মঙ্গলবার, জানুয়ারি 14, 2025
মঙ্গলবার, জানুয়ারি 14, 2025
Homeসম্পাদকীয়Abhishek Banerjee: টার্গেট মোটে ১টি আসন, অথচ ত্রিপুরা-মেঘালয়ে বিজেপি তাড়ানোর হুঙ্কার দিচ্ছেন...

Abhishek Banerjee: টার্গেট মোটে ১টি আসন, অথচ ত্রিপুরা-মেঘালয়ে বিজেপি তাড়ানোর হুঙ্কার দিচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

- Advertisement -

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের স্বপ্ন নিয়ে নতুন ইঙ্গিত দিলেন। নতুনই বলব। কেননা, এতদিন তৃণমূল বাংলার বাইরে ভিন রাজ্যে ক্ষমতা দখলের কথা বলত। এতদিনে অভিষেক ব্যানার্জী স্বীকার করলেন, ক্ষমতা দখলই বটে – তবে একটু ঘুরিয়ে। মানে, তৃণমূলের একার পক্ষে তো আর অন্য কোনও রাজ্য দখল করা সম্ভব নয়, সুতরাং এবার ঘাসফুলের লক্ষ্য জোট সরকারে ঢুকে পড়া। নাহ, অভিষেক ব্যানার্জী খোলাখুলি একথা বলেন নি। কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা মুখে যা বলেন, তার অর্থ বুঝতে হলে একটু ঘুরিয়ে কান ধরতে হয়। তা না হলে, আসল কথাটাই বোঝা যায় না। তো সেই রকমই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে গিয়ে হুঙ্কার ছেড়েছেন, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের মধ্যে যে কোনও একটি রাজ্য থেকে তৃণমূল বিজেপিকে তাড়াবেই। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন চ্যালেঞ্জ তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের তাতিয়ে তুলবে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আর সামনেই যেহেতু সাগরদিঘিতে উপনির্বাচন, সুতরাং এই কথাটা বলা প্রয়োজন ছিল। হাজার হোক গোয়ায় ডাহা ফেল হওয়ার পর অভিষেকের সামনে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য তো এই দুই রাজ্যই হাতে রয়েছে। সুতরাং দু’টির একটিতে তৃণমূলকে অবশ্যই জিততে হবে। তা না হলে কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক দক্ষতা নিয়ে তৃণমূলেরই আনাচে-কানাচে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।

কিন্তু এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একজন বিচক্ষণ রাজনৈতিক নেতার মতোই কথা বলেছেন। তিনি বলতে পারতেন, ত্রিপুরা কিংবা মেঘালয়ের মধ্যে যে কোনও একটি রাজ্যে তৃণমূল সরকার গড়বে। কিন্তু তা না বলে তিনি একটু কথাটাকে ঘুরিয়ে দিলেন। এখন যদি ত্রিপুরার কথায় বলি, তাহলে সেখানে তৃণমূল ২৬টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ত্রিপুরায় মোট বিধানসভা আসনের সংখ্যা ৬০। অর্থাৎ, সেখানে সরকার গড়তে হলে তৃণমূলের সব প্রার্থীকেই জিততে হবে। আর যাই হোক, ত্রিপুরা বিধানসভায় এমন ম্যাজিক তৃণমূল অন্তত দেখাতে পারবে না – এটা রাজনীতির শিশুক্লাসের ছাত্রও বলে দিতে পারবে। তারমানে তৃণমূল যদি সত্যিই ত্রিপুরায় ক্ষমতায় আসতে চায় তাহলে জোট সরকারের চেষ্টা করতে হবে। যদি বিজেপি সেখানে অতি খারাপ ফল করে তাহলে সেটা সম্ভব হলেও হতে পারে। সাদা বাংলায় ত্রিপুরায় যদি বিজেপি বিরোধী জোটের সরকার গড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় তাহলে তৃণমূল সেখানে ঢুকে পড়বে। আর সেটা করতে গেলে তৃণমূলের ত্রিপুরায় ১টি আসন জিতলেই হবে। অভিষেক ব্যানার্জী এই কথাটাই ঘুরিয়ে বললেন কি না – সেটাও কিন্তু ভেবে দেখতে হবে।

এবার হাতে রইল মেঘালয়। আসলে এই মেঘালয়কেই তুরুপের তাস বলে মনে করছে তৃণমূল। কেননা, ফোকটে কংগ্রেস বিধায়কদের ভাঙিয়ে ক’বছর আগে সেখানে তৃণমূল প্রধান বিরোধীদলের তকমা পেয়ে গিয়েছিল। মুকুল সাংমার নেতৃত্বে ১৩ জন বিধায়ক একই দিনে, একই সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দিয়ে মমতা ব্যানার্জীকে মাথায় তুলেছিল। ফলে মেঘালয়ে এবার সরকার গড়ার আশা তৃণমূল দেখতেই পারে। কিন্তু রাজনীতির কারবারিরা ভালোমতই জানেন, অভিষেক ব্যানার্জী যতটা জোর দিয়ে মেঘালয় কিংবা ত্রিপুরায় বিজেপিকে তাড়ানোর কথা বলছেন – ততটা মোটেও সহজ হবে না। মেঘালয়ে তো নয়ই। কেননা, ৬০ আসনের মেঘালয় বিধানসভায় বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা মোটে ২জন। সরকার চালাচ্ছে এনপিপি। আর এই ন্যাশনাল পিপলস পার্টির জোটে ঢুকে ২ বিজেপি বিধায়ক কোনও রকমে গেরুয়া শিবিরের মানরক্ষা করেছেন। তাহলে মেঘালয়ের ক্ষমতা থেকে বিজেপিকে তাড়ানোর কী আছে? মেঘালয়ে বিজেপির এই দু’টি আসনই তৃণমূল দখল করে নেবে – এই কথাটা অভিষেক বোঝাতে চাইছেন না তো?

আসলে অভিষেক ব্যানার্জী বড় গোলমেলে কথা বলেছেন। রাজনৈতিক সব নেতারাই সেটা বলে থাকেন। পাবলিক আর দলের কর্মী-সমর্থকদের তাতাতে নেতা-মন্ত্রীদের অনেক কথায় বলতে হয়। কিন্তু অভিষেক ব্যানার্জীও ভালোমত জানেন, ত্রিপুরা কিংবা মেঘালয়ে তৃণমূল শুধুমাত্র ১টি মাত্র, হ্যাঁ-দুই রাজ্য মিলিয়ে যদি ১টি আসনও তৃণমূল জেতে তাহলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানরক্ষা হয়ে যাবে। প্রতিজ্ঞা রক্ষা হয়ে যাবে। এরপর তো পাবলিক আর মিডিয়া কত শতাংশ ভোট তৃণমূল টেনে বিজেপিকে প্রায় উপড়ে ফেলেছে সেটা তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে বোঝাতে অসুবিধা হবে না। কিন্তু যদি এই ১টি আসনও এই দুই রাজ্যে না জোটে তাহলে কিন্তু মুশকিল হবে। পাবলিক কিংবা মিডিয়া কেন, পিসি কিংবা দিদি – তাঁকেও বোঝানো চাপের হয়ে যাবে। তা বলে এটা ভাবা ঠিক হবে না যে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ চলে যাবে। তিনি ছাড়া তৃণমূলে আর আছেন কে যে এই পদটি সামলাতে পারবে। সুতরাং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বুকঠুকে বিজেপির বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছুড়তে অসুবিধা কোথায়? পরেরটা না হয় পরেই দেখা যাবে।

আরও খবর
- Advertisment -

সবাই যা পড়ছেন

পছন্দের খবর