও শুনানি হয়েছিল তাঁর বেঞ্চে। কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্দেশিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে, তাতে আংশিক স্থগিতাদেশ দিয়েছিল তাঁর বেঞ্চ।
বাবা- কাকাও ছিলেন নামকরা বিচারপতি
বিচারপতি খন্নার আরও একটি পরিচয় হল, তিনি সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি হংসরাজ খন্নার ভাইপো। তাঁর পিতা দিল্লি হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দেবরাজ খন্না। বিচারপতি হংসরাজ যে এজলাস থেকে অবসর নিয়েছিলেন, সেই এজলাস থেকেই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তিনি।
সঞ্জীব খান্নার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- উপ রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং -সহ অন্যান্য মন্ত্রীরা। সদ্য প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ও ছিলেন অনুষ্ঠানে।
প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার দেশের ৫০তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসর নিয়েছে ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। ২০২২ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর, দু’বছর গুরুদায়িত্ব পালন করে গেছেন তিনি। তাঁর জায়গায় এবার প্রধান বিচারপতি হলেন সঞ্জীব খন্না।
অন্যদিকে, বিচারপতি হিসেবে অবসর নেওয়ার পর CJI চন্দ্রচূড় কী করেন, সেদিকে তাকিয়ে সকলেই। কারণ বাবার দেখানো পথে এগিয়ে প্রধান বিচারপতি হিসেবে যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি, তাঁকে ঘিরে প্রত্যাশা ছিল তুঙ্গে। কেউ কেউ ‘রকস্টার প্রধান বিচারপতি’ বলেও উল্লেখ করেন। সবসময় প্রত্যাশা পূরণ হয় না। তাই কার্যকালের শেষ দিকে একাধিক মামলার রায় নিয়ে সমালোচনা শুনতে হয়েছে তাঁকেও।