Homeনর্থ-ইস্টTripura: ত্রিপুরার রাজনীতি সম্পর্কে যে কথা সবার জানা উচিত

Tripura: ত্রিপুরার রাজনীতি সম্পর্কে যে কথা সবার জানা উচিত

- Advertisement -

এই মুহূর্তে ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোটের জোর প্রচার চলছে। একদিকে বিজেপি যেমন তার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে, অন্য বামপন্থীরা তাঁদের পুরনো মর্যাদা ফিরে পাওয়ার জন্য এক সময়ের বিরোধী কংগ্রেসের সঙ্গেও বাধ্য হয়ে হাত মিলিয়েছে। মাঝ খান থেকে ত্রিপুরার ‘কিং মেকার’ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে মমতা ব্যানার্জীর দল তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে ২০২৩ এর ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে কে শেষ হাসিটা হাসবেন, সেটার জন্য ২ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে সেই অপেক্ষার মাঝে চুপ করে বসে না থেকে নতুন করে চিনে নেওয়া যাক ত্রিপুরাকে। ত্রিপুরা রাজ্যের প্রথম রাজা কে ছিলেন, ত্রিপুরায় কয়টি বিধানসভা আসন রয়েছে, কয়টি ব্লক রয়েছে, ত্রিপুরায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংখ্যাই বা কত – এমনই নানা প্রশ্নের জবাব জানতে চলুন শুরু করা যাক –

ত্রিপুরা বা শ্রীভূমি উত্তরপূর্ব ভারতের একটি রাজ্য। এটি ভারতের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য। এই রাজ্যের রাজধানী আগরতলা। ত্রিপুরার সরকারি ভাষা বাংলা ও ককবরক।

বাংলার সুলতানি আমলে ত্রিপুরা পশ্চিমবঙ্গের একটি করদ রাজ্য ছিল। যা ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনতামূলক মিত্র রাজ্য হিসেবে কাজ করত। ব্রিটিশরা ত্রিপুরাকে ‘হিল তিপ্পেরা’ (Hill Tippera) বলে সম্বোধন করত। ১৯৪৯ সালের ১৫ অক্টোবর ত্রিপুরা স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। সাক্ষরতার হারে ভারতে এখন ত্রিপুরার স্থান ৩ নম্বরে।

ত্রিপুরার প্রথম রাজা কে ছিলেন

মূলত যেটা মনে করা হয় পৌরাণিক কালের মহারাজা ত্রিপুরের নামানুসারেই ত্রিপুরা রাজ্যের নামকরণ। এই ত্রিপুর রাজা ছিলেন যযাতির বংশধর। দ্রুহ্যের ৩৯তম উত্তরপুরুষ।

কিন্তু অন্য একটি ত্রিপুরা নাম করণের পিছনে দেবী ত্রিপুরাসুন্দরীর কথাও বলেন। হিন্দু পুরাণে উল্লিখিত দশমহাবিদ্যার একতম দেবী হলেন ত্রিপুরাসুন্দরী। ত্রিপুরায় দেবী ত্রিপুরাসুন্দরীর মন্দির রয়েছে। সুতরাং অনেকে মনে করে দেবী ত্রিপুরাসুন্দরীর নাম থেকেই ত্রিপুরা রাজ্যের নামকরণ হয়েছে।

তবে আরও একটি মত রয়েছে। আর সেটি হল যেহেতু এই রাজ্যের আদিবাসীদের অন্যতম ভাষা হল ককবরক, এবং এই ভাষায় তৈ মানে হল জল, ও প্রা মানে হল কাছে – সুতরাং জলের কাছে তৈ-প্রা থেকেই বাঙালি উচ্চারণে ত্রিপুরা হয়ে গিয়েছে।

