মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) জন্য আজব পরিস্থিতি। পরিস্থিতি বলছে, এক হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তব বলছে, এক হওয়া সম্ভ নয়। ব্যাপারটা খুলেই বলা যাক। এই মুহূর্তে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ বাতিলকে ঘিরে ভারতের জাতীয় রাজনীতি তোলপাড়।
সিপিএম এবং তৃণমূল দুই দলই লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লার এমন সিদ্ধান্তের জোরদার বিরোধিতা করেছে। এবং বলাই বাহুল্য রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) বিরুদ্ধে মোদী সরকারের এমন ‘শাস্তি’কে ঘিরে বিরোধীদের সামনে নতুন করে একজোট হওয়ার একটা বড় সুযোগ চলে এসেছে।
কিন্তু এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতিতে আবার সিপিএম তৃণমূলের ভয়ঙ্কর ঠোকাঠুকি শুরু হয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলের যত রাগ, তা গিয়ে পড়েছে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর (Sujan Chakraborty) ওপরে। এবং পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য শুক্রবারই সিপিএম আমলের চাকরি দুর্নীতি নিয়ে খুব শিগগিরই শ্বেতপত্র প্রকাশের হুঁশিয়ারি দিয়ে বসে আছেন।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের কথা ভাবতে গেলে জাতীয় রাজনীতিতে মোদী বিরোধী জোটে সিপিএম তৃণমূলের এক মঞ্চে থাকা কার্যত অসম্ভব বলে মনে হয়। আবার অন্যদিকে দেশ থেকে মোদী সরকারকে হটাতে গেলে দিল্লিতে জোট বাঁধলে পশ্চিমবঙ্গে সুজন চক্রবর্তীর মতো নেতাদের ছাড় দিতে হয়। এই অবস্থায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী করেন, সেটা নিশ্চয় সময়ই বলবে।
তবে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ বাতিল হতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সীতারাম ইয়েচুরির মোদীকে আক্রমণের ভাষা একদম মিলে গিয়েছে। টুইটারে তৃণমূল নেত্রী লিখেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর নতুন ভারতে বিরোধী নেতারাই বিজেপির মূল নিশানা হয়ে উঠেছেন। যখন অপরাধের ইতিহাস থাকা বিজেপি নেতাদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, তখন বিরোধী নেতাদের বরখাস্ত করা হচ্ছে ভাষণ দেওয়ার জন্য! আজ, গণতন্ত্র নতুন নীচতায় পৌঁছল।’’
অন্যদিকে, মমতার মতোই রাহুলের পাশে থেকে বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘বিরোধী নেতাদের কোণঠাসা করতে বিজেপি এখন ফৌজদারি মানহানির পথ নিচ্ছে, যা নিন্দনীয়। যেমনটা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে করা হল।’’ বিরোধীদের বিরুদ্ধে ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ‘অপব্যবহার’ নিয়েও সরব হয়েছেন ইয়েচুরি।
খেয়াল করুন, ইডি-সিবিআইয়ের অপব্যবহারের অভিযোগ প্রায়শই করে থাকেন মমতা। এ বার সেই একই সুর শোনা গেল ইয়েচুরির কণ্ঠে। কিন্তু সুর এক হলেও মোদীর বিরুদ্ধে সিপিএম-তৃণমূল কি এক হতে পারবে? মাঝে যদি কংগ্রেস থাকেও বাংলার লড়াই কি দিল্লির স্বার্থে জলাঞ্জলি দেবে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিপিএম-তৃণমূল কিংবা ইয়েচুরি-মমতা বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হতেই পারেন। যদি মমতা সিপিএমের ফর্মুলায় চলে। সিপিএমের বাংলায় কুস্তি আর দিল্লিতে দোস্তির ফর্মুলা পুরনো হয়ে গেলেও তৃণমূলের জন্য সেটা এখন কাজে লাগতে পারে।