কলকাতা: এর আগে নিজে ডুবেছিলেন, এবার স্ত্রী-পুত্রকেও ডোবালেন তৃণমূলের ‘মানিক’ (Manik Bhattacharya)। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের স্ত্রী শতরূপা ভট্টাচার্য এবং পুত্র শৌভিক ভট্টাচার্যকে বুধবার ১২ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আগামী ৬ মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজতে থাকবেন তাঁরা।
মানিকের স্ত্রী ও পুত্রর বিরুদ্ধে অভিযোগ, এঁরা ঘুষের টাকা তছনছ করেছেন। নিয়োগ দুর্নীতির টাকায় বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। ইল্যান্ড, আমেরিকা, সুইৎজারল্যান্ড, ইউরোপ, চিন এমনকী আফ্রিকার নানা দেশেও মজা করে ঘুরে বেড়িয়েছেন মানিকের পুত্র। কখনও সখনও পরিবারকেও সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। এমনকী স্বয়ং মানিক ভট্টাচার্যও মাঝে-মধ্যে ছেলের এই বিদেশ ভ্রমণের সঙ্গী হয়েছেন।
আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, বিদেশ ভ্রমণের এত টাকা এল কোথা থেকে? ইডি তার তদন্তে জানতে পেরেছে, এত যে বিদেশ ভ্রমণ সেজন্য ব্যাঙ্কের টাকাও ব্যবহার করা হয়নি। কম করে ৫ কোটি টাকা নগদ খরচ হয়েছে এই বিদেশ ভ্রমণে। একজন বিধায়ক ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারী হিসেবে এতটাকা এল কোত্থেকে – এটাই ইডি মানিকের স্ত্রী ও পুত্রর কাছ থেকে জানতে চাইছে।
এমনিতে মানিক পুত্র শৌভিক ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করেছেন। রেসিডেন্স ভিসায় দীর্ঘদিন ইংল্যান্ডে কাটিয়েছেন। কিন্তু পড়াশোনার খরচের পাশাপাশি এত যে বিদেশ ভ্রমণ – এতটাকা মানিক ভট্টাচার্য যোগাড় করলেন কোত্থেকে? এদিকে আবার মাণিক ভট্টাচার্যর স্ত্রীর নামে মৃত এক ব্যক্তির সঙ্গে জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে টাকা পাওয়া গিয়েছে। সব মিলিয়ে রহস্য ক্রমশ ঘণীভূত হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মানিকের গ্রেফতারির পর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) যে সাপ্লিমেন্টরি চার্জশিট দিয়েছিল, সেখানে তাঁর স্ত্রী এবং পুত্রের নাম ছিল। তার পর বুধবার ইডির বিশেষ আদালতে হাজিরা দেন শতরূপা ও শৌভিক। আদালতে আগাম জামিনের আবেদন জানান দু’জনেই। সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন বিচারক।
যদিও মানিকের স্ত্রী, পুত্রের তরফে আইনজীবী আদালতে দাবি করেন, সমনের ভিত্তিতে তাঁর মক্কেলরা নিজে থেকেই হাজিরা দিয়েছেন। গ্রেফতার করে তাঁদের আনতে হয়নি। ইডির তদন্তেও তাঁরা সহযোগিতা করছেন। জামিনের জন্য যে কোনও শর্ত তাঁরা মানতে রাজি বলেও আদালতে জানান আইনজীবী।
কিন্তু শতরূপা ও শৌভিকের জামিনের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইডি আদালতে জানায়, মানিকের কাজ সংক্রান্ত তথ্য জানতেন তাঁর স্ত্রী। দুর্নীতিতে তাঁরও ভূমিকা থাকতে পারে। তা ছাড়া, মৃত এক ব্যক্তির সঙ্গে মানিকের স্ত্রীর যে জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের হদিস মিলেছে, তাতে দুর্নীতির টাকা থাকতে পারে বলে মনে করছে ইডি।