নয়া দিল্লি: কিছুদিন আগে যিনি ছিলেন ‘হিরো’, তাঁকেই এখন বড় ‘ভিলেন’ বলে মনে করছে পাকিস্তানিরা। জাভেদ আখতার (Javed Akhtar)। কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের স্মৃতিতে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি পাকিস্তানিদের (Pakistan) মুখের ওপর সত্যিকথা বলে ফেলেছিলেন। আর সেই সত্যিকথা বলার কারণেই এখন গোটা পাকিস্তান জুড়ে হা হুতাশ চলছে। পাকিস্তানি মিডিয়া যেমন এরজন্য মরাকান্না শুরু করেছে, তেমনই পাকিস্তানের বিশিষ্টরা জাভেদ আখতারকে (Javed Akhtar) আক্রমণ করা শুরু করেছে। কিন্তু পাকিস্তানের সবথেকে যেটা বড় কষ্টের, জাভেদ আখতারকে তারা নিজেরাই আমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাদেরই আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে পাকিস্তানের পোল খুলে দিয়েছেন। আরও মজার কথা হল, জাভেদ আখতারের (Javed Akhtar) সত্যিকথার জ্বালাটা পাকিস্তান তখন বুঝতে পারেনি। কিন্তু যখন জাভেদ আখতারকে ভারতে পাকিস্তানের মুখের ওপর সত্যিকথা বলার জন্য বাহবা দেওয়া হচ্ছে, তখন থেকেই পাকিস্তান বুঝতে পেরেছে – ঠিক কী ঘটনা ঘটেছে।
জাভেদ আখতার ঠিক কী বলেছিলেন
কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের স্মৃতিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে জাভেদ আখতার (Javed Akhtar) ভারত-পাকিস্তানের বন্ধুত্ব নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘বন্ধুত্ব হবে কী করে? আমাদের চোখের সামনে তো মুম্বই হামলা এখনও জ্বলজ্বল করছে। আমি নিজে মুম্বইয়ে থাকি। মুম্বইয়ে ২৬/১১-তে যারা হামলা চালিয়েছিল, তারা তো আর নরওয়ে থেকে আসেনি। এমনকি মিশর থেকেও আসেনি। যারা হামলা চালিয়েছিল তারা আজও পাকিস্তানে (Pakistan) স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সুতরাং এনিয়ে হিন্দুস্তানিদের মনে যদি কোনও অভিযোগ থাকে তাহলে তো সেটা আপনাদের খারাপ লাগার কথা নয়।’’ ব্যস, এই কথাতেই ‘মিরচি’ লেগে গিয়েছে পাকিস্তানিদের।
স্বাগত জানিয়ে এখন সমালোচনা
সমালোচনার মুখে পড়ে গোটা বিষয়টি নিয়ে খুলেছেন পাকিস্তানি শিল্পী আলি জাফর (Ali Zafar)। কেননা, এই আলি জাফরই জাভেদ আখতারকে সেদিন অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাতে ‘এক লড়কি কো দেখা তো…’ গানটি গেয়েছিলেন। এখানেই থেমে না থেকে আলি জাফর সেদিন অনুষ্ঠানে একথাও বলেছিলেন, জাভেদ আখতারের (Javed Akhtar) লেখা এই গান তাঁর ‘প্রিয় লাভ সং’। আর যায় কোথায়! এরপরই জাভেদ আখতারের মন্তব্য ভাইরাল হতেই পাকিস্তানিরা আলি জাফরকে ছিঁড়ে খেতে শুরু করে। সুতরাং আলি জাফর জাভেদ আখতারের সমালোচনা করতে শুরু করেছেন।
জাভেদ আখতারকে নিয়ে কী বলছেন আলি জাফর
ইনস্টাগ্রামে আলি জাফর লিখেছেন, ‘বন্ধুরা, আমি তোমাদের সবাইকে ভালোবাসি এবং প্রকৃতঅর্থে তোমাদের প্রশংসা ও সমালোচনাকে সমানভাবে মূল্য দিই। তবে আমি সবসময় একটি জিনিস অনুরোধ করি – কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে সত্যতা যাচাই করা উচিত। আমি ফয়েজ মেলায় উপস্থিত ছিলাম না, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পরের দিন জানতে পেরেছি সেখানে উনি কী বক্তব্য রেখেছিলেন।’ এরপর ক্যাটরিনা কাইফ অভিনীত ‘মেরে ব্রাদার কি দুলহন’ কো-স্টার লেখেন, ‘আমি একজন গর্বিত পাকিস্তানি (Pakistan) এবং স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তানি হিসাবে নিজের দেশ বা জনগণের বিরুদ্ধে কোনও বিস্ফোরক বক্তব্যকে প্রশংসা করবে না। আমরা সকলেই জানি যে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের কারণে কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং ভুগছে। তাই এই ধরনের সংবেদনশীল এবং অযাচিত মন্তব্য অনেক মানুষের অনুভূতিকে গভীরভাবে আঘাত করতে পারে।’
It was an honour to host him. I have always believed art & music transcends boundaries and is the best way to bring people together. Love is the ONLY way to peace. Thank you @Javedakhtarjadu sahab for gracing us with your presence. Thank you Faiz sahab for keeping us connected. https://t.co/08lnMT2b6o
— Ali Zafar (@AliZafarsays) February 20, 2023
জাভেদ আখতারের কাছে কী চেয়েছিল পাকিস্তান
আসলে, জাভেদ আখতার (Javed Akhtar) ভারতে মোদী সরকারের সমালোচক বলেই পরিচিত। এর আগে মোদী সরকারের রীতি-নীতি নিয়ে জাভেদ আখতারের বেশ কিছু বক্তব্য নিয়ে বিতর্কও হয়েছে। আর সেই কারণেই পাকিস্তানের কাছে জাভেদ আখতার বেশ প্রিয় মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। পাকিস্তানিরা ভেবেছিল জাভেদ আখতার এবারও এমন কিছু বলবেন যা মোদী সরকারকে খে্াঁচা দেবে। আর সেই কারণেই অনুষ্ঠানে এক ব্যক্তি জাভেদ আখতারকে বলেন, ‘আপনি দেশে গিয়ে পাকিস্তান সম্পর্কে কী বলবেন? বলবেন, পাকিস্তানের মানুষ শুধু আমাদের উপর বোমই ফেলে না, ওরা ফুল-মালা দিয়ে আমাদের অভ্যর্থনাও করেন।’ কিন্তু উত্তরে জাভেদ আখতার যা বললেন, তাতে পাকিস্তান খোঁচাতে গিয়ে নিজেই ঘা করে ফেলল।