মঙ্গলবার, নভেম্বর 19, 2024
মঙ্গলবার, নভেম্বর 19, 2024
Homeখবরট্রাম্প জিততেই বাংলাদেশের ইউনুস সরকারে থরহরিকম্প অবস্থা

ট্রাম্প জিততেই বাংলাদেশের ইউনুস সরকারে থরহরিকম্প অবস্থা

- Advertisement -

ঢাকা – বড় আশা ছিল এবারও আমেরিকার ভোটে জয়ী হবে ডেমোক্রেটরা। অর্থাৎ ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। কিন্তু মার্কিন ভোটের ফল বলছে বাংলাদেশের সেই আশায় গুড়ে বালি। কমলা নয়, প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোলান্ড ট্রাম্প। মার্কিন ভোটের এমন ফলাফল প্রকাশ্যে আসতেই বাংলাদেশের ইউনুস সরকারে থরহরিকম্প অবস্থা শুরু হয়ে গেছে।

বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক সাম্প্রতিক টুইটকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বুক ধুকপুক করতে শুরু করেছে। কেননা, ভোট প্রচারের শেষে এসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্প লিখেছিলেন, “আমি বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বর্বর হিংসার তীব্র নিন্দা জানাই। তাদের আক্রমণ করেছে উন্মত্ত জনতা, লুঠপাট করেছে। সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আমি ক্ষমতায় থাকলে এটা ঘটত না। কমলা (কমলা হ্যারিস) এবং জো (জো বাইডেন) সারা বিশ্বের এবং আমেরিকার হিন্দুদের উপেক্ষা করেছে। ইজরায়েল থেকে ইউক্রেন, এমনকি আমাদের দক্ষিণ সীমান্তেও বিপর্যয় নেমে এসেছে। কিন্তু, আমরা আমেরিকাকে আবার শক্তিশালী করব এবং শক্তির মাধ্যমে শান্তি ফিরিয়ে আনব!”

স্পষ্টতই, মার্কিন হিন্দু ভোটারদের আকৃষ্ট করার কৌশল হিসেবেই ট্রাম্প এই টুইট করেছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবি, কিছু ‘লবি গ্রুপ’-এর সম্ভবত প্রভাব খাটিয়ে ট্রাম্পকে দিয়ে এই টুইট করিয়েছে। লবি গ্রুপ বলতে তিনি সম্ভবত আওয়ামি লিগ অথবা ভারত সরকারকে বোঝাতে চেয়েছেন।

আর এতেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই টুইট থেকে তাঁর ভবিষ্যৎ নীতিরও ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। আর সেটা বাংলাদেশের পক্ষে ভাল খবর নয়। গত অগস্ট মাসে, হাসিনার বিদায়ের পরপরই, জো বাইডেনকে ফোন করে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তবে, তাঁকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি বাইডেন প্রশাসন। ট্রাম্পের মতো কোনও জোরালো বিবৃতি দেননি বাইডেন। তবে, ট্রাম্পের টুইট থেকে স্পষ্ট, তাঁর প্রশাসন অন্তত বাইডেনের সময়ের মতো চোখ বন্ধ করে থাকবে না।

বন্ধ হয়ে যাবে সহায়তা?

দেশ পুনর্গঠনের জন্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার। পালা বদলের পর ঢাকায় এসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও উন্নয়নে সহায়তার পাশাপাশি, অতিরিক্ত ২০ কোটি ২০ লক্ষ মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বাইডেনের প্রশাসনের প্রতিনিধিদল। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক সভার সময়ও, মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে দেখা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জো বাইডেন।

কিন্তু প্রশ্ন হল এবার কি হবে? ট্রাম্প দুই দেশের সম্পর্কের বর্তমান কাঠামোকে সমর্থন করবেন বলে, মনে করেন না আমেরিকার ইউলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, মাইকেল কুগেলম্যান। তিনি জানিয়েছেন, প্রেসিটেন্ট ট্রাম্প সম্ভবত বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে খুব একটা আগ্রহী হবেন না। রোহিঙ্গাদের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের যে সহায়তা পায় বাংলাদেশ, তারও সিংহভাগ দেয় আমেরিকাই। ট্রাম্প সেই অর্থেও কাট-ছাঁট করতে পারেন।

ট্রাম্প-মোদীর বন্ধুত্ব – ইউনুস সরকারের ঘুম ওড়াবে?

আমেরিকা যে বিশ্বের সুপারপাওয়ার, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে, ভারতও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের দাদা। ভারতকে বাদ দিয়ে এই অঞ্চলে আমেরিকার পক্ষেও কিছু করা সম্ভব নয়। চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশের যে নির্বাচন হয়েছিল, তার কথাই ধরা যাক। সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রাথমিকভাবে কড়া প্রশ্ন তুলেছিল আমেরিকা। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে হাসিনা সরকারের প্রতি নয়া দিল্লির সমর্থনই বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমেরিকার কণ্ঠ ধীরে ধীরে খাদে নেমে গিয়েছিল।

ভারতের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের নরমে-গরমে সম্পর্ক। তবে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। প্রচার পর্বেও বারবার ট্রাম্প নরেন্দ্র মোদীকে ‘চমৎকার মানুষ’, ‘আমার বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেছেন। এদিকে, ট্রাম্প জয়ী হতেই মোদী হাত হাত মিলিয়ে কাজ করার জন্য বার্তা দিয়েছেন। ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক আরও জোরালো করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

কাজেই, ট্রাম্প প্রশাসনে আমেরিকা-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে ভারত ঢুকে পড়তেই পারে। সেই ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে ইউনুস সরকারের সম্পর্ক স্বাভাবিক নাহলে, বিপদে পড়বে বাংলাদেশ। এক কথায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে বাংলাদেশের পক্ষে আর ভারতকে অবজ্ঞা করা সম্ভব হবে না। ভারত নির্ভরতা আরও বাড়বে।

মুসড়ে পড়েছেন ইউনুসের বন্ধুরা

বাংলাদেশের ইউনুস সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়কে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি যাই দাবি করুন না কেন, অতীত বলছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে ডেমোক্র্যাট নেতাদের অত্যন্ত ভালে সম্পর্ক। প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০০৯ সালে তাঁকে আমেরিকার সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান দিয়েছিলেন।

উল্টোদিকে, ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর, তিনি খোলামেলা ট্রাম্পের সমালোচনা করেছিলেন। সেই সময়, ফ্রান্সের এইচইসি প্যারিস নামে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন ইউনুস। তিনি বলেছিলেন, তাঁদের দুজনের রাজনৈতিক মতাদর্শ একেবারে আলাদা। আমেরিকায় ট্রাম্পের জয়কে তিনি ‘সূর্যগ্রহণ’ এবং ‘অন্ধকার সময়’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হয়েই, আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্ত উঁচু পাঁচিলে ঘিরতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই বিষয়ে এক মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে ইউনুস বলেছিলেন, ‘দেওয়াল’ তৈরি না করে ট্রাম্পের উচিত উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ‘সেতু’ নির্মাণ করা।

কাজেই, ট্রাম্প জয়ী হতেই বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনুস প্রশাসন। পরিস্থিতি এমন যে অনেকেই না কি বি প্ল্যানের ওপর ভাবনা শুরু করে দিয়েছেন।

আরও খবর
- Advertisment -

সবাই যা পড়ছেন

পছন্দের খবর