ত্রিপুরার ইতিহাস

মহাভারত এবং পুরাণে ত্রিপুরা শব্দটি পাওয়া গেছে। তারপর চতুর্দশ শতকে রচিত ত্রিপুরার মাণিক্য রাজবংশের কাহিনী ‘রাজমালা’তেও ত্রিপুরার উল্লেখ আছে। আর এই মাণিক্য রাজবংশেরই ১৮৬ জন রাজা ধারাবাহিকভাবে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ত্রিপুরা শাসন করে গিয়েছেন। বাংলার সুলতানি কিংবা ব্রিটিশ আমলে ত্রিপুরা করদ রাজ্য হিসেবে থেকেছে। কিন্তু আগে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা ছিল না। বরং দক্ষিণ ত্রিপুরার উদয়পুরকে সেই সময় রাজ্যের রাজধানীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। পরে অষ্টাদশ শতকে মহারাজা কৃষ্ণ মাণিক্য উদয়পুর থেকে আগরতলায় তাঁর রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।

পূর্ণরাজ্য দিবস ত্রিপুরা

১৯৪৯ সালে  গণমুক্তি আন্দোলনের ফলে ত্রিপুরা প্রথমে অসম রাজ্যের অংশ হিসেবে ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু ১৯৪৭ সালে যেহেতু ভারত বিভাগের কারণে পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশ থেকে প্রচুর বাঙালি শরনার্থীরা ত্রিপুরায় আশ্রয় নেন, ফলে এই রাজ্যটিতে বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এতে অসমের সঙ্গে সমস্যা দেখা দেয়। ১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি ত্রিপুরাকে একটি কেন্দ্র শাসিত রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করে সেই সময়ের কেন্দ্রের জওহরলাল নেহেরুর সরকার। পরে ৩০টি আসন বিশিষ্ট বিধানসভা গঠন করে ১৯৬৭ সালে প্রথম ভোটগ্রহণ করা হয়। এরপর ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ত্রিপুরাকে ভারতের একটি পূর্ণাঙ্গ রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় দিল্লি। আর বিধানসভা আসনের সংখ্যাও বাড়িয়ে ৬০ করে দেওয়া হয়।

ত্রিপুরার সরকার ও রাজনীতি

ত্রিপুরা বিধানসভায় মোট ৬০টি আসন রয়েছে। পাশাপাশি ত্রিপুরা থেকে ২ জন এবং রাজ্যসভায় ১ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের মতো ত্রিপুরাতেও পঞ্চায়েত ব্যবস্থা রয়েছে। ১৯৭২ থেকে ৭৭ সাল পর্যন্ত ত্রিপুরায় স্বাভাবিকভাবেই কংগ্রেস শাসন করেছিল। এরপর পশ্চিমবঙ্গের মতো করেই ত্রিপুরাতেও ১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসে বামফ্রন্ট। কিন্তু ১৯৮৮ সালে কংগ্রেস ত্রিপুরা উপজাতি যুব সমিতির সমর্থনে ফের ত্রিপুরায় ক্ষমতায় ফিরে আসে। যদিও ১৯৯৩ সালে বামপন্থীরা পুনরায় ত্রিপুরার ভোটে জিতে ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় বিজেপির উদয় হয়। ত্রিপুরা বিধানসভার মোট ৬০টি আসনের মধ্যে ৪৪টিতে জয়লাভ করে বিজেপি বিপ্লব দেবকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়। যদিও ২০২২’এর মাঝামাঝি সময়ে বিপ্লব দেবকে সরিয়ে ড. মানিক সাহাকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয় বিজেপি। অন্যদিকে সিপিএম পায় মাত্র ১৬টি আসন। কংগ্রেস ২০১৮ সালের ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে ৫৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। কিন্তু একটি আসনও জিততে পারেনি। সবক‘টি আসনেই কংগ্রেসের জমানত জব্দ হয়েছিল।

ত্রিপুরা মোট কয়টি ব্লক আছে, ত্রিপুরা জেলা কয়টি, ত্রিপুরা মহকুমা কয়টি ও কী কী

প্রশাসনিক স্বার্থে ত্রিপুরাকে মোট ৮টি জেলায় ভাগ করা হয়েছে। এই ৮ জেলায় ত্রিপুরার মোট ২৩টি মহকুমা রয়েছে। এবং ত্রিপুরায় মোট ৫৮টি ব্লক রয়েছে। ত্রিপুরার উল্লেখযোগ্য শহরগুলির মধ্যে হল আগরতলা, বিশালগড়, যোগেন্দ্রনগর, ধর্মনগর, সোনামুড়া, ইন্দ্রনগর, খোয়াই, বেলোনিয়া, কুমার ঘাট, মেলাঘর, শান্তিরবাজার, কমলপুর ও সারুম।

