কলকাতা – পশ্চিমবঙ্গে চাকরির পরীক্ষা হবে, অথচ বিতর্ক হবে না – এমনটা হওয়ার নয়। রবিবার দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়েছিল প্রাথমিকে নিয়োগের পরীক্ষা (TET EXAM)। কিন্তু পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে টেটের প্রশ্নপত্রের একাংশ! স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়ে শুরু হয়ে যায় শোরগোল। আর সে নিয়ে শাসকদল এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সভাপতির তরফ থেকে এমন এমন ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে – যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম জানিয়েছেন, একে ‘ফাঁস’ বলা যাবে না। কেন তিনি এই কথা বলছেন, সেই যুক্তিও দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘১২টায় পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ১টা নাগাদ উত্তরপত্রের ওই অংশ দেখা গিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপে। ৮০০-র কাছাকাছি কেন্দ্র। সেখানে মোবাইল চেক করে তার পর পরীক্ষার্থীদের ঢোকানো হয়েছে। যাঁদের সঙ্গে মোবাইল ছিল, আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সমাজমাধ্যমের ওই পোস্ট থেকে কোনও পড়ুয়া উপকৃত হননি। কারণ তাঁরা ১১টায় পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকেছেন।’’
গৌতম পালের অভিযোগ, ইচ্ছাকৃত ভাবে কেউ কেউ নাম খারাপ করার চেষ্টা করছেন। তবে এ বার পরীক্ষার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি তিনি। পরিবর্তে সাংবাদিক বৈঠক করে সচিব পার্থ কর্মকার জানান, এই বিষয়ে তদন্ত হবে। তবে ‘কালিমালিপ্ত’ করার জন্যই এ সব করা হয়েছে।
প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে শাসকদল তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মুখে। কিন্তু পর্ষদের থেকেও এক কদম এগিয়ে গিয়ে তিনি দাবি করেছেন, যদি কিছু ফাঁস হয়ে থাকে সেটা করেছে সিপিএম। কুণাল ঘোষের দাবি, “এগুলো ভয় তৈরি করার জন্য করা হয়। বহু জায়গায় এমন কোনও ব্যক্তি রয়েছেন যারা কেউ সিপিএম বা বিজেপি সমর্থক, তারা এই কাজ করতেই পারেন। প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে বাইরে তা পোস্ট করে দিলেন। অর্ন্তঘাতের জন্য এই কাজ করতেই পারেন। কিন্তু আসল বিষয় হল যে সময় এই ঘটনা ঘটেছে সেই সময় পরীক্ষার্থীরা হলের ভিতরেই ছিলেন। ফলে যারা হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে এই সব চাঞ্চল্যকর, বিস্ফোরক বলে বিশেষণ আদায়ের চেষ্টা করছেন তাঁদের সঙ্গে সাধারণ পরীক্ষার্থীদের কোনও সম্পর্ক নেই।”
তবে সিপিএম-এর দিকে দায় ঠেললেও আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেছেন, “যারা পরীক্ষা নিচ্ছেন বা পরীক্ষা নিয়োগের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এরা পরোক্ষে বা প্রত্যক্ষে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। দুর্নীতিমুক্ত কোনও কিছুই করতে পারে না। এরা ছাত্রদের দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত করে দেয়।”
প্রসঙ্গত, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছে, এ বছর টেটে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ৯ হাজার ৫৪ জন। রবিবার টেট দিয়েছেন ২ লক্ষ ৭২ হাজারের কিছু বেশি। রাজ্যের মোটি ৭৭৩টি কেন্দ্রে হচ্ছে টেট, যার মধ্যে পাঁচটি কলকাতায়। এমনিতে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বিঘ্নেই মিটেছে পরীক্ষা।
১২টা থেকে শুরু হয়েছে পরীক্ষা। তবে কেন্দ্রে অ্যাডমিট কার্ড দেখিয়ে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে হয়েছে ১১টার মধ্যে। সে কারণে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির সামনে সকাল ১০টা থেকে ছিল ভিড়। মোবাইল বা ইলেক্ট্রনিক গেজেট নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ বারণ ছিল। পরীক্ষাকেন্দ্রে আশপাশে ছিল ১৪৪ ধারা।
কিন্তু তারপরেও ফেসবুকে ‘WB TET SLST SET CTET preparation’ নামক একটি পেজ থেকে বেলা একটার সময় একটি প্রশ্ন পত্র আপলোড করা হয়। যদিও, সেই সময় হলের ভিতরে ছিলেন চাকরি প্রার্থীরা। পরবর্তীতে পরীক্ষা দিয়ে বের হতেই জানা যায় মূল প্রশ্ন পত্রের সঙ্গে ভাইরাল হওয়া প্রশ্নপত্রের একাধিক মিল রয়েছে।