স্পোর্টস ডেক্স – নিউ জিল্যান্ডের কাছে টেস্ট সিরিজে চুনকামের পর চার দিক থেকে সমালোচিত ভারতীয় দল। ছেড়ে কথা বললেন না সচিন তেন্ডুলকর, বীরেন্দ্র সহবাগ, যুবরাজ সিংহের মতো প্রাক্তনেরাও। প্রত্যেকেরই একটা কথা, এ বার ভারতের উচিত আত্মসমালোচনা করা।
জিততে হলে করতে হত ১৪৭ রান। সবে ম্যাচের তৃতীয় দিন। কিন্তু রোহিতদের দেখে মনে হচ্ছিল তাঁরা টি২০ খেলার মেজাজে রয়েছেন। অথচ পিচ আদৌ ব্যাটিংবান্ধব নয়। বল ঘুরছে। তার উপরে সিরিজে ০-২ পিছিয়ে থাকার অস্বস্তিও রয়েছে। এমতাবস্থায় সিরিজ খুইয়েও সম্মান বাঁচাতে দরকার ছিল দেড়শোরও কম টার্গেট পূরণ করা। কিন্তু রোহিত শর্মা সপাটে পুল করতে গেলেন। হেনরির বলটা খুব আহামরি ছিল না। কিন্তু ততটা শর্ট ছিল না, যতটা রোহিত ভেবেছিলেন। ফলে খানিক দেরিতে খেলেও ম্যানেজ করা যায়নি। টপ এজ লেগে শূন্যে উঠে যায় বল। এই উইকেটের পতনেই যেন লেখা ছিল টিম ইন্ডিয়ার ম্যাচ-ভাগ্য।
একই ভাবে সরফরাজ কিংবা অশ্বিনের আউট হওয়া দেখে বোঝাই মুশকিল টেস্ট চলছে। ২৮ রানে চার উইকেট হারানো অবস্থায় ব্যাট করতে নেমেই ফুলটস বলকে সুইপ করে ক্যাচ দিয়ে আউট হলেন সরফরাজ। অশ্বিন গেলেন রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে। মনে রাখতে হবে ৬টা টেস্ট সেঞ্চুরি রয়েছে তাঁর। কাজেই তিনি টেল এন্ডার, একথা বলা অর্থহীন।
রোহিত শর্মাদের জয় নিয়ে কারও মনে সংশয় ছিল না। কিন্তু সিরিজের শুরু থেকেই ভারত পিছিয়ে ছিল। নিউ জিল্যান্ডের স্পিনের বিরুদ্ধে গোটা সিরিজে খেলতে পারেনি ভারত। কার্যত আত্মসমর্পণ করেছে। মিচেল স্যান্টনার, অজাজ পটেলের সামনে অসহায় লেগেছে রোহিত শর্মাদের। তাঁরা তিনটি ম্যাচে ২৮টি উইকেট নিয়েছেন। ভারতের হারের পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
প্রথম টেস্টে আট উইকেটে জেতে নিউ জিল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে ভারতীয় ওপেনারদের জুটি স্থায়ী হয়েছিল মাত্র ৯ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে তা হয়েছিল ৭২ রান। গোটা সিরিজ়ে এটাই ভারতীয় ওপেনারদের বলার মতো জুটি। পুণে টেস্টে আবার রোহিত-যশস্বী জয়সওয়াল ব্যর্থ হন। প্রথম ইনিংসে ১ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৪ রানের জুটি হয়। ভারত হারে ১১৩ রানে। মুম্বই টেস্টে প্রথম ইনিংসে ২৫ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩ রানের জুটি। অর্থাৎ কোনও টেস্টেই শতরানের জুটি হয়নি, যা পরের দিকের ব্যাটারদের চাপ বাড়িয়েছে।
বেঙ্গালুরু টেস্ট শুরুর আগে তিন দিন পিচ ঢাকা ছিল। ম্যাচের আগে টানা বৃষ্টি হয়েছে। স্যাঁতসেতে পরিস্থিতি ছিল। টসে জেতার পরেও রোহিত সবাইকে অবাক করে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। তা ভুল প্রমাণিত হতে সময় নেয়নি। ভারত অল আউট হয় ৪৬ রানে। পাঁচ জন শূন্য করেন। সিরিজ়ের শুরুটাই এত খারাপ ভাবে হলে বাকিটা ভাল যাবে কী করে? নিউ জ়িল্যান্ড সেই যে ছন্দ পেয়ে গিয়েছিল তাতে ভর করেই বাকি সিরিজ়ে ভাল খেলেছে। পরে রোহিতও স্বীকার করেন যে পিচই বুঝতে পারেননি!
দলের দুই সিনিয়র ক্রিকেটার তাঁরাই। অথচ সেই রোহিত এবং বিরাট কোহলি ব্যাট নিউ জ়িল্যান্ড সিরিজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নীরব। বস্তুত, গোটা বছরেই বার বার ব্যর্থ হয়েছেন তারা। নিউ জ়িল্যান্ড সিরিজের মাত্র ৯৩ রান করেছেন কোহলি। গড় মাত্র ১৫.৫০। তাঁর মানের থেকে অনেক কম। এ বছর ছ’টি টেস্টে মোটে ২৫০ রান করেছে ২২.৭২ গড়ে। কোহলির ব্যর্থতা দেখে প্রশ্ন উঠেছে যে এটাই তাঁর শেষের শুরু কি না।