ত্রিপুরায় মুসলিম জনসংখ্যা

ত্রিপুরার মোট জনসংখ্যা হল ৩ কোটি ১৯ লক্ষ, ৯২০৩ জন। এই জনসংখ্যার তিনভাগই বাঙালি। এবং তাঁরা বেশিরভাগই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। সরকারি হিসাব বলছে, ত্রিপুরায় মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৩ শতাংশই হিন্দু। প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ মুসলিম। ত্রিপুরায় সাড়ে ৪ শতাংশের কাছাকাছি খ্রিষ্টান ও সাড়ে ৩ শতাংশের কাছাকাছি বৌদ্ধ মানুষ রয়েছেন।

কিন্তু তথ্য বলছে, ১৯৪১ সালে ত্রিপুরায় হিন্দু ছিল ৭০ শতাংশ, মুসলমান ছিল ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ গত কয়েক দশকে ত্রিপুরায় হিন্দুদের সংখ্যার হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

ত্রিপুরার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি

এই মুহূর্তে ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোটের জোর প্রচার চলছে। কংগ্রেস, বাম, বিজেপি ছাড়াও এবার ত্রিপুরা বিধানসভায় লড়াইয়ে নেমেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল। এছাড়াও ত্রিপুরা বিধানসভায় আদিবাসী পিপলস ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা, টিপরা মোথা পার্টির মতো আঞ্চলিক দলগুলিও প্রতিবারের মতো নির্বাচনী ময়দানে নেমেছে। ১৬ তারিখে ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। ভোটের রেজাল্ট ঘোষণা হবে মার্চ মাসের ২ তারিখে।

ত্রিপুরা বিধানসভা সিট/ত্রিপুরা বিধানসভা আসন সংখ্যা

১। সিমনা ২। মোহন পুর ৩। বামুইটা ৪। বরজলা ৫। খয়েরপুর ৫। আগরতলা ৬। রামনগর ৭। শহর বর্দোয়ালী ৮। বনমালীপুর ৯। মজলিশপুর ১০। মান্দাই বাজার ১১। তকরজলা ১২। প্রতাপগড় ১৩। বদরঘাট ১৪। কমলাসাগর ১৫। বিশালঘাট ১৬। গোলাঘাটি ১৭। সুরজমানিনগর ১৮। চারিলাম ১৯। বক্সনগর ২০। নলচর ২১। সোনামুড়া ২২। ধনপুর ২৩। রামচন্দ্রঘাট ২৪। খোয়াই ২৫। আশারামবাড়ি ২৬। কল্যাণপুর ২৭। তেলিয়ামরা ২৮। কৃষ্ণপুর ২৯। বাগমা ৩০। রাধাকিশোরপুর ৩১। মাতারবাড়ী ৩২। কাকরাবন ৩৩। রাজনগর ৩৪। বেলোনিয়া ৩৫। শান্তিরবাজার ৩৬। হৃষ্যন্মুখ ৩৭। জোলাইবাড়ি ৩৮। মনু ৩৯। সাব্রুম ৪০। আমপিনগর ৪১। অমরপুর ৪২।কারবুক ৪৩। রামিয়া উপত্যকা ৪৪। কমলাপুর ৪৫। সুরমা ৪৬। সুরমা ৪৭। আমবাসা ৪৮। কর্মছাড়া ৪৯। চাওয়ামানু ৫০। পবিয়াছড়া ৫১। ফটিকরোয় ৫২। চণ্ডীপুর ৫৩। কৈলাশহর ৫৪। কদমতলা ৫৫। বাগবাসা ৫৬। ধর্মনগর ৫৭। যুবরাজনগর ৫৮। পানিসাগর ৫৯। পেনচারথাল ও ৬০। কাঞ্চনপুর

ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল/ত্রিপুরার ভোট গণনা

 

ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী তালিকা

ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটে বাম প্রার্থীদের তালিকা

ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা

 

 

 

 

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -