তিরুবনন্তপুরম – স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হন আর স্বামী থাকেন সন্তানের অপেক্ষায়। কিন্তু কেরলের রূপান্তরকামী যুগল জাহাদ পাভাল ও জিয়া পাভাল সেই চিরাচরিত প্রথাকেই একেবারে উলটে দিয়েছেন। স্ত্রী নয়, বরং স্বামীই হয়েছেন অন্তঃসত্ত্বা। জাহাদ এখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আর এখন এই দম্পতি তাঁদের প্রথম সন্তানের জন্য অপেক্ষা করছেন। ভারতে এমন ঘটনা এই প্রথম। স্বাভাবিকভাবেই এমন ঘটনায় চারিদিকে হৈহৈ কান্ড পড়ে গেছে।
ব্যাপারটা আসলে হল, ২৩ বছর বয়সি জাহাদ আসলে একজন রূপান্তরিত পুরুষ। আর তাঁর স্ত্রী ২১ বছর বয়সি জিয়া হলেন একজন রূপান্তরিত মহিলা। তিন বছর ধরে প্রেমের সম্পর্কে রয়েছেন জাহাদ-জিয়া। দেখা হওয়ার পরেও তাঁরা হরমোন থেরাপির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে তাঁদের মনে অভিভাবক হওয়ার ইচ্ছে জাগে। তাই কিছু দিনের জন্য তাঁরা তাঁদের হরমোন থেরাপি বন্ধ রেখেছিলেন। শিশুর জন্মের পর আবার তাঁরা হরমোন থেরাপি শুরু করবেন।
তো সেই জিয়া নিজেই ইনস্টাগ্রামে স্বামীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কথা জানিয়েছেন। ইনস্টাগ্রামে জিয়া লিখেছেন, ‘‘আমার মা হওয়ার স্বপ্ন ও জাহাদের বাবা হওয়ার স্বপ্ন অবশেষে সত্যি হতে চলেছে।’’ পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জিয়া বলেছেন, ‘‘বেশির ভাগ রূপান্তরকামীদেরই সমাজ বয়কট করে। অনেকের ক্ষেত্রে পরিবারের লোকজনও পাশে থাকেন না। আমরা প্রথম থেকেই একটি সন্তান চেয়েছিলাম, যাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে পারি। আমাদের পরেও যাতে আমাদের অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে থাকে। অনেক রূপান্তরকামীরা আমাদের মতোই বা-মা হতে চান। তবে সমাজের চোখরাঙানির ভয়, তাঁরা সেই সিদ্ধান্তটি নিয়ে উঠতে পারেন না। রূপান্তরকামীরাও সাধারণ নিয়মেই অভিভাবক হতে পারেন। সেই উদাহরণই সকলের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছি আমরা। প্রথম দত্তক নেওয়ার দিদ্ধান্ত নিলেও আইনি পথে নানা বাধা আসে। তার পরেই স্থির করি, সমাজের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে নিজেরাই বাবা-মা হব।’’
অভিভাবক হতে পেরে জাহাদ-জিয়া দু’জনেই বেজায় খুশি। আর পাঁচ জন সাধারণ অভিভাবকদের মতো তাঁরাও উপভোগ করছেন জীবনের এই নতুন পর্যায়। অন্তঃসত্ত্বাকালীন ফটোশুটও করিয়েছেন তাঁরা। জিয়া ইনস্টাগ্রামে ভাগ করে নিয়েছেন সেই সব ছবি। ছবিগুলি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হতেই ব্যাপক চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে নানা মহলে। খালি গায়ে স্ফীত উদরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রয়েছেন জাহাদ। চোখেমুখে খুশির জেল্লা! শাড়ি পরে দক্ষিণী সাজে তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন জিয়া।