মাথাভাঙা – ইদানিং কথায় কথায় ক্ষমা চাইছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দক্ষিণবঙ্গে সভা করার সময় একাধিকবার তাঁকে দলের কিছু নেতার হয়ে জনতার উদ্দেশ্যে ক্ষমা চাইতে দেখা গেছে। শনিবার উত্তরবঙ্গের মাথাভাঙায় সভা করতে গিয়েও ঠিক একই কাজ করতে দেখা গেল তৃণমূলের নাম্বার টু‘কে। তবে দলের নেতাদের হয়ে নয়, বরং এদিন তিনি কোচবিহারের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইলেন নিশীথ প্রামাণিকের জন্য।
অভিষেক এদিন তাঁর ভাষণে বলেন, ‘‘কোচবিহারের সাংসদ, যিনি এখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, তিনি এক সময় আমার অধীনেই ছিলেন। কিন্তু আমি জানতে পারি ২০১৮ সালে আমার নাম করে পঞ্চায়েতে প্রার্থী করেছেন। সেই সময়েই তাঁকে বহিষ্কার করেছিলাম। আমরা যাঁদের আবর্জনা ভেবে বহিষ্কার করি, অন্যরা তাঁদের সম্পদ ভেবে নেয়। আমি মনে করি দুষ্টু গোরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল।’’ এর পরেই অভিষেক বলেন, ‘‘আমরা ভুল করলে ভুল স্বীকার করতে জানি। তাই আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। আপনারা আমার সঙ্গে থাকলে আমি সব ঠিক করব। এখন থেকে কোচবিহারের দায়িত্ব আমার। আপনাদের সমর্থন পেলেই সব কিছু ঠিক করা সম্ভব আমার পক্ষে।’’
এদিন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আরও দাবি করেন, ‘‘আমার নাম করে নৌকা ইত্যাদি প্রতীকে পঞ্চায়েত ভোটে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করিয়েছিল। আমি জেনেই তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করি। সেই সময় কিন্তু আমি কোচবিহারের দায়িত্বে ছিলাম না। এখন কোচবিহারের দায়িত্ব আমার নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছি। তাই সেই সময় যে সব ভুল হয়েছিল এ বার আর তা হবে না।’’ শুধু এ ভাবেই আক্রমণ করে থামেননি অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘কোচবিহারের সমস্যা নিয়ে গত চার বছরে একটি বারের জন্য সংসদে সরব হননি এখানকার বিজেপি সাংসদ। এমনকি কোভিডের সময়ে কোচবিহারের মানুষ কেমন আছেন, তার খোঁজও নেওয়া হয়নি। সেই কঠিন সময়ে আপনাদের পাশে ছিল তৃণমূল।’’ নিশীথের কথা উল্লেখ করে কোচবিহারবাসীর প্রতি অভিষেকের সতর্কবার্তা, ‘‘কেউ আমার লোক নয়, যাঁরা মঞ্চে আছেন তাঁরাও নয়। যাঁরা নীচের ঘোরাফেরা করছেন তাঁরাও নয়। যদি কেউ বলে আমি অভিষেকের লোক, তাঁকে দাঁড় করিয়ে ‘এক ডাকে অভিষেক’-এ ফোন করুন।’’
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে অভিষেক ছিলেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি। তাঁর নেতৃত্বেই কোচবিহারে রাজনীতি করতেন নিশীথ। ওই বছরই পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিশীথের বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থীদের নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করানোর অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁকে বহিষ্কার করা হয় তৃণমূল থেকে। ২০১৯ সালে নিশীথ যোগদান করেন বিজেপিতে। ওই বছরই বিজেপির প্রতীকে কোচবিহার থেকে প্রার্থী হন নিশীথ। তৃণমূল প্রার্থী পরেশ অধিকারীকে হারিয়ে সাংসদ হন নিশীথ। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটেও তাঁকে দিনহাটা কেন্দ্রে প্রার্থী করে বিজেপি। সেই ভোটেও উদয়ন গুহকে হারিয়ে জয় পান নিশীথ। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের নির্দেশে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। পরে রাজ্য থেকে চার জনকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী করা হলে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হন নিশীথ। সেই নিশীথকেই কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন অভিষেক।