ঢাকা – ‘‘বাংলাদেশের রাস্তায় ইসকন ভক্তদের গণহত্যা শুরু করা হবে।’’ বাংলাদেশি মৌলবাদীদের এমন হুঁশিয়ারির পর ভারত ও আমেরিকার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেন ইসকনের এক সন্যাসী। ইসকনের পূর্বাঞ্চলীয় মুখপাত্র রাধারমণ দাস এমন হুঁশিয়ারির ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘মহম্মদ ইউনুসের সরকারকে বাংলাদেশি মুসলিমরা আল্টিমেটাম দিয়েছে যে ইসকনকে নিষিদ্ধ না করা হলে ভক্তদের ধরে ধরে খুন করতে শুরু করবে তারা।’’ যদিও এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি পারফেক্ট পলিটিক্স।
ভিডিয়োতে শোনা যাচ্ছে, এক বাংলাদেশি মৌলবাদী নেতা ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছেন মহম্মদ ইউনুসের সরকারের কাছে। এদিকে সেই সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের ক্যাপশনে রাধারমণ দাস লেখেন, এদিকে এই ভিডিয়োতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশাপাশি মার্কিন রাজনীতিবিদ তুলসী গাবার্ডকেও ট্যাগ করেন রাধারমণ দাস।
SOS to dear @pmoindia @narendramodi ji & @TulsiGabbard,
— Radharamn Das राधारमण दास (@RadharamnDas) November 15, 2024
Bangladeshi Muslims have given ultimatum to Md. Yunnus to ban ISKCON or they will start catching & brutally killing ISKCON devotees. The exact translation is: "We demand that government ban's ISKCON. If ISKCON is not banned… pic.twitter.com/g0NOKzzF0i
গত ৫ নভেম্বর ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন চট্টগ্রামের এক মুসলিম ব্যবসায়ী। ইসকনকে ‘জঙ্গি সংগঠন’-এর তকমা দেন তিনি। যার পরই স্থানীয় হিন্দুদের বিক্ষোভে কার্যত রণক্ষেত্রের রূপ নেয় চট্টগ্রাম। বাড়িতে ঢুকে হিন্দুদের মারধর ও গ্রেপ্তারের অভিযোগ ওঠে বাংলাদেশ সেনা ও পুলিশের বিরুদ্ধে। এবার ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলে ইউনুস সরকারকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে মুসলিমরা। গতকাল বৃহস্পতিবার এনিয়ে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন ইসকনের পূর্বাঞ্চলীয় মুখপাত্র রাধারমণ দাস।
ভারত ও আমেরিকার হস্তক্ষেপ দাবি করে এক্স হ্যান্ডেলে রাধারমণ দাস লেখেন, ‘বাংলাদেশি মুসলিমরা ইউনুস সরকারকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ইসকনকে নিষিদ্ধ করা না হলে তারা ইসকন ভক্তদের ধরে ধরে হত্যা করবে।’ তাঁর দাবি, এক মুসলিম কট্টরপন্থী নেতা বলেছেন, “আমরা ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। যদি তা না করা হয়, তাহলে দেশের রাস্তায় ইসকন ভক্তদের গণহত্যা শুরু করা হবে। হিন্দুদের হাত থেকে বাংলাদেশের পবিত্র ভূমি রক্ষা করতে হবে।” একই সঙ্গে রাধারমণ এই পোস্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও আমেরিকার রিপাবলিকান নেত্রী তুলসী গাবার্ডকে ট্যাগ করেন।
গতকালই বাংলাদেশের সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটির কোনও প্রয়োজন নেই বলে জানান অন্তর্বর্তী সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ আসাদুজ্জামান। সংবিধান সংক্রান্ত মামলায় বাংলাদেশ হাই কোর্টে তিনি বলেন, দেশের ৯০ শতাংশ নাগরিকই মুসলিম। তাই ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটির দরকার নেই। এর পরই নানা বিতর্ক শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে, এবার কি ইসলামিক রাষ্ট্র হয়ে যাবে বাংলাদেশ? আর যদি বাস্তবেই এমনটা হয় তাহলে হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অবস্থা যে আরও করুণ হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট আওয়ামি লিগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই হিন্দুরা নিপীড়নের শিকার হন। তাঁদের ঘরবাড়ি ও বেশ কয়েকটি মন্দির ধ্বংস করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। দুর্গাপুজোর সময়েও বেশ কয়েকটি মন্দিরকে হুমকি দেওয়া হয়। এর পর গত ৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের ঘটনায় শতাধিক হিন্দুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। সম্প্রতি বাংলাদেশি মৌলবাদী নেতার ভিডিয়ো প্রকাশ করে শুভেন্দু লিখেছিলেন, ‘ওরা যদি এভাবেই চলতে থাকে এবং ইসকনকে আক্রমণ করার প্ল্যান করে, তবে ওরা যেন তার পালটা পরিণাম মোকাবিলা করার জন্যও প্রস্তুত থাকে। এদের উদ্দেশ্যই ছিল সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো। ওরা কী স্লোগান তুলছে শুনুন মন দিয়ে। ইসকনকে ভাঙার কথা, গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা, আগুন ধরানোর কথা বলছে।’