ইস্তানবুল – মৃতর সংখ্যা তখনও গুণে ওঠা সম্ভব হয়নি। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল নিথর দেহর সংখ্যা। ৩০০ – ৬০০ – ১২০০ – ১৩০০। কিন্তু তারই মাঝে তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে আরও একবার কেঁপে উঠল তুরস্ক। এ বারও দেশের দক্ষিণ প্রান্তে। ভোরবেলায় তুরস্কের যে এলাকা আক্রান্ত হয়েছিল সেই কাহরামানমারাস প্রদেশের এলবিট জেলা ছিল ওই দ্বিতীয় ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল। স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২৪ মিনিটে দ্বিতীয়বার ভূমিকম্প হয় এখানে। কম্পন অনুভূত হয় সিরিয়ার দামাস্কাস, লাতাকিয়াতেও। তবে দ্বিতীয় বারের কম্পনের জেরে নতুন করে কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা স্পষ্ট করেনি তুরস্ক প্রশাসন। ইস্তানবুলের কান্দিল্লি মানমন্দির শুধু জানিয়েছে, ভোরবেলার থেকে খুব একটা কম ছিল না এই দ্বিতীয় ভূমিকম্পের তীব্রতা। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৫। যেখানে প্রথম কম্পনটির মাত্রা ৭.৮।
সোমবার স্থানীয় সময় ৪টে ১৭ মিনিট নাগাদ প্রথম ভূমিকম্প হয় তুরস্কে। এর পাশাপাশি কম্পন অনুভূত হয় সিরিয়াতেও। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৮। প্রথম ভূমিকম্পের ১১ মিনিটের মধ্যেই আফটারশক অনূভূত হয়। তার তীব্রতা ছিল ৬.৭। ৯ ঘণ্টায় এখনও পর্যন্ত মোট ২৯ টি আফটারশকের খবর পাওয়া গিয়েছে তুরস্ক ও সিরিয়াতেও। এখনও পর্যন্ত তুরস্ক, সিরিয়া মিলিয়ে ভূমিকম্পে মোট ১৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে এই সংখ্যা ২ হাজারের ওপরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
১৯৩৯ সালের পর তুরস্ক এমন ভয়াবহ ভূকম্প দেখেনি। ভূমিকম্পের ফলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তুরস্ক এবং সিরিয়া। ভেঙে পড়েছে একের পর এক বহুতল। চোখের নিমেষে কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে একাধিক আবাসন। হাইওয়েতে দেখা গিয়েছে চওড়া ফাটল। যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে পড়ে রয়েছে হাইওয়ে। উপরের পিচের রাস্তা সরে গিয়ে কঙ্কালসার চেহারা বেরিয়ে এসেছে। এক মুহূর্তের মধ্যে বহুতল আবাসন ধসে পড়ার ভয় ধরানো ছবি, ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। রীতিমত শিহরণ জাগার মতো দৃশ্য সেসব। তবে সকালের এই কম্পনেই এই ভূমিকম্পের পর্ব শেষ হয়নি। এই ১২ ঘণ্টায় বারে বারে কেঁপে কেঁপে উঠেছে তুরস্ক, সিরিয়া। আর বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। বাড়ছে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণও। ধ্বংসস্তূপের নীচে এখনও অনেকে আটকে পড়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। মৃতের সংখ্যা বাড়ার রয়েছে আশঙ্কা। এখনও চলছে উদ্ধারকাজ। এদিকে উদ্ধারকাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতও। উদ্ধারকাজের জন্য NDRF-এর ১০০ জন সদস্য, প্রশিক্ষিত কুকুর সহ ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
তবে এই প্রথম নয়। এর আগে ১৯৩৯ সালে তুরস্কের পূর্বাঞ্চলীয় শহর এরজিনকানে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছিল। সেই ভূমিকম্পে প্রায় ৩৩ হাজার জন মারা গিয়েছিলেন। এরপর ১৯৯৯ সালে তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমে ফের ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হয়। সেই ভূমিকম্পে প্রায় ১৮ হাজার জন মারা গিয়েছিলেন। সেবার ভূকম্পের তীব্রতা ছিল ৭.৪।